পুলিশের কার্যক্রম
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা জরুরি
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দেশে পুলিশের কার্যক্রম এখনো পূর্ণ উদ্যমে শুরু হয়নি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন থামাতে নির্বিচারে গুলি করে ছাত্র-জনতাকে হত্যার পর তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়ে পুলিশ। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর লন্ডভন্ড হয়ে যায় পুলিশের ‘চেইন অব কমান্ড’। পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ের অনেকে আত্মগোপনে চলে যায়। মঙ্গলবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর পুলিশের শীর্ষ থেকে মাঠ পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোয় রদবদলের পরও এখনো পুরো উদ্যম ফিরে পায়নি বাহিনীটি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসেনি। প্রায় প্রকাশ্যে ছিনতাই, ডাকাতি ও হত্যার ঘটনা ঘটছে। এমন পরিস্থিতিতে পুলিশ ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য নানা উদ্যোগ হাতে নিয়েছে; যদিও অভ্যন্তরীণ দাবিদাওয়া ও পদোন্নতি-পদায়ন নিয়ে পুলিশের ভেতরে এখনো অস্থিরতা রয়েছে।
এটা ঠিক, ছিনতাই, চাঁদাবাজি এবং সন্ত্রাসী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান শুরুর মাধ্যমে পুলিশের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টা লক্ষণীয়। রাজধানীসহ সারা দেশে চলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযান। উদ্ধার করা হচ্ছে পুলিশের লুণ্ঠিত অস্ত্র। জানা যায়, জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের ওপরও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। গঠন করা হয়েছে সিভিলিয়ান প্ল্যাটফরম। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম স্বাভাবিক করার পাশাপাশি যানজট নিরসনের প্রচেষ্টাও চলছে। পুলিশের সংস্কারের জন্য সরকার গঠিত কমিশন এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে। পাশাপাশি পুলিশ সদর দপ্তরের পক্ষ থেকে একটি সংস্কার কমিটিও গঠন করা হয়েছে। সংস্কারের অংশ হিসাবেই এসব উদ্যোগ পুলিশের কার্যক্রমকে যে আরও বেগবান করছে, সন্দেহ নেই। মনে রাখতে হবে, দেশের অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের সক্রিয় হওয়ার বিকল্প নেই। এ কাজে সেনাবাহিনী, বিডিআর, আনসার বাহিনী সহায়ক ভূমিকা পালন করলেও মূল দায়িত্ব পুলিশের ওপরই বর্তায়।
উল্লেখ্য, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছিনতাই, ডাকাতি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাওয়ায় জনমনে উদ্বেগ, নিরাপত্তা ও অস্থিরতা দেখা দেয়। বিশেষ করে রাজধানীর কিছু এলাকার অলিগলিতে ছিনতাইকারীদের দাপট এমনই যে, রাতে তো বটেই, দিনের আলোয়ও প্রকাশ্যে অপকর্মে জড়াচ্ছে তারা। অস্ত্রের মুখে পথচারীর লুটে নেওয়া হচ্ছে সর্বস্ব। যৌথ বাহিনীর সাম্প্রতিক অভিযানের কারণে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে, তবে তা বেগবান ও চলমান রাখতে পুলিশকে পুরোপুরি কার্যকর করা জরুরি। প্রয়োজনে পুলিশকে সব ধরনের প্রভাবমুক্ত রাখতে অপারেশনালি অটোনমাস (স্বায়ত্তশাসিত) পন্থায় কাজের সুযোগও দেওয়া যেতে পারে।
বস্তুত পুলিশের মনোবল বৃদ্ধির মাধ্যমে সততার সঙ্গে সক্রিয় ভূমিকা পালনই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। এর ব্যত্যয় ঘটলে এ বাহিনীর শুধু ভাবমূর্তিই ক্ষুণ্ন হবে না, কার্যকর ভূমিকা পালনও তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। কাজেই বাহিনীর ভেতরে অথবা বাইরের কেউ যেন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির অপচেষ্টা করতে না পারে, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সচেতন ও সজাগ থাকা দরকার। এজন্য সরকার ও পুলিশের উচ্চপর্যায়ের যেমন কৌশলী ভূমিকা প্রয়োজন, তেমনই মাঠ পর্যায়েও পর্যবেক্ষণ ও পরিস্থিতি অনুযায়ী দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। অতীতের সব কালো দিক মুছে ফেলে, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে, সর্বোচ্চ পেশাদারির পরিচয় দিয়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশবাহিনী কার্যকর ভূমিকা পালন করবে, এটাই প্রত্যাশা।
