Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

কোরবানির পশুর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা

Icon

তুফান মাজহার খান

প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০১৮, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কোরবানির পশুর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা

ঈদুল আজহার দিন পশু কোরবানির পরপরই আমাদের প্রধান চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায় বর্জ্য অপসারণ। এ বিষয়ে আমাদের সামান্য অসচেতনতা বা অজ্ঞতার কারণে দেখা দিতে পারে পরিবেশগত নানা সমস্যা।

কোরবানির পশুর বর্জ্য যেখানে-সেখানে ফেলার দরুন তা পচে চারদিকে দুর্গন্ধ ছড়ায়, পরিবেশ দূষিত করে। শুধু তাই নয়, নালা বা নর্দমায় ফেলা বর্জ্য থেকে ছড়ায় নানা ধরনের রোগের জীবাণু। অতিরিক্ত বর্জ্যরে চাপে নর্দমা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে। অল্প বৃষ্টিতেই নর্দমার পানি আটকে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। তখন সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভা এসব বর্জ্য অপসারণ করতেও হিমশিম খায়।

অনেক সময় আমরা কোরবানির পশুর দেহের ভক্ষণ অযোগ্য অংশবিশেষও যেখানে-সেখানে ফেলে রাখি। নগর কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর না হলে সেসব অংশ পচে উৎকট দুর্গন্ধ ছড়ায়। নগর কর্তৃপক্ষ অবশ্য প্রতি কোরবানির ঈদের আগে বর্জ্য অপসারণ সম্পর্কে নির্দেশনা দেয়, জনসচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা চালায়।

তাছাড়া সংবাদপত্র, টেলিভিশনসহ প্রায় সব গণমাধ্যমেই কমবেশি প্রচারণা চালানো হয়। দুঃখজনক হলেও সত্য, আমরা সেসব বিষয় ততটা আমলে নিই না। এতে আমরাই সম্মুখীন হই নানা সমস্যার। তবে যদি কোরবানির বর্জ্যকে সঠিক ব্যবস্থাপনায় আনা যায়, তাহলে পরিবেশ থাকবে দূষণমুক্ত, জনস্বাস্থ্যও থাকবে নিরাপদ।

বর্জ্য অপসারণ করার একটি উপায় হল কোরবানির আগেই বাড়ির পাশে কোনো মাঠে কিংবা পরিত্যক্ত জায়গায় একটা গর্ত খুঁড়ে রাখা। কোরবানির পর পশুর বর্জ্য সেখানে ফেলে মাটিচাপা দেয়া। তবে শহরাঞ্চলে গর্ত খোঁড়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে পানি ও গ্যাসের পাইপ, বিদ্যুৎ ও টেলিফোনের তার ইত্যাদি কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তরে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করার একটি উপায় হল গ্রামাঞ্চলে অনেকের পশু একত্রে কোরবানি করা এবং পশুর বর্জ্য মাটির নিচে পুঁতে রাখা, যা পরবর্তী বছর কোরবানির আগেই জৈব সার হিসেবে শস্যক্ষেত্রে ব্যবহারের উপযোগী হয়ে যায়। কোরবানির সব কার্যক্রম শেষে রক্তমাখা রাস্তাঘাট ধুয়ে পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।

জীবাণু যেন ছড়াতে না পারে সেজন্য নোংরা জায়গা পরিষ্কারের সময় ব্লিচিং পাউডার বা জীবাণুনাশক ব্যবহার করতে হবে। সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সুফল এবং অব্যবস্থাপনার কুফল সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরি করা প্রয়োজন।

তবে যেসব এলাকায় গর্ত খোঁড়ার উপযুক্ত জায়গা নেই সেসব এলাকার বর্জ্য প্রচলিত উপায়ে অপসারণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এতে করে সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভার দায়িত্বভার কিছুটা হলেও কমবে। পাশাপাশি বর্জ্যগুলো নষ্ট না হয়ে কাজেও লাগবে।

যারা শহরে থাকেন তাদের বিচ্ছিন্ন স্থানে কোরবানি না দিয়ে কয়েকজন মিলে এক স্থানে কোরবানি দেয়া ভালো। এতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের কাজ করতে সুবিধা হয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে, কোরবানির জায়গাটি যেন খোলামেলা হয়।

আর জায়গাটি রাস্তার কাছাকাছি হলে বর্জ্য অপসারণের গাড়ি পৌঁছানো সহজ হবে। কুকুর বা বিড়াল যেন বর্জ্য নিয়ে আশপাশে ফেলতে না পারে সেদিকেও সবার খেয়াল রাখা উচিত। যেসব এলাকায় সিটি কর্পোরেশনের গাড়ি পৌঁছানো সম্ভব নয়, সেসব স্থানের বর্জ্য ব্যাগ বা বস্তায় ভরে ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট স্থানে রাখা উচিত।

একটু সচেতনতা আর সঠিক পরিকল্পনাই আমাদের এ সমস্যার সমাধান দিতে পারে। কোরবানি আমরাই করি, ভালো থাকতে হবে আমাদেরই। তাই পরিচ্ছন্নতার দায়িত্বটাও আমাদের।

তুফান মাজহার খান : প্রাবন্ধিক, ডেমরা, ঢাকা

 

তুফান মাজহার খান কোরবানির পশুর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম