চলন্ত বাসে ডাকাতি-শ্লীলতাহানি
অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই সমাধান
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৩ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ফের চলন্ত বাসে ডাকাতি ও নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার রাতে ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে ‘আল ইমরান’ পরিবহণের একটি বাসে এ ঘটনা ঘটে। জানা যায়, ঢাকার আবদুল্লাহপুর থেকে যাত্রীবাহী বাসটি রংপুরের উদ্দেশে যাত্রা করে। রাত সাড়ে ১১টার দিকে সেটি টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা অতিক্রম করে যমুনা সেতুর পূর্বপ্রান্তের সংযোগ সড়কের কয়েক কিলোমিটার যাওয়ার পর যাত্রীবেশী ৮-১০ জন ডাকাত দেশীয় অস্ত্রের মুখে চালকের কাছ থেকে বাসের নিয়ন্ত্রণ নেয়। এরপর চালক ও যাত্রীসহ সবার হাত-পা ও চোখ-মুখ বেঁধে যাত্রীদের কাছ থেকে সব মালামাল লুটে নেয়।
এ সময় নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটে। এর আগে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি একই মহাসড়কে একটি বাসে ডাকাতি ও নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেছে। একই কায়দায় ২০২২ সালের ২ আগস্ট কুষ্টিয়াগামী একটি বাসে ডাকাতি ও নারী যাত্রী ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এরও আগে ২০১৯ সালে ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরার পথে টাঙ্গাইলে চলন্ত বাসে চালক-হেলপারদের লালসার শিকার হয়ে প্রাণ হারাতে হয় এক ছাত্রীকে। এতে বোঝা যায়, এই মহাসড়কটি ডাকাতদের অপকর্মের এক অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। কাজেই এ মহাসড়কের নিরাপত্তার দিকে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।
অবশ্য শুধু এ মহাসড়কই নয়, চলন্ত বাসে ডাকাতি, ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনসহ বিভিন্ন অপরাধের ঘটনা অন্যত্রও ঘটছে। অনেক সময় এমন অপরাধের সঙ্গে পরিবহণ শ্রমিকরাও জড়িয়ে পড়ছে। এ ধরনের অপরাধের পেছনের কারণ হিসাবে দুটি বিষয়কে চিহ্নিত করা যায়। প্রথমটি হলো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো নাজুক। শুধু রাতে নয়, দিনদুপুরেও ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। ছিনতাইকারীরা ছিনতাই করেই ক্ষান্ত হচ্ছে না, শারীরিকভাবেও আঘাত করছে মানুষকে। অপরাধের দ্বিতীয় কারণটি হলো, সমাজে নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি। আমাদের সমাজে সাধারণভাবে নারীকে এখনো নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হয়ে থাকে, মনে করা হয় ভোগের পণ্য। ফলে স্বাধীনভাবে চলাফেরায় তারা এখনো নিরাপদ নয়। তাই চলন্ত বাসে একের পর এক নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে।
এ বাস্তবতায় দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোয় যাত্রীদের নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। ব্যবস্থা করতে হবে নিয়মিত টহল পুলিশের। মহাসড়কের স্থানে স্থানে পুলিশ ফাঁড়ি থাকা প্রয়োজন। বিশেষ করে যেসব মহাসড়কে অপরাধের ঘটনা বেশি ঘটে থাকে, সেসব মহাসড়কের নিরাপত্তার দিকে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত, সড়কে কোনো অপরাধের ঘটনা ঘটলে অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতার করে সবার শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আমরা জানি না, ইতঃপূর্বে সংঘটিত বাস ডাকাতি ও নারী যাত্রী শ্লীলতাহানির ঘটনাগুলোর সঙ্গে যারা জড়িত ছিল, তাদের কী শাস্তি হয়েছে অথবা আদৌ শাস্তি হয়েছে কিনা। অপরাধীর শাস্তি না হলে একই ঘটনা বারবার ঘটবে, এটাই স্বাভাবিক। আমরা আশা করব, মঙ্গলবার ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে সংঘটিত বাস ডাকাতির ঘটনায় জড়িত সবাইকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে।
