Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

আলোর নিচে অন্ধকার!

দরিদ্র মানুষের জীবনমান উন্নয়নে নজর দিন

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ২০ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আলোর নিচে অন্ধকার!

রাজধানীর অভিজাত এলাকা হিসাবে পরিচিত গুলশান, বনানী ও মহাখালীর মাঝখানে গড়ে উঠেছে কড়াইল বস্তি। এ যেন আলোর নিচে অন্ধকার। এখানে সুবিধাবঞ্চিত লক্ষাধিক খেটে খাওয়া মানুষ বসবাস করেন। এ বস্তিকে তিন দিক থেকে ঘিরে রেখেছে গুলশান-বনানী লেক। রাজধানীর দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষ, গার্মেন্টকর্মী, দিনমজুর, গৃহকর্মী, রিকশাওয়ালাসহ শ্রমজীবীদের আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে এটি। বন্যা, খরা, জলোচ্ছ্বাস, নদীভাঙনসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়ে গ্রাম ছেড়ে এ বস্তিতে ঠাঁই নেওয়া মানুষগুলো অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছেন। হাড়ভাঙা খাটুনিতেও তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরছে না। মূলত এ বস্তিতেই গুলশানসহ আশপাশের বিত্তবানদের গৃহকর্মী, মালী, নিরাপত্তারক্ষীরা বসবাস করেন।

২৫-৩০ বছর আগে যখন জঙ্গল পরিষ্কার করে বস্তি গড়ে ওঠে, তখন থেকেই গুলশান লেক পারাপারের জন্য শুরু হয় নৌকার ব্যবহার। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বস্তির মানুষ বেড়েছে, পারাপারের যাত্রী বেড়েছে, বেড়েছে নৌকার সংখ্যা। সড়কপথে টিঅ্যান্ডটি কলোনি পার হয়ে বস্তির মধ্য দিয়ে বেলতলা গলি ধরে পশ্চিম দিকে ঘুরে মূল সড়কে উঠতে সময় লাগে ৪০ মিনিটের বেশি। অথচ নৌকায় মাত্র ৫ মিনিটেই পৌঁছানো যায় গুলশান সড়কে। সময় ও খরচ বাঁচাতে বস্তিবাসীরা নৌকায় চলাচল করেন। শুধু বস্তিবাসীই নন, ওই এলাকায় বসবাসরত মধ্যবিত্তরাও নৌকায় চড়েন সময় ও যাতায়াত খরচ বাঁচাতে। গুলশান লেকের ঘাটে বাঁধা সারি সারি নৌকার দৃশ্য সবসময়ই চোখে পড়ে। এ লেকের পানির বর্ণ কুচকুচে কালো। পানির দুর্গন্ধ থেকে রক্ষায় যাত্রীরা নাক চেপেই নৌকায় ওঠেন। ছোট ঘাট, বড় ঘাট, বাদলের ঘাট, মোমেনের ঘাটে প্রায় অর্ধশতাধিক মাঝি আছেন পারাপারের কাজে। মাঝিদের সহকারী আছেন ২০-৩০ জন। ঘাটে সকালে ও সন্ধ্যায় যাত্রীদের ভিড় বাড়ে।

বস্তুত রাজধানীর মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ মানুষই বস্তিতে বসবাস করেন। ঢাকার বস্তিবাসীর জীবন কত দুর্ভোগে ভরা, তা বহুল আলোচিত। বস্তিতে বসবাসকারী মানুষের জীবন সংগ্রাম নিয়ে অনেক আলোচনা হলেও তাদের জীবনমানে কোনো পরিবর্তন আসেনি। নগরে বসবাস করে নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত এ বিশাল জনগোষ্ঠী রাজধানীর অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। আমাদের মনে রাখা দরকার, বস্তিবাসীও আমাদের অংশ। তাদের সুস্থ জীবনের নিশ্চয়তা প্রদানে আমাদের দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ আমাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া রাজধানীর বস্তিবাসীর জীবনমানে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আসবে কিনা সন্দেহ। দেশের টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে দরিদ্র মানুষের জীবনমান উন্নয়নের বিকল্প নেই।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম