দারিদ্র্য মোকাবিলার চ্যালেঞ্জ
কার্যকর পদক্ষেপেই আসবে সাফল্য
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বিগত সরকার পতনের পর দেশে দারিদ্র্য ও অতিদারিদ্র্য বৃদ্ধির হারের লাগাম টানতে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে সরকারের সামনে তিনটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এগুলো হলো, দ্রুত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ব্যাপ্তি ও ভাতার পরিমাণ বাড়ানো।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে যারা দারিদ্র্যসীমার উপরে অবস্থান করেন, তাদের ভিত্তি অত্যন্ত দুর্বল। ফলে একটু আঘাতে দারিদ্র্যহার বাড়বে। বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেটে বলা হয়েছে, বিগত সরকারের আমলে ব্যাপক লুটপাটের কারণে আর্থিক খাত ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। ফলে যাদের দৈনিক আয় ২ ডলার ১৫ সেন্টের নিচে, দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে এ হার প্রায় দ্বিগুণ হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব না হলে শুধু দারিদ্র্যই নয়, বাড়তে পারে বৈষম্যও। তবে শক্তিশালী অর্থনৈতিক ও রাজস্ব সংস্কার এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। এক্ষেত্রে সরকারের এখনই করণীয় হলো, আগামী অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বরাদ্দ বাড়ানো, যদিও সেটি স্থায়ী সমাধান নয়। দীর্ঘমেয়াদি সমাধান করতে হলে ভালো কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। সেই সঙ্গে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। পাশাপাশি সরকারের চলমান বিভিন্ন শিক্ষাবৃত্তি, উপবৃত্তি, মা ও শিশুদের পুষ্টির জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি, গ্রামীণ কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রকল্পগুলো চালু রাখতে হবে। এগুলোকে সঠিক ব্যবস্থাপনার আওতায় আনতে হবে। বিশেষত সরকারের উচিত এ মুহূর্তে তিন বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া-বিনিয়োগ বাড়ানো, কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির কার্যকর বাস্তবায়ন।
আমরা মনে করি, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল শান্তি পুরস্কারপ্রাপ্ত ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জন্য এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা কঠিন হবে না। ২০১৭ সালে প্রকাশিত তার সাড়া জাগানো বই ‘এ ওয়ার্ল্ড অব থ্রি জিরোস’-এ তিনি পৃথিবীর তিনটি বড় চ্যালেঞ্জের সমাধানের জন্য একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছিলেন।
বইটিতে তার আলোচনার বিষয়বস্তু তিনটি বিষয়কে কেন্দ্র করে : শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব এবং শূন্য নিট কার্বন নির্গমন। শূন্য দারিদ্র্যের আলোচনায় তিনি দেখিয়েছেন, দারিদ্র্য কোনো স্বাভাবিক বা প্রাকৃতিক অবস্থা নয়, বরং এটি একটি মানবসৃষ্ট অবস্থা, যা সম্পদের অসম বণ্টনের ফলস্বরূপ তৈরি হয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা, বিশ্বব্যাপী তার যে মডেল অনুসরণ হয়ে থাকে, তিনি এদেশেও তার সফল বাস্তবায়ন ঘটিয়ে নজির স্থাপন করবেন। আমাদের কর্তব্য তার ওপর পূর্ণ আস্থা রেখে তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা।
লক্ষণীয়, তার নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এছাড়া বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রচেষ্টা হিসাবে প্রধান উপদেষ্টা বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানসহ নানা সংস্থার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিতও করছেন।
সম্প্রতি দেশে বিনিয়োগ সম্মেলনও হয়েছে। এসব প্রচেষ্টার মাধ্যমে দেশে বিনিয়োগ এলে স্বাভাবিকভাবেই কর্মসংস্থান বাড়বে। ফলে দারিদ্র্যও কমবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ আর্থিক খাতে সংস্কারের সফল বাস্তবায়ন, বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও ব্যবসার পরিবেশ স্থিতিশীল করা, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির মতো পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে সরকার উপরোক্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সফল হবে, এটাই প্রত্যাশা।
