অকল্পনীয় ইজারা
ধানমন্ডি মাঠ উন্মুক্ত হোক সবার জন্য
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
রাজধানীর আবাহনী মাঠ নিয়ে যেসব তথ্য পাওয়া গেল, তাতে চক্ষু চড়কগাছ। এ মাঠটি প্রাথমিকভাবে অভিজাত এলাকা ধানমন্ডির শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার জন্য গড়ে তোলা হয়েছিল। মাঠটির আয়তন ৩০ বিঘারও বেশি। সংশ্লিষ্ট এলাকার জমির বাজারমূল্যে হিসাব করলে এ জমির দাম এখন ১ হাজার ২১৪ কোটি টাকা। অথচ বিস্ময়কর তথ্য হলো, বার্ষিক মাত্র ৫০ হাজার টাকা সালামির বিনিময়ে ৯৯ বছরের জন্য মাঠটির ইজারা নিয়েছে আবাহনী লিমিটেড। প্রথমত, জনঘনত্বের এ শহরের প্রাণকেন্দ্রের একটি খেলার মাঠ কোনোভাবেই কোনো গোষ্ঠীর নামে ইজারা দেওয়া চলে না। দ্বিতীয়ত, বার্ষিক ইজারার যে টাকা ধরা হয়েছে, তা বিশ্বাস করাও কঠিন। তৃতীয়ত, ৩০ বিঘা আয়তনের বিশাল এ মাঠটিতে শিশু-কিশোররা খেলতে পারছে না। বিপরীতে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এ মাঠে বসেছে জুয়ার আসর, ক্যাসিনো। কোটি টাকা দিয়ে ক্যাসিনোর সদস্যপদ নিয়েছেন অনেকে। আর এসব টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ক্লাবসংশ্লিষ্ট রাঘববোয়ালরা।
আবাহনী মাঠের ইজারা দেওয়া হয়েছিল শেখ হাসিনার প্রথম শাসনামলে। বুঝতে অসুবিধা হয় না, ধানমন্ডি মাঠের সঙ্গে শেখ হাসিনার ভাই দ্বারা প্রতিষ্ঠিত আবাহনী ক্লাবের একটা সম্পর্ক থাকায় তিনি এ ইজারার ব্যবস্থা করেছিলেন। তৎকালীন সরকারের এ সিদ্ধান্ত নিশ্চিতভাবেই মহা অন্যায়। উন্মুক্ত স্থান বা মাঠ নাগরিকদের নিজস্ব সম্পদ, এতে অধিকার রয়েছে তাদেরই। একটি মাঠ বা গণপরিসর কোনো ক্লাব বা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে দেওয়া কোনোভাবেই সমীচীন নয়। অথচ ইজারা দেওয়া হয়েছে ৯৯ বছরের জন্য। মাঠটি আবাহনী লিমিটেডকে ইজারা দেওয়ায় সেটি এখন আবাহনী ক্লাবের নিজস্ব সম্পত্তি। জানা গেছে, ধানমন্ডি মাঠ অবরুদ্ধ করে মাঠের ফটকে পাহারাদার বসিয়েছিল ক্লাব কর্তৃপক্ষ। আদালত এ মাঠ সবার জন্য উন্মুক্ত রাখার জন্য রাজউক ও সিটি করপোরেশনকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু সিটি করপোরেশন, গণপূর্ত মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্টরা সবসময় আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে নির্বিকার থেকেছে, তাদের এ নির্বিকারত্ব দখলদারদের করেছে উৎসাহিত। ধানমন্ডি মাঠে সবার প্রবেশের দাবিতে গত রেজিমে একটি আন্দোলন হয়েছিল বটে; কিন্তু আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে হয়েছিল মামলা।
আমরা মনে করি, ধানমন্ডি মাঠ যেহেতু নাগরিকদের সম্পত্তি, তাই এ মাঠকে তাদের কাছেই ফিরিয়ে দেওয়া উচিত। এ জন্য বাতিল করতে হবে ইজারার বর্তমান চুক্তি। আর এ ইজারা বাতিল হলে তা উন্মুক্ত হয়ে যাবে ধানমন্ডি এলাকার শিশু-কিশোরসহ সব নাগরিকের জন্য। রাজধানীর অন্যান্য এলাকার মানুষও মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে আসতে পারবেন এখানে। বিষয়টি সরকার তথা গণপূর্ত মন্ত্রণালয় গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নেবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
