শুভ বুদ্ধপূর্ণিমা
‘জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক’
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১১ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আজ শুভ বুদ্ধপূর্ণিমা। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কাছে এটি বুদ্ধপূর্ণিমা নামে পরিচিত। প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে এই তিথিতে বৌদ্ধধর্মের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধ জন্মগ্রহণ করেছিলেন নেপালের লুম্বিনি কাননে। আবার এ রাতেই তিনি বোধিজ্ঞান লাভ করেছিলেন ভারতের বিহার রাজ্যের বুদ্ধগয়ায়। এছাড়া গৌতম বুদ্ধের মৃত্যুও হয়েছিল এ তিথিতেই। আর এ কারণেই এ তিথিকে বলা হয় বুদ্ধপূর্ণিমা। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই দিনটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে একই সঙ্গে শোক ও আনন্দের। যথাযথ ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে প্রতিবছর বৌদ্ধ সম্প্রদায় তাদের এ প্রধান ধর্মীয় উৎসব উদযাপনের লক্ষ্যে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা ‘বুদ্ধপূর্ণিমা’ উদযাপন করেন।
বুদ্ধ ছিলেন অহিংস, ন্যায় ও সাম্যনীতির এক বলিষ্ঠ কণ্ঠ। বুদ্ধবাণীতে বারবার ধ্বনিত হয়েছে অহিংসা, শান্তি ও বিশ্বপ্রেম এবং মহামৈত্রীর কথা। এ ধর্মে সবার সামগ্রিক সুখকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। আর তাই মহামতি বুদ্ধের বাণী হলো-‘সব্বে সত্তা সুখীতা ভবন্তু’ অর্থাৎ ‘জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক।’ সমগ্র বিশ্বের বৌদ্ধরা এবং মানবতাবাদী দার্শনিক চিন্তাবিদরাও বুদ্ধের জীবনদর্শনকে গভীরভাবে অনুধাবন করেন। বৌদ্ধধর্মে জিঘাংসা, যুদ্ধপ্রবণতা, বিদ্বেষ ইত্যাদির কোনো স্থান নেই।
বৌদ্ধধর্মে অষ্টাঙ্গিক মার্গ বা আটটি বিশুদ্ধ পথের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে-সৎ বাক্য বলা, সৎ চিন্তা করা, সৎ কর্ম করা, সৎ জীবিকা নির্বাহ করা, সৎ প্রচেষ্টা, সৎ স্মৃতি, সৎ সমাধি করা। বৌদ্ধধর্মের অন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ‘পঞ্চশীল’। এতে বলা হয়েছে প্রাণী হত্যা, চৌর্যবৃত্তি, ব্যভিচার না করা, মিথ্যা না বলা এবং মাদকদ্রব্য সেবন না করার কথা। এসব কাজে কাউকে কোনোরকম উৎসাহিত না করার কথাও বলা হয়েছে। মহামতি বুদ্ধের এ পঞ্চনীতি পালনে ব্যক্তি যেমন উপকৃত হয়, নিরাপদ থাকে; তেমনি সমাজ ও দেশের মানুষও সুখে-শান্তিতে অবস্থান করতে পারে। ত্রিপিটকে উল্লেখ আছে, জগৎ অনাচার-পাপাচারে নিমজ্জিত হলে জগতের কল্যাণে এবং মানুষকে জীবনের সঠিক পথ দেখাতে জীবের দুঃখমোচনে সম্যক সম্বুদ্ধের আবির্ভাব ঘটে। ভারতবর্ষ যখন মানুষে মানুষে ভেদাভেদ, জাত-পাতের চরম বৈষম্য, ধর্মের নামে প্রাণযজ্ঞ ও হিংসায় মেতে উঠেছিল, তখন মানুষকে আলোর পথ দেখাতে বুদ্ধ ধরায় এসেছিলেন।
বিদ্যমান জাতীয় ও বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে বুদ্ধের বাণী এখনো সমকালীন বলে মনে করি আমরা। প্রসঙ্গত বলা দরকার, এবার বৌদ্ধদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব বুদ্ধপূর্ণিমা এমন এক সময় এসেছে, যখন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে চলছে যুদ্ধ-সংঘাত, দেখা যাচ্ছে হিংসা-বিদ্বেষ। সামগ্রিকভাবে যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট সংকটসহ নানামুখী অনিশ্চয়তা পরিলক্ষিত হচ্ছে বিশ্বজুড়ে। যুদ্ধকে কেন্দ্র করে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে, এর প্রভাব পড়েছে সারা পৃথিবীতেই। এমন পরিস্থিতিতে এই সংকট দূর হোক এবং মানুষের জীবনযাপন স্বস্তিদায়ক হোক, এটাই কাম্য। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের মানুষ সৃষ্ট পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠুক। শুভ বুদ্ধপূর্ণিমার আলোয় ‘জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক’, এটাই প্রত্যাশা।
