নিম্নমানের পাঠ্যবই
এনসিটিবির স্বেচ্ছাচারিতা আর কত কাল চলবে?
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
নিম্নমানের কাগজে ছাপা অনুজ্জ্বল বই শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণের কারণে গত কয়েক বছর ধরেই ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। বস্তুত মানসম্মত ও নির্ভুল পাঠ্যবই প্রণয়ন যেন এক অসাধ্য বিষয়েই পরিণত হয়েছে। দুঃখজনক হলো, এত আলোচনা-সমালোচনার পরও এনসিটিবি ন্যূনতম মানসম্পন্ন পাঠ্যবই প্রকাশ করতে পারছে না। গতকাল যুগান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এনসিটিবির অধীনে ছাপানো পাঠ্যবইয়ের মান নিয়ে এবারও দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটির দরপত্রে বইয়ের উজ্জ্বলতার জন্য নির্দিষ্ট মান থাকলেও অনেক মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান সেটি অনুসরণ করেনি। বই বাঁধাইয়ে ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের গাম। পাঠ্যবইয়ের প্রচ্ছদ ও পৃষ্ঠা সংখ্যার ক্ষেত্রেও করা হয়েছে নয়ছয়। বস্তুত নানা অসংগতিতে ভরা অন্তত ৩৩ শতাংশ নিম্নমানের বই প্রাথমিক-মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয়েছে। বিগত সরকারের আমলে এ বিষয়ে শর্ষের ভেতরের ভূত নিয়ে এত আলোচনার পর বর্তমান সরকারের আমলেও পাঠ্যবই নিয়ে কেন স্বেচ্ছাচারিতা চলছে, এ রহস্য উদ্ঘটান জরুরি হয়ে পড়েছে। পাঠ্যবইয়ে এত ভুল ও অসংগতি এনসিটিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভয়াবহ দায়িত্বহীনতাই স্পষ্ট হচ্ছে। যেহেতু এর সঙ্গে সারা দেশের শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার বিষয়টি সরাসরি যুক্ত, এ বিষয়ে দায়িত্বহীনতা ও স্বেচ্ছাচারিতা মেনে নেওয়া যায় না।
জানা যায়, অনেক মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান যথাসময়ে বই সরবরাহ করেনি। এতে শিক্ষার্থীরা বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, কিছু মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান, এনসিটিবি ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে বই নিয়ে এমন অনিয়ম করা হয়েছে। এনসিটিবির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মানহীন বই ছাপানোর কারণে ১৬টি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়েছেন। তারা দরপত্রের মান ঠিক রেখে আবার শিক্ষার্থীদের বই বদল করে দেবে। এছাড়া অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এনসিটিবির পক্ষ থেকে আরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার কথা রয়েছে। অতীতে আমরা দেখেছি, পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের পুরো প্রক্রিয়ায় হযবরল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, সংশ্লিষ্টরা ভুল স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছেন, দুঃখ প্রকাশ করেছেন। অতীতের মতো এবারও কি একই ঘটনা ঘটবে? এ বিষয়ে এনসিটিবির দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে যে ধরনের বক্তব্য প্রদান করা হচ্ছে, তা কতটা গ্রহণযোগ্য? এনসিটিবির নেওয়া দায়সারা উদ্যোগে শেষ পর্যন্ত কতটা সুফল মিলবে, এটাও এক প্রশ্ন।
ভুলে ভরা পাঠ্যপুস্তক নিয়ে অতীতে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছিল। ত্রুটিযুক্ত ও নিম্নমানের পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিয়ে এনসিটিবি বছরের পর বছর যে অমার্জনীয় অপরাধ করে চলেছে, এ বিষয়ে আমরা বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করলেও কেন শর্ষের ভেতরের ভূত তাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না, এটা এক বড় বিস্ময়। আমাদের বক্তব্য হলো, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের হাতে যেভাবেই হোক মানসম্মত ও ত্রুটিমুক্ত পাঠ্যবই তুলে দিতে হবে। এনসিটিবি কর্তৃপক্ষ কেন এ বিষয়ে বারবার ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে, তা খতিয়ে দেখে দ্রুত দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। পরিবর্তিত বিশ্বে বর্তমান ও আগামী প্রজন্মকে উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বাড়াতেও যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।
