Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

সুস্থ থাকার শর্তগুলো

Icon

সায়মা আক্তার চার্লি

প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সুস্থ থাকার শর্তগুলো

প্রতীকী ছবি

কথায় বলে ‘স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল’। শরীরের সঙ্গে মনের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য; শরীর ভালো না থাকলে মন-মেজাজ ঠিক থাকে না, কাজকর্মে উৎসাহ আসে না। একটি দেশের জনগণই সেই দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ। জনগণই যদি দুর্বল স্বাস্থ্যের অধিকারী হয় অর্থাৎ রোগব্যাধিতে আক্রান্ত থাকে, তাহলে সেই সম্পদ দিয়ে কতটুকুই বা দেশের উন্নতি সম্ভব। জনগণকে জনশক্তিতে রূপান্তরিত করতে হলে সবার আগে তাদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হবে। মানুষের মৌলিক চাহিদার অন্যতম চিকিৎসা। তাই সবার জন্য চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা না গেলে সুস্বাস্থ্য আশা করা যায় না।

তবে স্বাস্থ্য শুধু চিকিৎসার ওপর নির্ভর করে না। বর্তমানে ফরমালিন ও কীটনাশকযুক্ত খাবারে বাজার সয়লাব। এসব ভেজাল খাদ্য খেয়ে মানুষ কিভাবে সঠিক খাদ্যাভাস বজায় রাখবে? শারীরিক সুস্থতা ও রোগমুক্ত থাকার জন্য নিয়মিত ব্যায়ামের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু শহরে নিরাপদে হাঁটার জন্য পর্যাপ্ত পার্ক বা খোলা মাঠ কি আছে? শিশুদের শারীরিক বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। কিন্তু নগরায়ণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমরা যে হারে তাদের খেলার মাঠ ধ্বংস করছি তাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে কিভাবে সুস্বাস্থ্য আশা করতে পারি?

এবার আসি বিশ্রামের কথায়। মানুষকে সুস্থ ও কর্মক্ষম থাকতে হলে তার পর্যাপ্ত বিশ্রামের প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে তাল মেলাতে নাভিশ্বাস উঠছে সাধারণ মানুষের। জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বাড়াতে হচ্ছে আয়ের পরিমাণও। ফলে মানুষ এখন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে, কমে আসছে তার বিশ্রামের সময়কাল। অজ্ঞতা, অবহেলা আর অনিয়মের ফলে ধীরে ধীরে বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতা আমাদের গ্রাস করছে। কিন্তু মানুষ যতই স্বাস্থ্য সচেতন হোক, প্রতিদিনের কর্মব্যস্ততার জন্য তাকে তো বাইরে যেতেই হবে। তীব্র যানজট, শব্দদূষণ, ধুলাবালি, কল-কারখানার বিষাক্ত ধোঁয়া তাকে প্রতিনিয়ত অসুস্থতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

দেশের চিকিৎসার মান নিয়ে সবাই কমবেশি শঙ্কিত। পার্শ্ববর্তী দেশে গিয়ে চিকিৎসাসেবা নিতে মানুষ বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। এরও যথেষ্ট কারণ আছে, যেমন- যদি কেউ ক্যান্সার সার্জন বা অনকোলজিতে সার্জন হতে চান তাকে জেনারেল সার্জারিতে পোস্ট গ্রাজুয়েশন করে তারপর ক্যান্সার সার্জারিতে সুপার স্পেশালাইজেশন করতে হয়। দেশে সুপার স্পেশালাইজেশনের ক্ষেত্রে এ ব্যবস্থা নেই। মেডিসিনে স্পেশালাইজেশন না করেও যে কেউ বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ হয়ে যেতে পারেন। এর ফলে সুপার স্পেশালাইজেশনের সুফল বাংলাদেশের রোগীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পায় না। অন্য কোনো দেশে এভাবে সুপার স্পেশালাইজেশন ডিগ্রি নেয়া যায় না। উন্নত দেশগুলোতে সবার স্বাস্থ্যবীমার ব্যবস্থা আছে। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার সুযোগ থাকায় আগাম রোগ শনাক্তের মাধ্যমে বড় ধরনের রোগাক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেকাংশেই কমে যায়। কিন্তু বাংলাদেশে এ ধরনের সুযোগ না থাকায় রোগ না হওয়া পর্যন্ত কেউ ডাক্তারের কাছে যেতে চায় না। কারণ রোগ হওয়ার আগেই স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য টাকা খরচ করাকে আমরা এখনও অপচয় মনে করি। আবার অনেকের সেই ব্যয় বহন করার সামর্থ্যও নেই, পাশাপাশি ডাক্তার বা হাসপাতালের অসততা তো আছেই। এদেশে গর্ভবতী মা গর্ভধারণের আগে কোনো প্রস্তুতির সুযোগই পান না। যদিও গর্ভধারণের ক্ষেত্রে পূর্বপ্রস্তুতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফলে শিশু ও গর্ভবতী মায়েদের মৃত্যুহার এখনও অনেক বেশি। সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় অনেক যন্ত্রপাতিই নেই, যা আছে তাও চালানোর মতো দক্ষ টেকনোলজিস্ট নেই। আর জনসংখ্যা অনুপাতে জনপ্রতি ডাক্তারের সংকট তো আছেই। তাই চিকিৎসাসেবার মান বাড়ানোর জন্য সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে শুধু চিকিৎসাসেবার মান উন্নতি করেই জনগণের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা সম্ভব নয়, জনস্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত অন্য বিষয়গুলোর দিকেও সরকারকে সুদৃষ্টি দিতে হবে।

সায়মা আক্তার চার্লি : জনস্বাস্থ্যে উচ্চশিক্ষায় অধ্যয়নরত

 

সুস্থ্য

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম