অনিয়মের জালে বেনাপোল বন্দর : দুর্নীতি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ কাম্য
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১০ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
যশোরের বেনাপোল কাস্টমসে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দুর্নীতি, অনিয়ম ও ঘুস বাণিজ্যের সুযোগ নিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। বুধবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-দুর্নীতি-অনিয়মের ফলে এ কাস্টমসের স্বাভাবিক কাজকর্ম স্থবির হয়ে পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে, গত বছরের সেপ্টেম্বরে নতুন কাস্টমস কমিশনার যোগদানের পর থেকে ঘুস বাণিজ্য ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে পিওন-সবাই ঘুস বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েছেন। চলছে শুল্ক ফাঁকির মহোৎসব। সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয়। এমন অভিযোগও আছে, মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে কোনো পরীক্ষা (টেস্ট) ছাড়াই পরীক্ষণযোগ্য পণ্য খালাস করে নেন অসাধু আমদানিকারকরা।
উল্লেখ্য, বর্তমানে যে কয়টি স্থলবন্দর সচল রয়েছে, তার মধ্যে বেনাপোল স্থলবন্দরের গুরুত্ব সব সময়ই বেশি। সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি ও যাত্রী যাতায়াত হয়ে থাকে যেসব বন্দরে, তার মধ্যে যশোর জেলায় অবস্থিত বেনাপোল স্থলবন্দর অন্যতম। পরিতাপের বিষয়, এ বন্দর দিয়ে ভারত থেকে পণ্য আমদানি করতে পদে পদে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। কাস্টমস কর্মকর্তাদের চাহিদামতো ঘুসের টাকা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। এছাড়া বেনাপোল বন্দর প্রথম শ্রেণির কেপিআইভুক্ত প্রতিষ্ঠান হলেও এর নিরাপত্তাব্যবস্থা আজও সন্তোষজনক নয়। এক্ষেত্রে কেপিআই নীতিমালা মানা হচ্ছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা দরকার। জোরদার করতে হবে দেশের অন্যান্য স্থলবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থাও। অনিয়ম-দুর্নীতি, ঘুস বাণিজ্যের মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি, স্থলবন্দর ব্যবহার করে চোরাচালানসহ নিষিদ্ধ মালামাল বহন যাতে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়, সেজন্য অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে মনে করি আমরা।
শুধু বেনাপোলই নয়, দেশের সব স্থলবন্দরে রাজস্ব ফাঁকি ও চোরাচালান প্রতিরোধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না, স্থলবন্দর দিয়ে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় করে থাকে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনিয়মের কারণে সরকার এ অর্থ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আবার চোরাচালানের সঙ্গে হুন্ডির সম্পৃক্ততা রয়েছে। চোরাচালান প্রতিরোধে কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়া না গেলে তা দেশের অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। দেশের স্থলবন্দরগুলোর ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত ত্রুটি দূর করার পাশাপাশি ঘুস-দুর্নীতি, হুন্ডি ও চোরাচালান বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বেনাপোলসহ স্থলবন্দরগুলোয় দুর্নীতি-অনিয়মে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যারা জড়িত, তাদের সবাইকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা দরকার। সরকার এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এটাই প্রত্যাশা।
