Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

দাবির শহরে পরিণত ঢাকা, আলোচনাকেই প্রাধান্য দিতে হবে

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ২০ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

দাবির শহরে পরিণত ঢাকা, আলোচনাকেই প্রাধান্য দিতে হবে

রাজধানী ঢাকা রীতিমতো দাবির শহরে পরিণত হয়েছে। সোমবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-ছোট-বড় যে কোনো ইস্যুতে মুহূর্তেই উত্তাল হয়ে উঠছে রাজপথ। প্রায় প্রতিদিনই মিছিল, সমাবেশ, অবরোধ, ঘেরাও ও আলটিমেটাম দেওয়ার মতো কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে। শুধু রাজপথই নয়, প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়সহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরও এর অন্তর্ভুক্ত। স্বাভাবিকভাবেই এসব কর্মসূচি ঘিরে ব্যস্ততম নগরজুড়ে সৃষ্টি হচ্ছে একরকম অচলাবস্থা। ফলে চরমে উঠেছে জনকষ্ট।

যানজট যেন নগরবাসীর নিত্যসঙ্গী। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে কখনো থেমে থেমে আবার কখনো বিরতিহীনভাবে পালিত হচ্ছে এসব কর্মকাণ্ড। অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধানসহ কর্তৃপক্ষের তরফে বিক্ষোভের বদলে আলোচনার টেবিলে আসার পরামর্শ দেওয়া হলেও আন্দোলনরতদের মধ্যে কার্যত তা মানতে দেখা যাচ্ছে না। ইতঃপূর্বে বিক্ষোভ থামাতে একাধিকবার দেওয়া হয়েছে নিষেধাজ্ঞা; আন্দোলনকারীদের দমাতে রাবার বুলেট, টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ, লাঠিচার্জসহ নেওয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। কিন্তু আসেনি কোনো ইতিবাচক ফল। এককথায়, এমন হযবরল অবস্থা যেন রাজধানীর ‘স্থায়ী সংস্কৃতি’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গেল রোববারও নানা দাবিতে একাধিক পক্ষকে বিক্ষোভ-সমাবেশ করতে দেখা গেছে। এদিন চাকরিচ্যুত সেনাসদস্যদের জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান, দক্ষিণ সিটির মেয়র পদে ইশরাকের শপথের ব্যবস্থা করাতে টানা চতুর্থ দিনের মতো বিক্ষোভ, সাম্য হত্যার বিচারের দাবিতে শাহবাগ থানা ঘেরাও, জাতীয়করণের দাবিতে শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচি, বেতনের দাবিতে মাউশি ঘেরাও, বিজয়নগরে বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাসের ঘোষণা না দিলে শ্রমিকদের পক্ষ থেকে দেশ অচলের ঘোষণা, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের কাফনের কাপড় নিয়ে মিছিল এবং হাইকোর্টের মাজার গেটের সামনে বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের।

এমন পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্দোলনের শুরুতে উদাসীনতা না দেখিয়ে সহজেই এসব সমস্যার সমাধান করা যেত। উত্তেজনা প্রশমনে আলোচনার মাধ্যমে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হলে ঢাকা অন্তত দাবির শহরে পরিণত হতো না। দেখা গেছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আন্দোলন যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে, ঠিক তখনই চাপের মুখে নতি স্বীকার করছে সরকার। তড়িঘড়ি করে মেনে নেওয়া হচ্ছে বেশির ভাগ দাবি। কিন্তু ততদিনে নগরবাসীর ভোগান্তি যা হওয়ার, তা হয়েই যাচ্ছে। আমরা মনে করি, যেসব দাবি আদায়ের লক্ষ্যে অথবা যেসব প্রতিবাদ হিসাবে বিক্ষোভ-অবরোধের মতো কর্মসূচি পালন করা হয়, সেসব দাবির যৌক্তিকতা বুঝে কর্তৃপক্ষের প্রথম ধাপেই আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছানো উচিত। একইসঙ্গে যারা বিক্ষোভ করছেন, তাদের প্রতিবাদ যুক্তিসংগত হলেও এমন কোনো কর্মসূচি দেওয়া উচিত নয়, যা সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কারণ ঘটায়। সব পেশাজীবী ও গোষ্ঠীরই উচিত জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী যে কোনো কর্মসূচি পরিহার করা। বস্তুত কথায় কথায় সড়ক অবরোধের প্রবণতা থেকে সবারই সরে আসা উচিত। প্রত্যেকেরই বোঝা উচিত, এ প্রবণতা চলতে থাকলে আজ যারা অবরোধ করছেন, তারাও অথবা তাদের স্বজনরাও অতিপ্রয়োজনের সময় নগরে এমন দুর্ভোগের শিকার হতে পারেন। কোনো গোষ্ঠীর দাবি-দাওয়ার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সমাধান করবে, এটাই প্রত্যাশা।

দাবি

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম