Logo
Logo
×

ফিচার

যত্নে থাকুক আপনার সন্তান

Icon

গাজী মুনছুর আজিজ

প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কখনো মেঘ, কখনো বৃষ্টি, আবার কখনো নীল আকাশ। আর এমন আবহাওয়া মানেই শরৎ ঋতু। অবশ্য এরই মধ্যে শরৎ ঋতুর প্রথম মাস ভাদ্র প্রায় শেষের পথে। এরপর আসছে আশ্বিন মাস। আর ঋতু পরিবর্তনের এ সময়ে নানারকম রোগ-বালাই ধরা দেয় আমাদের শরীরে। বিশেষ করে শিশুদের শরীরে এ সময়ে নানা ধরনের অসুখ দেখা দেয়। ফলে এ সময়ে শিশুদের বাড়তি যত্নের প্রয়োজন হয়।

মূলত শরতের এ সময় কখনো দেখা যায় অনেক গরম, আবার কখনো ঠান্ডা। ফলে হঠাৎ করে আবহাওয়ার এ পরিবর্তনের হাওয়ায় রোগ-বালাইও ধরা দেয় শিশুদের শরীরে। বিশেষ করে এ সময়ে জ্বর-সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হয় অনেক শিশু। অন্যদিকে দেশে ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাবও ব্যাপকভাবে বেড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী চলতি মাসে এখন (৮ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত ১২ জন ডেঙ্গুতে মারা গেছেন। এছাড়া চলতি বছর (৮ সেপ্টেম্বর) এ পর্যন্ত ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৫ হাজার ২০৭ জন। এতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৯৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া রোগীদের মধ্যে ৫১ দশমিক ৬ শতাংশ নারী। আর পুরুষ ৪৮ দশমিক ৪ শতাংশ। ফলে সব ধরনের অসুস্থতা থেকেই এখন শিশুদের সুরক্ষিত রাখতে হবে। আর এজন্য সতর্কতার বিকল্প নেই।

মেডিসিন ও হৃদরোগের চিকিৎসক এবং চাঁদপুর ম্যাটসের লেকচারার ডা. পীযূষ কান্তি বড়ুয়া জানান, সাধারণত আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় কিছু কিছু সমস্যা মানুষের শরীরে দেখা দেয়। বিশেষ করে শিশুদের বেলায় এটা বেশি লক্ষণীয়। যেমন-জ্বর, সর্দি, কাশি ইত্যাদি। তবে অভিভাবকরা একটু সতর্ক হলেই এ সমস্যা থেকে শিশুকে রক্ষা করা সহজ।

যেসব কাজ করতে হবে : শিশুদের নিয়ে বাইরে বের হলে অবশ্যই হালকা রঙের সুতি কাপড় পরাতে হবে। সঙ্গে রুমাল রাখুন। যেন ঘাম বা বৃষ্টি মোছা যায়। ছাতা ও রেইনকোটও সঙ্গে রাখুন। যেন হঠাৎ বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে পারেন।

এ সময়ে এলার্জিজনিত রোগ-বালাই বেশি দেখা দেয়। বিশেষ করে ঘরে-বাইরের ধুলাবালি থেকে এলার্জিজনিত রোগ বেশি হয়ে থাকে। সেজন্য ঘর-বাড়ি সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন রাখার চেষ্টা করুন। যে কোনো জিনিস ব্যবহার করার পর ধুয়ে ফেলুন। আর শিশুদের নিয়ে বাইরে বের হলে তাকে মাস্ক পরাতে অভ্যস্ত করুন। সম্ভব হলে শিশুর কোনো খাবার বা পরিবেশে এলার্জি আছে কিনা তা পরীক্ষা করে জেনে নিন।

শরীরের রোগ-জীবাণু দূর করতে গোসলের বিকল্প নেই। তাই শিশুকে নিয়মিত গোসল করান এবং গোসলের সময়সূচি ঠিক রাখুন। অর্থাৎ প্রতিদিনই একই সময়ে গোসল করাতে পারলে ভালো। সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টার মধ্যে শিশুদের গোসল করানো উচিত। অন্যদিকে আবহাওয়া একটু ঠান্ডা হলেই গোসল বাদ দেওয়া ঠিক নয়। অবশ্য সেক্ষেত্রে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া এ সময়ে শিশুরা বাইরে থেকে ফিরেই গোসল করতে চাইলেই গোসল করতে দেওয়া যাবে না। আগে শরীর ঠান্ডা হতে দিতে হবে। ফ্যানের নিচে কিছুক্ষণ বসে গা জুড়াতে হবে। শিশুর শরীর স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ফিরলে এরপর গোসল করাতে হবে। গোসলে নিয়মিত সাবান ব্যবহার করতে হবে। গোসল শেষে খুব ভালো করে গা-মাথা ও চুল মুছে দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন চুলের গোড়ায় পানি না থাকে।

শিশুদের বেলায় ঘুমানোর সময় আরামদায়ক পোশাক ব্যবহার করা উচিত। বিশেষ করে সুতি বা লিনেন জাতীয় হালকা রঙের ঢিলে ডালা পোশাক ব্যবহার করাই ভালো। এছাড়া শরতের এ সময়ে ভোরের দিকে হালকা ঠান্ডা লাগে। সেজন্য প্রয়োজনীয় কাঁথা বা চাদরের ব্যবস্থা রাখুন।

শিশুর রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সুষম খাবারের বিকল্প নেই। সেজন্য শিশুর খাদ্যতালিকায় সুষম খাবার রাখা জরুরি। বিশেষ করে দুধ, ডিম, মাছ-মাংস, শাকসবজি, ফলমূল নিয়ম করে খাওয়াতে হবে। শিশু এসব খাবার খেতে না চাইলে বিকল্প উপায়ে খাওয়াতে হবে। সঙ্গে পরিমাণমতো পানি খাওয়ানো খুবই জরুরি। সম্ভব হলে বিভিন্ন ফলের জুস খাওয়াতে পারেন। বিশেষ করে বাইরে থেকে ফিরলে লেবু বা বিভিন্ন ফলের জুস খাওয়াতে পারেন। এছাড়া ভিটামিন ‘সি’ জাতীয় ফল বেশি বেশি খাওয়ানো উচিত।

শিশুরা বাইরে আইসক্রিম বা কোল্ড ড্রিংকস খেতে চায়। একটু গরমে এসব ভালো লাগলেও মূলত এতে কোনো উপকার নেই। এছাড়া অনেক শিশু বাসায় ফিরে ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি খায়। এটিও শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। গরম থেকে এসেই বেশি ঠান্ডা পানি খাওয়া যাবে না। এতে গরম ও ঠান্ডা তাপমাত্রার বেশি পার্থক্যের কারণে শিশুদের ঠান্ডায় ভুগতে হতে পারে। বাইরে থেকে ফিরলেই শিশুর হাত ধোয়াতে হবে। যাতে শিশুকে জীবাণু আক্রমণ করতে না পারে।

শিশুর হঠাৎ জ্বর, সর্দি বা কাশি বা অন্য কিছু হলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে। এখন বেশিরভাগ জ্বরই ভাইরাসজনিত। নানা ধরনের ভাইরাসের কারণে জ্বর হতে পারে। সব ভাইরাস জ্বরের লক্ষণ এক নয়। ভাইরাস জ্বরে শিশুদের সাধারণত সর্দি-কাশি, গলা, মাথা ও শরীরে ব্যথা দেখা দেয়। ঋতু পরিবর্তনের এ সময়টায় প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় বলে একে সিজনাল ফ্লু বলে।

অন্যদিকে দুগ্ধপোষ্য শিশুদের ঘন ঘন মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। ঠান্ডায় শিশুর নাক বন্ধ থাকলে নরসল দিয়ে পরিষ্কার করে দিতে হবে। জ্বর-ঠান্ডায় শিশুর হাঁচি হাতে লাগলে তখনই সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। সাধারণ জ্বর হলে শিশুকে বিশ্রামে রাখতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধ খাওয়াতে হবে। কুসুম গরম পানিতে গামছা ভিজিয়ে গা-মাথা মুছে দিলে আরাম পাবে। জ্বরে ঠান্ডা পানি, বরফ পানি বা মাথায় ক্রমাগত পানি ঢালার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজনে ঘরের ফ্যান ছেড়ে রাখতে পারেন। জ্বরের শিশুকে খাবার খাওয়াতে জোর করা যাবে না। এতে বমি হতে পারে।

বিরূপ আবহাওয়ার কারণে হওয়া শিশুদের ঠান্ডা জ্বর সাধারণত কয়েক দিনেই সেরে যায়। এ নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। তবে জ্বরের তীব্রতা বৃদ্ধি, তিন দিনের বেশি থাকা, খাবারে অনীহা হলে শিশুকে নিয়ে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে। এখন ডেঙ্গুর সময়। তাই জ্বর হলে অবহেলা করা যাবে না।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম