যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিক্ষোভ
কঠোর অভিবাসীবিরোধী নীতির পরিবর্তন কাম্য
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৩ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস নগরীতে ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসীবিরোধী অভিযানের প্রতিবাদে শুরু হওয়া বিক্ষোভ এখন আরও অন্তত ১৫টি শহরে ছড়িয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র শহরের একটি নির্দিষ্ট অংশে কারফিউ জারি করতে বাধ্য হয়েছেন। এ শহরে অন্তত ৪০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ৩৩০ জন অবৈধ অভিবাসী। ১৫৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে হামলা ও বাধা দেওয়ার জন্য। বস্তুত সেখানে সেনা মোতায়েনের পর স্টেট কর্মকর্তাদের সঙ্গে ট্রাম্পের বিরোধ আরও তীব্র হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখন শহরটিকে অবৈধ অভিবাসীদের কবল থেকে ‘মুক্ত’ করার প্রতিশ্রুত দিয়েছেন। তবে তার বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের ওপর ‘আক্রমণ’ করার অভিযোগ তুলেছেন ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে এমন পরিস্থিতি নজিরবিহীন। কারণ যুক্তরাষ্ট্রকে বলাই হয়ে থাকে অভিবাসীদের দেশ। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ গিয়ে সেখানে বংশপরম্পরায় বসবাস করে আসছে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে। বস্তুত কেউই সেখানকার আদি বাসিন্দা নয়। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পূর্বপুরুষরাও অতীতে ইউরোপ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে আবাস গেড়েছিলেন। তার বাবার পূর্বপুরুষরা ছিলেন জার্মান অভিবাসী এবং মায়ের পূর্বপুরুষরা স্কটিশ অভিবাসী। অথচ ট্রাম্প তার অভিবাসীবিরোধী নীতি বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর। অবশ্য তার নির্বাচনি প্রচারণারও অন্যতম ইস্যু ছিল এটি। তবে তার এই নীতির বাস্তবায়ন যে সহজ হবে না, লস অ্যাঞ্জেলেসসহ বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভই এর প্রমাণ।
প্রকৃতপক্ষে লস অ্যাঞ্জেলেসে সেনা মোতায়েনের বিষয়টি নজিরবিহীন। গত ৬০ বছরেরও বেশি সময়ে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট তার নিজের ইচ্ছায় ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করেননি, এবার যা করা হয়েছে। লস অ্যাঞ্জেলেসে সেনা মোতায়েনের পর সশস্ত্র বাহিনীকে অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে ব্যবহারের আইনগত ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিক্ষোভ দমনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কমান্ডার ইন চিফ হিসাবে যেরকম আক্রমণাত্মকভাবে ক্ষমতা প্রয়োগ করেছেন, তা দেশটির জন্য একটি খারাপ নজির সৃষ্টি করেছে বলে মনে করছেন অনেকে। যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের অভিবাসীবিরোধী অভিযান অব্যাহত থাকলে দেশজুড়ে অস্থিরতা সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে, যার প্রভাব বিশ্বের অন্যত্রও পড়তে পারে। আমরা আশা করব, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দ্রুতই বিষয়টি অনুধাবন করবেন এবং তার কঠোর অভিবাসীবিরোধী নীতি থেকে সরে আসবেন।
