ঋণ অবলোপন বাড়ছে
খেলাপি ঋণ আদায়ে কর্তৃপক্ষকে কঠোর হতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ব্যাংক খাতে বাড়ছে ঋণ অবলোপন। এখন পর্যন্ত এ অঙ্ক ৮১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশের ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে ৫৪টি ব্যাংক গত ২১ বছরে এ ঋণ অবলোপন করে। এর মধ্যে শীর্ষ ১০ ব্যাংকই অর্ধেকের বেশি খেলাপি ঋণ অবলোপন করেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ অবলোপন বেড়েছে ৯ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গাইডলাইনে বলা হয়েছে, দুবছর ধরে খেলাপি ও লোকসানে থাকা ঋণ ব্যাংকগুলোর ব্যালেন্স শিট থেকে অবলোপনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আগে এ সময়সীমা ছিল তিন বছর। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ ব্যাংক আগের সময়সীমা পাঁচ বছর থেকে কমিয়ে তিন বছর করে। নতুন নীতিমালায় বলা হয়, পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত খেলাপি ঋণ অবলোপনের জন্য অর্থঋণ আদালতে মামলা করতে হবে না। আগে এর পরিমাণ ছিল দুই লাখ টাকা। এ ছাড়া ব্যাংকগুলো মামলা না করেই মৃত ব্যক্তির নামে থাকা খেলাপি ঋণ অবলোপন করতে পারবে। যা আগে ছিল না। ঋণ অবলোপনের মাধ্যমে খেলাপি ঋণের অঙ্কটি তুলনামূলক কম দেখালেও এতে আমানতকারী ও ঋণের ভালো গ্রাহক উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নীতিমালা শিথিল করার কারণে খেলাপি ঋণ অবলোপন বেড়েছে। ব্যাংকগুলো খেলাপি কমাতে এখন আগের চেয়ে ঋণ অবলোপনে ঝুঁকছে বেশি। কারণ দেশের ব্যাংক খাতে অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে খেলাপি ঋণ। ঋণ অবলোপনের যত পূর্বশর্তই থাকুক না কেন, লক্ষ করা যায়, অবলোপনের পর ব্যাংকের ঋণ আদায়কারীদের দৃষ্টি অবলোপনকৃত ঋণ থেকে কিছুটা দূরে সরে যায়। ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার নির্ণয়ে অবলোপন করা ঋণ হিসাবে ধরা হয় না বলে খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র অস্পষ্ট থেকেই যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ঋণ অবলোপন মানেই ধরে নেওয়া হয় ওই টাকা আর আদায় হবে না। এসব মন্দ ঋণের কথা আর কেউ হয়তো মনেও রাখবে না। অসৎ ব্যবসায়ীরা এর সুযোগ নেয়। এ ঋণ যেন পরিশোধ করতে না হয়, সেজন্য তারা নানা কৌশলের আশ্রয় নেন।
বর্তমানে বিনিয়োগকারীদের চ্যালেঞ্জ বাড়ছে। অনাদায়ী মন্দ ঋণের পরিমাণ বাড়লে ব্যাংকগুলো বাধ্য হয়ে আমানতের ওপর কম সুদ এবং ঋণের ওপর বেশি সুদ নির্ধারণ করে। নতুন বিনিয়োগকারীরা উচ্চহারে সুদে ঋণ নিয়ে প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে পারবেন না, যা বলাই বাহুল্য। এতে বিনিয়োগকারীরা নিরুৎসাহিত হন, যা নতুন কর্মসংস্থানে প্রভাব ফেলে। কাজেই খেলাপি ঋণ আদায়ে কর্তৃপক্ষকে আরও কঠোর হতে হবে। একই সঙ্গে ঋণ প্রদানে আরও বেশি পেশাদারিত্ব ও সতর্কতার পরিচয় দিতে হবে। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের চিহ্নিত করতে ব্যাংকগুলোকে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে। এ বিষয়ক লক্ষ্য অর্জনে ব্যাংক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করা জরুরি।
