এনবিআর শাটডাউন
দ্রুত সংকট সমাধান কাম্য
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মসূচির কারণে দেশের অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রোববার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ, স্থবিরতার কারণে বন্দরে কাঁচামাল খালাস করা যাচ্ছে না। বৃষ্টিতে ভিজে, রোদে পুড়ে মালামাল নষ্ট হচ্ছে। পাশাপাশি বন্দরে ডেমারেজ গুনতে হচ্ছে চারগুণ। এ অবস্থায় দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী নেতারা ব্যবসা-বাণিজ্য সচল রাখতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলছেন, দ্রুত সমাধানে আসার কোনো বিকল্প নেই। এনবিআর কর্মকর্তাদের দাবি আদায়ের জন্য ব্যবসায়ীরা কেন খেসারত দেবেন। তারা বলছেন, যুদ্ধাবস্থা ছাড়া পৃথিবীর কোথাও কাস্টমস বন্ধ রেখে এভাবে আন্দোলন করার নজির নেই। কোনো কোনো ব্যবসায়ী নেতা এ আন্দোলনের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন। বিষয়টি শুরুতেই শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান কেন করা সম্ভব হলো না, এ নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন কেউ কেউ।
বলার অপেক্ষা রাখে না, টালমাটাল বিশ্ব রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিবেশ চাপে আছে। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, রপ্তানি খাত, সাপ্লাই চেইন, মুদ্রা ও পুঁজিবাজারে নানা সমস্যা বিরাজমান। এই নাজুক পরিস্থিতিতে দেশের বেসরকারি খাত বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মধ্যে প্রতিটি মুহূর্ত অতিবাহিত করছে। এর মধ্যে ১২ মে জারিকৃত অধ্যাদেশের কারণে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কমপ্লিট শাটডাউনের ঘোষণা দেন, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ভুলে গেলে চলবে না, এনবিআরে অচলাবস্থার কারণে সঠিক সময়ে পণ্য রপ্তানি করতে না পারলে বিদেশি ক্রেতারা ক্রয়াদেশ বাতিল ও ভবিষ্যতে নতুন ক্রয়াদেশ দিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারেন। সেটি হলে এসব অর্ডার পার্শ্ববর্তী দেশে চলে যাবে, যা হবে দেশের অর্থনীতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।
বর্তমানে দেশের রপ্তানি শিল্প নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। এ অবস্থায় এনবিআরের আন্দোলন বিদেশি ক্রেতাদের মাঝে যে পুনরায় ইমেজ সংকট সৃষ্টি করবে, তা বলাই বাহুল্য। তাই আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট স্থবিরতা ও চলমান সংকট দ্রুততার সঙ্গে সমাধান করা জরুরি বলে মনে করি আমরা। রাজনৈতিক পট পরিবর্তন, গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট ও ব্যাংকের উচ্চ সুদের পরও বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা টিকে থাকার চেষ্টা করছেন। এ অবস্থায় দ্রুত সংকট সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ হিসাবে উভয় পক্ষকে আলোচনার টেবিলকেই প্রাধান্য দেওয়া বাঞ্ছনীয়। এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাদের দাবির যৌক্তিকতা বিচার-বিবেচনা করে সরকার আলোচনার মাধ্যমে আন্দোলন থেকে তাদের ফিরিয়ে কাজের ক্ষেত্রে ফিরিয়ে আনলে দেশের অর্থনীতির জন্যই তা মঙ্গলজনক হবে। আবার যারা আন্দোলন করছেন, তাদেরও খেয়াল রাখতে হবে, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি করে দাবি আদায় যৌক্তিক পথ নয়। দেশ ও জনগণের কল্যাণে যারা আত্মনিবেদিত, তাদের সবার আগে সেই বিষয়টিকেই প্রাধান্য দিতে হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে সৎ, যোগ্য ও কর্মঠ অফিসার যারা আছেন, তাদের ক্যারিয়ার প্ল্যানিং কী হবে, সেটা তাদের ন্যায্য প্রশ্ন বটে। সেক্ষেত্রে চলমান আন্দোলন বন্ধ করতে এ সংক্রান্ত মধ্যস্থতায় সরকার ব্যবসায়ী নেতাদের ডাকতে পারেন। মোট কথা, এনবিআরের চলমান এ আন্দোলনে দেশের অর্থনীতির যে ক্ষতি হচ্ছে, তা থেকে বের হয়ে আসাটাই দরকার। আলোচনার মাধ্যমে চলমান সংকট সমাধানে উভয় পক্ষ আন্তরিকতার পরিচয় দেবে, এটাই প্রত্যাশা।
