Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

স্বাস্থ্য খাত সংস্কার

কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে গুরুত্ব কাম্য

Icon

প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন সোমবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। ৩২২ পৃষ্ঠার এ প্রতিবেদনের মূল বিষয়বস্তু ও সুপারিশ উপস্থাপন করেন কমিশনের সদস্য ও ক্যানসার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সৈয়দ আকরাম হোসেন। প্রতিবেদনে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। এগুলো হলো : দেশের নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সবার জন্য ‘স্মার্ট হেল্থ কার্ডে’র ব্যবস্থা করা; বিনামূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান; সংবিধানে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে মৌলিক অধিকার হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা; দেশে ওষুধের কাঁচামাল তৈরি ও আবশ্যিক ওষুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা; চিকিৎসকদের ওষুধের নমুনা বা উপহার দিয়ে কোনো ধরনের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা নিষিদ্ধ করা; প্রত্যেক রোগীকে চিকিৎসকদের ন্যূনতম ১০ মিনিট সময় দেওয়া, ২৪ ঘণ্টা ফার্মেসি চালু রাখা এবং সরকারি হাসপাতালের সময়সীমা সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা করা ইত্যাদি। এছাড়াও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে পরিচালিত সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সেবা, স্বাস্থ্যসেবার ফি ও রোগ পরীক্ষা-নিরীক্ষার চার্জ বা মূল্য আলাদাভাবে নির্ধারণ করে দিতে হবে। আমরা মনে করি, কমিশনের প্রতিবেদনে তুলে ধরা এসব সুপারিশ সময়োপযোগী ও বাস্তবধর্মী। এক্ষেত্রে জনস্বার্থকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, যা প্রশংসাযোগ্য।

স্বাস্থ্য খাত একটি দেশের মৌলিক সেবা খাতগুলোর অন্যতম। বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতে নানা সীমাবদ্ধতা, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীদের সেবার মান আশানুরূপ নয়। চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি ওষুধ, সরঞ্জাম ও মানবসম্পদের ঘাটতিও প্রকট। এ প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। কমিশন দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে চিহ্নিত করেছে এবং হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছে।

তবে শুধু প্রতিবেদন প্রকাশই যথেষ্ট নয়, তা বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণই হবে আসল চ্যালেঞ্জ। রাজনৈতিক সদিচ্ছা, প্রশাসনিক দক্ষতা এবং নাগরিক সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া এসব সুপারিশ বাস্তব রূপ পাবে না। দেশের সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের সাংবিধানিক দায়িত্ব। স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের সুপারিশগুলোর বাস্তবায়ন সেই দায়িত্ব পালনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে। সরকার যদি আন্তরিকতা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে এগিয়ে আসে, তাহলে রাষ্ট্র একটি সমতাভিত্তিক ও কার্যকর স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তুলতে সক্ষম হবে। এখন প্রয়োজন যথাযথ পরিকল্পনা, তদারকি ও দ্রুত বাস্তবায়ন।

আমরা জানি, জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের পর দেশে সর্বক্ষেত্রে সংস্কারের যে তাগিদ অনুভূত হয়, তা থেকেই গঠিত হয় বিভিন্ন সংস্কার কমিশন। রাষ্ট্র সংস্কার কেবল রাজনৈতিক নেতাদের জন্য নয়, সর্বস্তরের মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করা এর উদ্দেশ্য। এক্ষেত্রে দেশের স্বাস্থ্য খাতের সংস্কার অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করি আমরা। তবে সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার প্রক্রিয়াটি হয়তো শুরু করে যেতে পারে, যা সম্পন্ন করতে হবে নির্বাচিত সরকারকে। তবে আশার কথা, যেসব সুপারিশ এখনই বাস্তবায়নযোগ্য, সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম