Logo
Logo
×

ফিচার

ভিটামিনের অভাব কীভাবে বুঝবেন

Icon

আখতারুন নাহার আলো

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ভিটামিনের অভাব কীভাবে বুঝবেন

ভিটামিনের অভাব কীভাবে বুঝবেন

খাদ্য উপাদানগুলোর মধ্যে ভিটামিনযুক্ত খাবার রোগ প্রতিরোধে কাজে লাগে। ভিটামিন ওষুধ হিসাবে খাওয়ার প্রবণতা মানুষের মধ্যে বেশিই দেখা যায়। যদিও ভিটামিন আমাদের দেহে অপরিহার্য। ভিটামিনের অভাবে আমরা বেশ কিছু স্বাস্থ্য সমস্যায় পড়ে থাকি। যেমন-

* ভিটামিন ‘এ’

এর অভাবে চোখের সমস্যা দেখা দেয়। রাতকানা ও চোখের ভেতরটা শুকিয়ে যায়। অনেক বেশি অভাব হলে অন্ধত্বও দেখা দেয়। এছাড়া ত্বকের উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়। ক্ষুধামন্দা, ক্লান্তি, চুল ভেঙে যাওয়া, চুল পড়া, খাবারের ঘ্রাণ না পাওয়া, অ্যাকজিমা ইত্যাদি দেখা দেয়। চুল ও ত্বকের উজ্জ্বলতা হারায় বলে এ ভিটামিনকে ‘বিউটি ভিটামিনও’ বলা হয়।

▶ উৎস : গাজর, মিষ্টি কুমড়া, ডিমের কুসুম, গাঢ় সবুজ-হলুদ শাকসবজি, ফল, মাছের যকৃতের তেল, দুধ ও দুধজাত খাবার ও কলিজা।

* ভিটামিন ‘ডি’

এর অভাবে শরীরের অস্থি দুর্বলতা, ভঙ্গুরতা, দাঁতের সমস্যা, ওজন বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি দেখা যায়। প্রধান অসুস্থতার মধ্যে শিশুদের রিকেট অর্থাৎ হাত-পায়ের হাড় দুর্বল ও বাঁকা হয়ে যেতে দেখা যায়। বড়দের অস্টিওম্যালাশিয়া, অস্ট্রিওপেনিয়া, অস্ট্রিওআর্থ্রাইটিস দেখা দেয়। এছাড়া ভিটামিন ‘ডি’-এর অভাবে পেশির দুর্বলতা অর্থাৎ ক্লান্তি, দাঁতের খারাপ গঠন, পেট বড় হয়ে যাওয়া, মাথার খুলি বড় হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।

▶ উৎস : ডিমের কুসুম, মাছের যকৃতের তেল, সমুদ্রের মাছ, দুধ, মাখন, বনস্পতি। এছাড়া সূর্যরশ্মি ভিটামিন ‘ডি’র অন্যতম উৎস।

* ভিটামিন ‘কে’

এর অভাবে রক্ত জমাট বাধার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। নাক থেকে রক্ত পড়া এবং শিশু ও রুগ্ন ব্যক্তি যাদের খাবার ঠিকমতো শোষণ হয় না, তাদের দেহে ভিটামিন কে-এর অভাব দেখা যায়।

▶ উৎস : সবুজ পাতা জাতীয় সবজি, টমেটো, ফুলকপি, সূর্যমুখীর তেল, সয়াবিন তেল, মাছের তেল, ডিমের কুসুম।

* ভিটামিন ‘বি’ কমপ্লেক্স

দেহে ভিটামিন ‘বি১’ বা থায়ামিনের অভাবে বেরিবেরি নামক রোগ হয়ে থাকে। এতে রোগী স্নায়ুবিক দুর্বলতার জন্য হাঁটতে বা দাঁড়াতে পারে না। হাত ও পায়ের আঙুল ঝিনঝিন করে। যন্ত্রণাবোধ হয়। পায়ের পাতায় পানি আসে। হাত-পা ও পেট ফুলে যায়। হৃৎপিণ্ডে পানি আসে বলে শ্বাসকষ্ট হয়। এদিকে গর্ভবতী মায়ের যদি থায়ামিনের অভাব হয় তাহলে শিশুর দেহে পানি আসে, কোষ্ঠবদ্ধতা হয়, হৃৎপিণ্ড বেড়ে যায়। এছাড়া ক্ষুদামন্দা, হজমের গোলমাল, শ্রবণশক্তি কমে যাওয়া, মাংসপেশির খিঁচুনি হতে পারে।

▶ উৎস : ভুসিযুক্ত আটা, লাল চাল, সয়াবিন, ওটস, চিনাবাদাম, সবজি, ডিমের কুসুম, মাছ, দুধ, কলিজা।

ভিটামিন ‘বি২’ বা রাইবোফ্লাভিন : দেহে রাইবোফ্লাভিনের অভাব হলে ঠোঁটের কোণে ঘা, মুখ গহ্বরে ঘা, জিহ্বা ফুলে ব্যথা হওয়া, ত্বক শুকিয়ে খসখসে হয়ে যাওয়া, চোখে প্রদাহ হয়ে পানি পড়া, চোখের রং লাল হয়ে ফুলে যায়। এছাড়া ক্রমাগত ভিটামিন ‘বি২’-এর অভাবে বয়সের তুলনায় বাচ্চাদের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।

▶ উৎস : দুধ, দই, পনির, কলিজা, শাক, মাছ, ডিম, বাদাম, শিমের বিচি, গরুর দুধের চেয়ে মহিষের দুধের রাইবোফ্লাভিন বেশি থাকে।

প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড : এটি ভিটামিন ‘বি’ গ্রুপেরই ভিটামিন। এর অভাবে ক্লান্তি, মাথা ধরা, ঘুমের ব্যাঘাত, বমি ভাব, পেশির খিঁচুনি, হাত পা ঝিনঝিন করে অবশ বোধ হওয়া, পা ও হাতের তালু জ্বালা করা ইত্যাদি হয়ে থাকে। এছাড়া হজমের গোলমাল ও প্যান্টোথেনিক অ্যাডিসের অভাবে হয়ে থাকে।

▶ উৎস : কলিজা, ডিমের কুসুম, ননীবিহীন দুধের পাউডার, চর্বিহীন মাংস, গরুর মাংস, পনির, ভুট্টা, ইস্ট, শিমের বিচি, ডাল, মিষ্টি আলু, কিশমিশ, বাঙ্গি, মটরশুটি।

নায়াসিন : দেহে নায়াসিনের অভাবে ত্বক, পরিপাকতন্ত্র এবং স্নায়ুকোষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর অভাবে ত্বকে লালবর্ণ ফুসকুড়ি উঠে। ফুসকুড়ির জন্য চুলকানি, জ্বালা করা এবং পরে ত্বক কালচে বর্ণ হয়ে যায়। এতে ডায়রিয়া ও মানসিক সমস্যা যেমন-অবসাদ, দুশ্চিন্তা, মতিভ্রম, উত্তেজনা ইত্যাদি দেখা যায়। আবার খাবারে ক্রমাগত নায়াসিনের অভাব হলে নিশ্বাসে দুর্গন্ধ দেখা যায়।

▶ উৎস : কলিজা, মাংস, মাছ, পোল্ট্রির মাংস, সম্পূর্ণ শস্য, ডাল, চিনাবাদাম, মটরশুটি।

ভিটামিন ‘বি১২’ : এই ভিটামিনের অভাবে পার্নিসিয়াস এনিমিয়া হয়। এছাড়া মুখে ঘা, অরুচি, পরিপাকে গোলযোগ, স্নায়ুবিক দুর্বলতা এবং চলাফেরায় অসুবিধা হয়। ভিটামিন ‘বি১২’-এর অভাবে রক্তকণিকা আকারে বড় হয় কিন্তু সংখ্যায় কমে যায়। পার্নিসিয়াস এনিমিয়া হলে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।

▶ উৎস : শুধু প্রাণিজ উৎস থেকেই ভিটামিন ‘বি১২’ পাওয়া যায়। কলিজা, গরুর মাংস, ডিম, দুধ, পনির, মাছ এই ভিটামিনের উৎস।

* ভিটামিন ‘সি’

এই ভিটামিনের অভাবে স্কার্ভি নামক রোগ হয়ে থাকে। এ রোগে বিভিন্ন লক্ষণ প্রকাশ পায়। যেমন-ত্বকের বাইরে ও ভেতরে রক্তক্ষরণ হয়, দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়ে, অস্থি দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়, ত্বক খসখসে ও ঘা হয়, ক্ষত শুকাতে দেরি হয়, লোমকূপের গোড়ায় রক্ত ক্ষরণ দেখা যায়। দাঁতের গোড়া থেকে রক্ত পড়ে, অকালে দাঁত পড়েও যেতে পারে। ভিটামিন ‘সি’-এর অভাবে শিশুদের বৃদ্ধি ব্যাবহত হয়, ওজন বাড়ে না, খাওয়ায় অরুচি হয়, অস্থিরতা বাড়ে। শিশুর মেজাজ খিটখিটে হয়। এছাড়া ক্লান্তি অনুভূত হওয়া, হজমের গোলমাল, চুল পড়া সমস্যা হতে পারে। এর অভাবে ফলিক অ্যাসিডের বিঘ্ন ঘটার কারণে রক্তস্বল্পতা হয়।

▶ উৎস : সবুজ শাকসবজি, জাম, টমেটো, বাঙ্গি, তরমুজ, পেয়ারা, আমড়া, আমলকী, বাতাবি লেবু, কমলা, মালটা, আনারস, ফুলকপি, বাঁধাকপি, আলু, কাঁচা মরিচ, শজনে ডাঁটা, ক্যাপসিকাম, শালগম পাতা, মুলাশাক, শজনে পাতা, ধনিয়াপাতা।

* প্রতিকার

যদি এমন হয় সবসময় ক্লান্ত লাগে তাহলে খাবারের ফাঁকে ফাঁকে গ্রিন টি, জিনসেং, আঙুর কিংবা শরবত পান করতে হবে। হজমের গোলমাল হলে খাবারের পর এক গ্লাস বাঁধা কপির জুস পান করা ভালো। চুলের উজ্জ্বলতা কমে গেলে বা চুল ভেঙে গেলে প্রতি বেলায় খাবারের সঙ্গে ভিটামিন ‘সি’ খাওয়া ভালো। চুল পড়া রোধ করতে হলে প্রতিদিন ২টি আমলকী খাওয়া ভালো। অনিদ্রা হলে রাতে ঘুমানোর আগে এক কাপ দুধ খাওয়া ভালো। যদি দেখা যায় শিশুর বয়স অনুপাতে বাড়ছে না, তাহলে তাকে অবশ্যই সুষম খাবার দিতে হবে। অ্যাকজিমা হলে evening primrose oil 500 mg দিনে ২ বার ৮-১২ সপ্তাহ দিলে উপকার পাওয়া যাবে।

সর্বোপরি যেসব স্বাস্থ্য সমস্যা যে ভিটামিনের অভাবে হয়, সেসব ভিটামিনযুক্ত খাবারগুলো যদি প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখা যায় তাহলে সমস্যার সমাধান দ্রুত হবে।

লেখক : চিফ নিউট্রিশন অফিসার ও বিভাগীয় প্রধান (অব.), বারডেম। সভাপতি, ডায়াবেটিস নিউট্রিশনিস্ট সোসাইটি অব বাংলাদেশ, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শ্যামলী ও অ্যাডভান্স হাসপাতাল, ঢাকা।

ভিটামিন

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম