Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

সরকারি কর্মচারীদের আন্দোলন

স্থায়ী সমাধান কাম্য

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ২৮ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সরকারি কর্মচারীদের আন্দোলন

ছবি: সংগৃহীত

সচিবালয়ের ভেতরে গত কয়েকদিন ধরে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারী ও নন-ক্যাডার কর্মকর্তারা। তারা আন্দোলন করে আসছেন সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া প্রত্যাহারের দাবিতে। তাদের আন্দোলনের মধ্যেই রোববার এ অধ্যাদেশের গেজেট প্রকাশ করেছে সরকার। এতে আন্দোলন আরও বেগবান হয়ে উঠেছে।

জানা যায়, সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ সংশোধনের মাধ্যমে এতে নতুন যে ৩৭ক ধারা সংযোজন করা হয়েছে, তার সঙ্গে ১৯৭৯ সালের সরকারি কর্মচারী (বিশেষ বিধান) অধ্যাদেশের বিধানাবলির বহুলাংশে মিল রয়েছে। উল্লেখ্য, ১৯৭৯ সালে সামরিক সরকারের সময়ে সরকারি চাকরি (বিশেষ বিধান) জারি করা হয়। তখন মার্শাল ল অর্ডিন্যান্স জারির মাধ্যমে বিশেষ বিধান করা হয়েছিল ব্যাংক খাতে অরাজকতার প্রেক্ষাপটে ওই খাতকে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য।

স্বভাবতই এতে কিছু নিবর্তনমূলক ধারা থাকতে পারে। তাই বর্তমান গণতান্ত্রিক পরিবেশে সেই অধ্যাদেশ ফিরিয়ে এনে বা পুনরুজ্জীবিত করে কর্মচারীদের নাগরিক ও সাংবিধানিক অধিকার খর্ব করা হয়েছে বলে মনে করছেন তারা। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আশঙ্কা করছেন, ভবিষ্যতে আইনটির অপব্যবহার হতে পারে। তাই সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ, ২০২৫ প্রত্যাহারের দাবি করছেন তারা। জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, এ অধ্যাদেশ সংবিধানবিরোধী। তাছাড়া বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের নীতিনির্ধারণী কর্মকাণ্ডে হাত না দেওয়াই শ্রেয় বলে মনে করছেন তারা।

সচিবালয় হলো দেশের প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রস্থল, যেখানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এ ধরনের স্থানে বিক্ষোভ বা আন্দোলনের বিষয়টি নিঃসন্দেহে গুরুত্বের দাবি রাখে। বিক্ষোভকারীদের দাবি বা অভিযোগ যাই হোক না কেন, এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জনতার জমায়েত ও প্রতিবাদ স্বাভাবিক প্রশাসনিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটায়। তবে এটিও সত্য, নাগরিকদের মতপ্রকাশের অধিকার সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত। অবশ্য যে কোনো আন্দোলন বা বিক্ষোভ অবশ্যই হতে হবে শান্তিপূর্ণ, শৃঙ্খলাবদ্ধ ও নিয়মতান্ত্রিক। রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব এবং জনগণের অধিকার-এ দুইয়ের মধ্যে একটি ভারসাম্য রক্ষা করাই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সার্থকতা।

মঙ্গলবার টানা চতুর্থ দিনের মতো কর্মসূচি পালন করেছেন কর্মচারীরা। আন্দোলনের কারণে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র দীর্ঘদিন অচল হয়ে থাকার বিষয়টি সুখকর নয়, বরং উদ্বেগের বিষয়। এ পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ সমাধান কাম্য। আমরা মনে করি, সমস্যা যত জটিলই হোক না কেন, আলোচনার মাধ্যমে তার সমাধান সম্ভব। আশার কথা, আন্দোলনরতদের দাবিদাওয়া নিয়ে আলোচনা করতে কর্মচারী নেতাদের সঙ্গে অবশেষে বৈঠকে বসেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিবরা এবং আন্দোলন সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। তাদের উচিত হবে গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার স্থায়ী সমাধানের পথে এগিয়ে যাওয়া। এজন্য সব পক্ষকেই নমনীয় হতে হবে।

সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর যে ধারাগুলোর বিষয়ে কর্মচারীদের আপত্তি রয়েছে, সরকারের উচিত সেগুলোর যথাযথ ব্যাখ্যা তুলে ধরা অথবা এক্ষেত্রে ভাষাগত পরিবর্তন করা। প্রয়োজনে ভবিষ্যতে অপব্যবহার বা নিবর্তনের আশঙ্কা আছে, এমন ধারা প্রত্যাহার করে নেওয়া। অন্যদিকে কর্মচারীদেরও কোনো দাবিতে অটল থাকা উচিত নয়। আমরা আশা করব, এ আলোচনা-বৈঠকের মধ্য দিয়ে এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে।

সচিবালয় সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম