স্থলবন্দরে ভারতের নিষেধাজ্ঞা, কূটনৈতিকভাবে সমাধান জরুরি
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২০ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
মাসখানেক আগে ভারতীয় সুতা আমদানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাংলাদেশ। এরই প্রতিক্রিয়ায় ভারত স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, প্রসেস ফুড, কার্বোনেটেড বেভারেজ, তুলা, ঝুট, প্লাস্টিকের সামগ্রী ও ফার্নিচার আমদানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে ধারণা। ভারতের এ সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের রপ্তানি খাত এবং ভারতীয় ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা আরও বলেছেন, বিদ্যমান সংকট সমাধানে কূটনৈতিক তৎপরতা জরুরি হয়ে পড়েছে। রপ্তানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোও বলছে এ কথা।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ অনেক বেশি। বাংলাদেশ ভারতে রপ্তানির চেয়ে সেখান থেকে আমদানি করে বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ভারতে রপ্তানি করেছে ১৫৭ কোটি ডলারের পণ্য, বিপরীতে আমদানি করেছে ৯০০ কোটি ডলারের পণ্য। ভারতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানির পরিমাণ ৫৬ কোটি ডলার। ভারতের বর্তমান সিদ্ধান্তের ফলে এ রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেলে বাংলাদেশের আর্থিক খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে, সন্দেহ নেই। অবশ্য স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে খুব বেশি তৈরি পোশাক রপ্তানি হয় না। তাই এ খাতে ক্ষতির পরিমাণ খুব বেশি হবে না। কিন্তু দেশের প্রসেস ফুড ও ফার্নিচার খাত বড় ধাক্কা খাবে। বিশেষত সেভেন সিস্টার্সে বাংলাদেশের প্রসেস ফুডের বড় বাজার তৈরি হয়েছে।
এমনিতেই ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি অনেক বেশি, এর সঙ্গে ভারতের নতুন সিদ্ধান্ত যুক্ত হওয়ায় আমাদের রপ্তানি বাণিজ্য আরও পিছিয়ে পড়বে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ জরুরি। আমরা লক্ষ করছি, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক দিন দিন খারাপ হচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে নানা ক্ষেত্রে। কিছুদিন আগে ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধ করে দেওয়ায় দেশের বাণিজ্যিক খাত বড় ধরনের ক্ষতির মধ্যে পড়েছে। এখন আবার স্থলবন্দরে নিষেধাজ্ঞা জারি এ সমস্যায় নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। প্রকৃত প্রস্তাবে, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে যে ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকা দরকার, দুদেশের মধ্যে যে সদ্ভাব থাকা প্রয়োজন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সেই সম্পর্ক এখন অনুপস্থিত। এ কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দুই দেশই। আমরা মনে করি, এ বৈরী কূটনৈতিক সম্পর্কের অবসান হওয়া দরকার। কূটনৈতিক সম্পর্ক সমমর্যাদার ও স্বাভাবিক হলে অর্থনৈতিকভাবেও দুদেশ উপকৃত হবে। তাই আমরা আশা করব, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জোর কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে দুদেশের মধ্যকার বাণিজ্যিক সম্পর্কে যে ফাটল ধরেছে, তা মেরামত করা হবে। পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ দিকটায় বিশেষ দৃষ্টি দেবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।
