অর্থনীতিতে গত সরকারের লিগ্যাসি
প্রয়োজনীয় সংস্কার ছাড়া ব্যাংক সবল করা যাবে না
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
গত রেজিম যে আমাদের অর্থনীতিকে কতটা দুর্দশাগ্রস্ত করেছে, তা নানাভাবে তথ্য-প্রমাণ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় লুটপাটের মাধ্যমে নেওয়া ঋণের সবই এখন খেলাপি হতে চলেছে। এসব ঋণ দীর্ঘসময় ধরে পরিশোধ করা হয়নি বলে খেলাপি ঋণের তিনটি ধাপের মধ্যে শেষ ধাপে ঋণগুলো আদায় অযোগ্য কুঋণ বা মন্দ ঋণে পরিণত হচ্ছে। বলা বাহুল্য, এসব ঋণ আদায় হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ বলে এর বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে অর্জিত মুনাফা থেকে শতভাগ প্রভিশন রাখতে হয়। ব্যাংকগুলো চাহিদা অনুযায়ী প্রভিশন রাখতে পারছে না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রভিশন ঘাটতি বাড়ছে। ওদিকে ব্যাংকের ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদও বেড়ে যাচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের বিপরীতে চাহিদা অনুযায়ী মূলধন রাখা সম্ভব হচ্ছে না। আশঙ্কার কথা, ব্যাংকগুলোর মূলধন কমে গেছে স্মরণকালের সর্বনিম্ন পর্যায়ে। দুর্বল হয়ে পড়ছে ব্যাংকগুলো।
এই হলো অবস্থা। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, গত বছরের মার্চ মাসে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ৬৬ হাজার ২৯৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে মন্দ ছিল ১ লাখ ৫৪ হাজার ১১৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ খেলাপি ঋণের ৮৪ দশমিক ৫৪ শতাংশই মন্দ ঋণ। ভাবা যায়! এসব ঋণের সিংহভাগই ছিল আদায় অযোগ্য। আবার এখন পর্যন্ত যেসব ঋণ খেলাপি হচ্ছে, তার বেশির ভাগই বাণিজ্যিক ঋণ। মেয়াদি ঋণ এখনো সেই হারে খেলাপি হওয়া শুরু হয়নি। এটা শুরু হলে খেলাপি ঋণের মাত্রা আরও বেড়ে যাবে।
গত রেজিমের ব্যাংক খাতের লিগ্যাসি বর্তমান ও সমাগত সরকারগুলো কীভাবে মোকাবিলা করবে, এ এক কঠিন প্রশ্ন। কয়েকটি ব্যাংক তো একেবারেই চলতে পারছে না। লুটের টাকাও আদায় করা যাচ্ছে না, লুট করা সেসব টাকা বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। বর্তমান অবস্থার কীভাবে উত্তরণ ঘটানো যায়, তা ভাবতে হবে গভীরভাবে। অবশ্য গত সরকারের আমলের পর থেকে লুটপাট বন্ধ হয়েছে। চলছে ব্যাংক খাতের সংস্কার। আমাদের কথা হলো, সংস্কারের কাজগুলো এমনভাবে করতে হবে, যাতে ব্যাংকের টাকা নিয়ে কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে। বিদেশে পাচারকৃত টাকা ফেরত আনারও সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। মন্দ ঋণ আদায়ে কী প্রক্রিয়া অবলম্বন করা যায়, সেটিও ভাবার বিষয়।
