Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

ব্যাংক রেজুলেশন অধ্যাদেশ

সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হোক

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ১৩ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ব্যাংক রেজুলেশন অধ্যাদেশ

ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার বিষয়ে বিগত সরকারের সময় বারবার তাগিদ দেওয়ার পরও কার্যত কোনো পদক্ষেপ লক্ষ করা যায়নি। ফলে ক্রমেই ঢালের দিকে গড়িয়েছে দেশের আর্থিক খাত।

আশার কথা, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর এ খাতের উত্তরণে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বেশকিছু বিধান রেখে শুক্রবার ব্যাংক রেজুলেশন অধ্যাদেশ গেজেট আকারে জারি করা হয়েছে। এ রেজুলেশনে কোনো ব্যাংকে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে আমানতকারীদের অর্থ আত্মসাৎ করা হলে এর জন্য ব্যাংকের এমডি চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের জবাবদিহি ও শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে, এমনকি জালিয়াতির অর্থও আদায় করা হবে। সেদিন থেকেই কার্যকর হওয়া এ অধ্যাদেশের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো দুর্বল ব্যাংককে সবল করার জন্য অবসায়নসহ অস্থায়ীভাবে প্রশাসক নিয়োগ, শেয়ার অন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের নামে স্থানান্তর, আমানতকারীদের অর্থ আত্মসাতের দায়ে ব্যাংকের এমডি, চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে।

এর আগে আইনটির খসড়া প্রণয়ন করে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের মতামত নেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৭ এপ্রিল উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে দুর্নীতি-অনিয়ম ঠেকাতে দেশে প্রথমবারের মতো কিছু বিধান যুক্ত করা হয়েছে, যা বাস্তবতার নিরিখে উপযুক্ত বলেই বিশেষজ্ঞরা বলছেন।

অধ্যাদেশ অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রয়োজন মনে করলে দুর্বল ব্যাংকগুলোতে নতুন করে মূলধনের জোগান দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে পারবে। এজন্য দুর্বল ব্যাংক অধিগ্রহণের পাশাপাশি সেটির শেয়ারও অধিগ্রহণ করে বা নতুন শেয়ার সৃষ্টি করে বা বিদ্যমান শেয়ার জব্দ করে যে কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানের নামে হস্তান্তর করতে পারবে। এছাড়াও বিধান অনুযায়ী সাত সদস্যের একটি ব্যাংকিং সেক্টর ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কাউন্সিল গঠন করা হবে। এই কাউন্সিল ব্যাংকগুলোকে পর্যবেক্ষণ করে দুর্বল ব্যাংকগুলোর বিষয়ে আগে থেকেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।

আর্থিক খাতে সুশাসন নিশ্চিতে ব্যাংক রেজুলেশন অধ্যাদেশ যে সময়োপযোগী, এতে দ্বিমতের কোনো সুযোগ নেই। বিগত সরকারের সময়ে ব্যাংক খাতে যে নজিরবিহীন লুটপাট হয়েছে, তার ক্ষত দিন দিন প্রকট হতে আমরা দেখছি। লুটপাটের মাধ্যমে আমানতকারীদের টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের কারণে ব্যাংক খাতকে এখন চারটি মৌলিক সূচকে তীব্র লড়াই করে টিকে থাকতে হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে-খেলাপি ঋণের লাগামহীন ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা, ঋণ বিতরণের সক্ষমতা হ্রাস ও ঋণের প্রবৃদ্ধিতে ধীরগতি, নিট আয় হ্রাস এবং চাহিদা অনুযায়ী মূলধন রাখার সক্ষমতার তীব্র অভাব। এই চার খাতে লড়াই করে দুর্বল কিছু ব্যাংক এগিয়ে গেলেও সবার পক্ষে তা সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় এই অধ্যাদেশ আর্থিক খাতে সমস্যাভিত্তিক সংস্কারে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলেই মনে করি আমরা।

বলার অপেক্ষা রাখে না, ব্যাংক খাতের অবস্থা বর্তমানে মোটেও ভালো নেই। দীর্ঘদিন ধরে পুঞ্জীভূত সমস্যা সমাধানে কঠোরতার বিকল্পও তাই ছিল না। এ অধ্যাদেশের ফলে ব্যাংকগুলোর শীর্ষপদে থাকা ব্যক্তিরা সুশাসন নিশ্চিতে স্বাভাবিকভাবেই আন্তরিক হবেন। তবে সংস্কারের এ উদ্যোগ তখনই আলোর মুখ দেখবে, যখন তা শুধু কাগজে-কলমে নয়, বাস্তবেও প্রয়োগ হবে। এ অধ্যাদেশের ফলে অভ্যন্তরীণ সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ব্যাংক খাত আবারও ঘুরে দাঁড়াবে, এটাই প্রত্যাশা।

ব্যাংক রেজুলেশন অধ্যাদেশ

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম