Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

ঐক্যের কাঠিন্য অটুট থাকুক

ইস্পাতকে গলতে দেওয়া যাবে না

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ২৪ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ঐক্যের কাঠিন্য অটুট থাকুক

’২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানে দেশপ্রেমিক জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর যে ইস্পাতকঠিন ঐক্য প্রত্যক্ষ করেছিলাম আমরা, সেই ইস্পাত যেন গলে তার কাঠিন্য হারাতে বসেছে। ঐক্যের এ ফাটল শুধু বেদনাদায়কই নয়, রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নির্মাণে এক সংকট তৈরি করেছে। নির্বাচন প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলো নানা ইস্যুতে পরস্পর বিবাদে লিপ্ত হওয়ায় সামাজিক স্থিতিশীলতাও ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচন, রাখাইনে মানবিক করিডর, চট্টগ্রাম বন্দরের ব্যবস্থাপনা বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়া, উপদেষ্টা পরিষদের কয়েকজনের পদত্যাগের দাবি ইত্যাদি প্রশ্নে বিএনপি ও এনসিপির পালটাপালটি বক্তব্য পরিস্থিতিকে জটিল এক সমীকরণের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ফল দাঁড়াচ্ছে, গণ-অভ্যুত্থানবিরোধী শক্তিগুলো এ বিভক্তির সুযোগ নিয়ে বিরোধপূর্ণ পরিস্থিতিকে নানাভাবে আরও উসকে দিচ্ছে। বলা বাহুল্য, এ অবস্থা চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে দেশ এক ভয়ানক সংকটে নিমজ্জিত হবে।

বলতেই হবে, গত বছরের জুলাই অভ্যুত্থানের লক্ষ্য শুধু ফ্যাসিস্ট রেজিমের পতনই ছিল না, দেশকে একটি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে আনাও ছিল অন্যতম উদ্দেশ্য। এ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে একজন বিশ্বনন্দিত বাঙালি, নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে বিজয়ের দুদিন পর। এ সরকার আমাদের ভবিষ্যৎ নির্মাণে কিছু সংস্কার কর্মসূচিও হাতে নিয়েছে। ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রধান ও তার দোসরদের বিচার প্রক্রিয়াও চলমান রয়েছে। ঠিক এমন এক অবস্থায় দেখা দিয়েছে পারস্পরিক সন্দেহ, বিভেদ, এমনকি বিদ্বেষও। এ অবস্থায় অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তিগুলোর ঐক্য ফিরিয়ে আনা না গেলে সরকারের পক্ষে তার কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, রাজনৈতিক দলগুলো যদি জাতির বৃহত্তর স্বার্থে কিছু বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করতে না পারে, তাহলে আগামীতে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করাও কঠিন হয়ে পড়বে। নির্বাচন যদি সুষ্ঠুভাবে করা সম্ভবও হয়, নির্বাচিত সরকারের পক্ষে ভালোভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করা সম্ভব হবে না। তাই আমরা যেন মুহূর্তের মধ্যেই বেঁচে না থাকি, আমাদের ভবিষ্যৎটা ভাবতে হবে গভীরভাবে। ক্ষমতায় যাওয়াই যদি একমাত্র আরাধ্য হয়, তাহলে ক্ষমতাটাই ভোগ করা যাবে, রাষ্ট্রের কোনো উন্নতি হবে না। আমরা মনে করি, বড় দল হিসাবে এক্ষেত্রে বিএনপির দায়িত্ব ও কর্তব্য বেশি। এ দলের নেতৃত্বকে শুভবুদ্ধির পরিচয় দিতে হবে। নবগঠিত এনসিপিও এদেশের রাজনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ স্টেকহোল্ডার হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। এনসিপি, জামায়াত এবং বামপন্থিসহ অন্য দলগুলো এ সংকটকালে ‘দলের চেয়ে দেশ বড়’ এই দর্শনে বিশ্বাসী হয়ে তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে, এটা এখন সবারই প্রত্যাশা। আমরা সবাই চাই, প্রয়োজনীয় সংস্কারের মধ্য দিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং নির্বাচিত সরকারের নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাবে।

গণ-অভ্যুত্থান

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম