ইটভাটার দূষণ
বিকল্প পদ্ধতির প্রয়োগ বিস্তৃত করুন
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১১ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বাংলাদেশ তো বটেই, দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিতে ইট উৎপাদন একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। দেশে অসংখ্য ইটভাটা প্রতিনিয়ত ইট তৈরি করে চলেছে। ইট অবকাঠামো, তথা আধুনিকতার জন্য একটি অতি প্রয়োজনীয় উপাদান; কিন্তু ইটভাটার নেতিবাচক প্রভাব এক বড় দুশ্চিন্তার কারণও বটে। ইটভাটা গ্রিনহাউজ গ্যাস ও বায়ুদূষণের এক বড় উৎস।
প্রচলিত পদ্ধতিতে যেভাবে কয়লা পুড়িয়ে ইট উৎপাদন করা হয়, তাতে বিপুল পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড, সূক্ষ্ম বস্তুকণা ও অন্যান্য দূষিত পদার্থের নিঃসরণ ঘটে। আর এতে মানবস্বাস্থ্য, কৃষি ও পরিবেশ মারাত্মক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে। দেশের ইটভাটার দূষণ নিয়ে প্রচুর লেখালেখি ও কথাবার্তা হয়েছে। কিন্তু ইট উৎপাদনের বিকল্প পদ্ধতি এখনো সর্বত্র প্রয়োগ করা সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ আমাদের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ইট উৎপাদনের নতুন কৌশল উদ্ভাবন করেছেন বেশ আগেই। এই উদ্ভাবন কাজে লাগানো গেলে কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে কার্যকরভাবে জ্বালানি সাশ্রয় ও কার্বন নির্গমন কমানোর সুযোগ তৈরি হবে।
সম্প্রতি পরীক্ষামূলকভাবে প্রমাণিত হয়েছে, বাংলাদেশের ইটভাটা মালিকরা আইনি বাধ্যবাধকতা ছাড়াই পরিবেশবান্ধব ও জ্বালানি সাশ্রয় কৌশল গ্রহণে সক্ষম। তারা এ বিষয়ে আগ্রহীও বটে। তবে নতুন পদ্ধতি প্রয়োগের জন্য তাদের দিতে হবে যথাযথ প্রশিক্ষণ সহায়তা। আশার কথা, ২০২২-২৩ সালে ইট উৎপাদন কৌশলে ট্রায়ালভিত্তিক ২৭৬টি ভাটার মালিককে শিক্ষা উপকরণ, প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা দেওয়া হয়েছিল। এ প্রশিক্ষণে ইট পোড়ানোর উন্নত পদ্ধতি এবং কয়লার পাশাপাশি জ্বালানি হিসাবে কাঠের গুঁড়া, ধানের তুষ ইত্যাদি ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ৬৫ শতাংশ ইটভাটার মালিক এই পরিবর্তনগুলো গ্রহণ করেছেন। এ পদ্ধতিতে জ্বালানি ব্যবহার ২৩ শতাংশ এবং পরিবেশে কার্বন ডাই-অক্সাইডের নির্গমন ২০ শতাংশ কমে যায়। বর্তমান ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ আইনে জ্বালানি হিসাবে কাঠের ব্যবহার নিষিদ্ধের কথা বলা হয়েছে। এছাড়া আইন অনুযায়ী ইটের ভাটা স্কুল, স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি থেকে দূরে স্থাপন করতে হবে।
আমাদের কথা হলো, বর্তমান আইনে যা আছে এবং নতুন পদ্ধতি, এ দুইয়ের সমন্বয়ে ইটভাটাগুলোকে বিন্যস্ত করতে হবে; তবে দেখতে হবে শ্রমিকদের স্বার্থ যেন ক্ষুণ্ন না হয়। মালিক ও শ্রমিক উভয়পক্ষই লাভবান হতে পারে, এমন ব্যবস্থা থাকলে নতুন পদ্ধতিতে ইট উৎপাদনে দুপক্ষই যে আগ্রহী হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। শেষ কথা, পরিবেশ দূষণ এবং কার্বন নির্গমনে সহায়ক, এ ধরনের ইট তৈরির পদ্ধতি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
