বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিরতা
দ্রুত স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসুক
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৫ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টানা ২৯ দিনের আন্দোলনের মুখে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিনকে তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উপাচার্যের অপসারণ না হলে দক্ষিণাঞ্চল অচল করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসাবে মঙ্গলবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসংলগ্ন বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা। এতে মহাসড়কের দুপাশে অসংখ্য যানবাহন আটকে থাকায় যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে অনশনও শুরু করেছিলেন ১১ শিক্ষার্থী। এর আগে ২৬ এপ্রিল খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে উপাচার্য ড. মুহাম্মদ মাছুদকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এ দুটি ঘটনা উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিরতারই ইঙ্গিত দেয়।
অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিন এবং ড. মুহাম্মদ মাছুদ উভয়েই উপাচার্য হিসাবে নিয়োগ পেয়েছিলেন গত বছরের সেপ্টেম্বরে, অর্থাৎ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারই তাদের নিয়োগ দিয়েছিল। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য পদে দায়িত্ব পালনের নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে মেয়াদ পূরণ হওয়ার আগেই উপাচার্যের অপসারণ কোনো ভালো দৃষ্টান্ত নয়। এতে অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার শর্ত তৈরি হয়। এভাবে গোটা শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে, যা কোনোমতেই কাম্য নয়।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আশা করা হয়েছিল, ছাত্রসমাজ পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে ইতিবাচক ভূমিকা অব্যাহত রাখবে। স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বেশকিছু ছাত্র সংগঠন ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করেছিল। পরবর্তীকালে সেই ঐক্যে যে ফাটল ধরে, আমরা এর বহিঃপ্রকাশ দেখতে পাই কুয়েটে। এটি কাম্য নয়। শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনৈক্য দেখা দিলে এর সুযোগ নিয়ে অপশক্তি আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। আমরা দেখেছি, গত সরকারের আমলে শিক্ষাঙ্গনে ছাত্ররাজনীতির নামে পেশিশক্তি ও একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তারের মহড়া চলেছে। দেশে এখন আর সেই পরিস্থিতি নেই। কাজেই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুস্থ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে মনোনিবেশ করতে হবে। ক্যাম্পাসে সবসময় শান্তি বজায় রাখতে হবে। বহিরাগতদের তৎপরতা বন্ধ করতে হবে। শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হয়, এমন যে কোনো কিছু করা থেকে সবাইকে বিরত থাকতে হবে। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের যেমন দায়িত্ব রয়েছে, তেমন দায়িত্ব রয়েছে সব ছাত্র সংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীদেরও। একইভাবে উপাচার্যেরও দায়িত্ব রয়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক প্রত্যাশা পূরণে সক্রিয় ভূমিকা রাখার। জানা যায়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদায়ি উপাচার্যের ওপর নানা কারণে ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষোভ ছিল। আমরা আশা করব, তাকে অপসারণের ফলে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিরাজমান অস্থির পরিস্থিতির শিগগিরই অবসান হবে এবং একাডেমিক কার্যক্রম সচল থাকবে। দেশের সব উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসে শান্তি ও শিক্ষার সুস্থ পরিবেশ বজায় রাখার বিষয়ে ঐক্য প্রতিষ্ঠা অত্যন্ত জরুরি। এ ব্যাপারে সবাই শুভবুদ্ধির পরিচয় দেবেন, এটাই কাম্য।
