পাচারের অর্থ ফেরানোর উদ্যোগ
কার্যকর পদক্ষেপে সাফল্য আসুক
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
প্রতীকী ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবারসহ ১১টি শিল্প গ্রুপের পাচারকৃত বিপুল পরিমাণ অর্থ এবং পাচারের টাকায় বিদেশে গড়ে তোলা বিপুল পরিমাণ সম্পদের হদিস মিলেছে। শনিবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পরিবার ছাড়াও পাচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিল্প গ্রুপগুলোর মধ্যে রয়েছে-সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর আরামিট গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, সিকদার গ্রুপ, নাসা গ্রুপ, ওরিয়ন গ্রুপ, জেমকন গ্রুপ, নাবিল গ্রুপ, সামিট গ্রুপ ইত্যাদি। এসব গ্রুপের মাধ্যমে পাচার করা অর্থের একটি অংশের সুবিধাভোগী সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যরা।
জানা গেছে, পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারে কাজ করা আন্তর্জাতিক চারটি প্রভাবশালী সংস্থা দ্য স্টোলেন অ্যাসেট রিকভারি, ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্টি করাপশন কোঅর্ডিনেশন সেন্টার, যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস এবং ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর অ্যাসেট রিকভারি তথ্য উদ্ধারে বড় সাফল্য পেয়েছে। এখন পাচারের অর্থ দেশে ফেরত আনার আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। অর্থ উদ্ধারে সম্পৃক্ত বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে নগদ কোনো অর্থ দেওয়া হবে না। উদ্ধার করা অর্থ থেকে কমিশন দেওয়া হবে।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, তদন্তাধীন আলোচ্য ১১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১০টির বিষয়ে বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ) আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহায়তা নিয়ে তদন্ত করে প্রাথমিক প্রতিবেদন তৈরি করেছে। তবে সামিট গ্রুপের বিষয়ে এখনো তদন্ত চলছে। বাকিগুলোর ব্যক্তি ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে দেশি-বিদেশি ব্যাংকে থাকা অর্থ, বিদেশে বিনিয়োগ ও সম্পদের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। আরও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। জানা গেছে, যেসব ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে, চূড়ান্ত পর্যায়ে সেসব অবৈধ সম্পদ আদালতের মাধ্যমে রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হবে। এ প্রক্রিয়ায় দেওয়া আদালতের আদেশ সংশ্লিষ্ট দেশেও পাঠানো হবে। ওই দেশে অবৈধ সম্পদের মালিক মামলা করলে তা মোকাবিলা করে রায় সরকারের পক্ষে আনার পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আর মামলা না হলে সম্পদ ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হবে।
পাচার করা অর্থ উদ্ধারে সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তাতে সাফল্য আসবে বলেই বিশ্বাস আমাদের। যেহেতু বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনা সময়সাপেক্ষ, তাই ধৈর্য ধারণের বিকল্প নেই। তবে দেশে অসাধুদের যেসব অবৈধ সম্পদের হদিস মিলেছে, সেগুলোর বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ প্রয়োজন। মূলত ক্ষমতার অপব্যবহার করে তারা দেশে দুর্নীতির মাধ্যমে এসব অর্থ-সম্পদের পাহাড় গড়েছিলেন। কাজেই শুধু পাচার করা অর্থ উদ্ধারই নয়, অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে দুর্নীতি বন্ধেও নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ। দেশের ভেতরে দুর্নীতি প্রতিরোধের কাঠামো শক্তিশালী করা গেলে সম্পদ পাচার এমনিতেই কমে যাবে।
একইসঙ্গে অর্থ পাচারকারীদের যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করে থাকে, তাদেরও দ্রুত আইনের আওতায় আনা দরকার। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যত ক্ষমতাশালীই হোক না কেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে তাকেও আইনের আওতায় আনতে হবে। যেসব প্রক্রিয়ায় অর্থ পাচার হয়ে থাকে, সেগুলো চিহ্নিত করে তার ফাঁকফোকরও বন্ধ করা প্রয়োজন। সব ধরনের আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে শতভাগ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। সরকার অবৈধ সম্পদ ও পাচার করা অর্থ ফেরাতে সফল হবে, এটাই প্রত্যাশা।
