অধরা জুলাই আন্দোলনের অস্ত্রধারীরা
এদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২১ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
জুলাই আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচার গুলিবর্ষণ যারা করেছিল, তাদের সবাইকে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে কিনা, এ প্রশ্ন রয়েই গেছে। যদিও শনাক্তের কাজ চলছে; কিন্তু আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়াটি যে দ্রুততর হয়নি, তা বলাই বাহুল্য। রোববার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ, দেশের বিভিন্ন স্থানের মতো চট্টগ্রামেও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করা অন্তত অর্ধশত অস্ত্রধারীর মধ্যে ৪৬ জনকে শনাক্ত করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। সিএমপির ক্রাইম ডিভিশন ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর এই অস্ত্রধারীদের চিহ্নিত করে। এর মধ্যে বিভিন্ন সময়ের অভিযানে র্যাব এবং পুলিশ মিলে ১৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে বাকি ২৭ জনই রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এছাড়া গ্রেফতার হওয়া অস্ত্রধারীদের কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা গেলেও তাদের ব্যবহৃত বাকি অস্ত্রগুলো উদ্ধার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এছাড়া চট্টগ্রামের ৮টি থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্রের এখনো ১৫৬টির সন্ধান মিলছে না। সব মিলিয়ে এখনো পর্যন্ত অস্ত্রের ঝনঝনানি রয়েই গেছে। রয়েছে অপ্রীতিকর ঘটনা সৃষ্টির শঙ্কাও।
সূত্র জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নগরীর ষোলশহর, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট ও নিউমার্কেট এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি মহানগর ছাত্রলীগ (বর্তমানে নিষিদ্ধ), যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কিছু নেতাকর্মীকে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে গুলি করতে দেখা যায়। সহিংসতার ঘটনায় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা ছবি ও ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ৪৬ জনের পরিচয় নিশ্চিত হয়েছে সিএমপি। এ বিষয়ে সিএমপির এডিসি পিআর জানিয়েছেন, অস্ত্র উদ্ধারের পাশাপাশি বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। চিহ্নিতরা গ্রেফতার এড়াতে শহর ছেড়ে আÍগোপনে থাকলেও কেউ রেহাই পাবে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জুলাই আন্দোলনে যারা অস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থী বা সাধারণ মানুষের ওপর হামলা করেছিল, তারা গ্রেফতার না হওয়ায় জনমনে আতঙ্ক রয়েছে। হয়তো তারা এখন গা-ঢাকা দিয়েছে; কিন্তু যারা থানা থেকে অস্ত্র লুট করেছে, এখনো তারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অস্ত্রের ঝনঝনানি বন্ধে পুলিশকে আরও আন্তরিক হওয়ার পরামর্শও দিচ্ছেন তারা। বিগত সরকার পতনের পর পুলিশের মধ্যে মনোবলের যে ঘাটতি ছিল, পুনরায় তা ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা চলছে। এ কথা সত্য, রাজধানীসহ অন্যান্য স্থানের মতো চট্টগ্রামেও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় সদস্য বিগত সরকারের পক্ষে নৃশংসতায় যোগ দিয়েছিল। পরিপূর্ণভাবে মনোবল ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে যারা অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদেরও চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা জরুরি। কারণ, অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মনোবল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি। জনগণের প্রত্যাশা, সেই নির্বাচনটি সময়মতো এবং সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন হবে। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গঠিত সরকার যথাযথ সংস্কারের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্রের ভিত সুসংহত করবে, যাতে দেশে আর কখনো স্বৈরাচারের জন্ম না হয়। সেই সঙ্গে জুলাই আন্দোলন প্রতিরোধে যারা হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ছিল, তাদের বিচার নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। বস্তুত জুলাই অভ্যুত্থানের লক্ষ্য যত দ্রুত অর্জন হবে, ততই দেশবাসীর মঙ্গল।
