এনবিআরের কর্মসূচি প্রত্যাহার, দাবি আদায়ে দেশের স্বার্থকে বিবেচনায় নিতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আন্দোলনরত এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ অবশেষে ব্যবসায়ীদের মধ্যস্থতায় ‘শাটডাউন’ ও ‘মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছে। দেশের অর্থনীতির জন্য এটি স্বস্তির খবর, সন্দেহ নেই। কারণ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মসূচির কারণে স্থবির হয়ে পড়েছিল বন্দরে কাঁচামাল খালাসের কাজ। বৃষ্টিতে ভিজে, রোদে পুড়ে মালামাল তো নষ্ট হয়েছেই; ফেলে রাখার কারণে ব্যবসায়ীদের বন্দরে ডেমারেজ গুনতে হয়েছে অন্তত চারগুণ। এ অবস্থায় দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী নেতারা ব্যবসা-বাণিজ্য সচল রাখতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় রোববার সন্ধ্যায় সরকার হার্ডলাইনে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত আন্দোলনকারীরা তাদের কর্মসূচি থেকে পিছু হটতে বাধ্য হন।
জানা যায়, ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে আলোচনা শেষে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। এর আগে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এনবিআরের আওতাধীন সব শ্রেণির চাকরিকে অত্যাবশ্যকীয় সার্ভিস ঘোষণার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়; যা অত্যাবশ্যক পরিষেবা আইন ২০২৩-এর অধীনে কার্যকর হবে। এ আইনের বিধান অনুযায়ী, সরকারের নির্দেশনা উপেক্ষা করে চাকরিরত কোনো ব্যক্তি ধর্মঘট শুরু করতে বা চলমান রাখতে পারবেন না। এটি অমান্য করলে দায়ী ব্যক্তি ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। সরকারের সঙ্গে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ওই বৈঠকে অংশ নেওয়া ব্যবসায়ী নেতারাও চলমান নেতিবাচক পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেন।
আন্দোলন নয়, উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমেই যে সমাধান সম্ভব, রোববারের ঘটনা আবারও সেটি প্রমাণ করল। দেশের আমদানি-রপ্তানি ও সাপ্লাই চেইন সচল রাখা তথা অর্থনীতির বৃহত্তর স্বার্থে এবং জনগণের স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের কমপ্লিট শাটডাউন প্রত্যাহারের এ সিদ্ধান্তকে আমরা সাধুবাদ জানাই। গত দুই মাস ধরে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রপ্তানি এবং রাজস্ব আদায় কার্যক্রমে যে ছেদ পড়েছিল, এর মাধ্যমে তার অবসান ঘটবে বলে আমাদের বিশ্বাস। সরকারের হয়ে যারা কাজ করছেন, আমরা আশা করব, কোনো দাবি-দাওয়া জানানোর ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে তারা দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দেবেন। আবার দাবি পেশ করার কারণে কারও বিরুদ্ধে যেন কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে হয়রানিমূলক পদক্ষেপ নেওয়া না হয়, সেদিকেও নজর রাখতে হবে। জনগণের স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে সব পক্ষ স্বীয় দায়িত্ব পালনে আন্তরিক হবে, এটাই প্রত্যাশা।
