বিশ্লেষকদের অভিমত
ডাকসুর ফল প্রভাব ফেলবে জাতীয় রাজনীতিতেও
নির্বাচিত ভিপি-জিএসদের দলও জাতীয় নির্বাচনে ভোটের জরিপে সুবিধা নেবে
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন ভোটের রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। কেউ কেউ দ্বিমত পোষণ করলেও বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন নিঃসন্দেহে ডাকসু নির্বাচনের ফলাফলের প্রভাব আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিশেষ ছায়া ফেলবে। বিশেষ করে সচেতন শিক্ষিত মহলের বিশ্লেষণে নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হবে। এছাড়া ছাত্র সংসদ নির্বাচনে যারা ভোটার, তারা জাতীয় নির্বাচনেরও ভোটার। সংগত কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রাচ্যের অক্সোফোর্ডখ্যাত এ বিদ্যাপীঠে যে দল-মতের ভিপি-জিএসরা নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পাবেন, তাদের নীতি-আদর্শের দলও জাতীয় নির্বাচনে ভোটের জরিপে সুবিধা নেবে।
জানতে চাইলে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা আমার দৃষ্টিতে মোটা দাগে দুটি। একটা হচ্ছে-দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ইনসাফ ও নায্যতা, এগুলো প্রতিষ্ঠা করা। দ্বিতীয়ত, ভারতীয় আধিপত্যবাদ থেকে বাংলাদেশের মুক্তি। এখন এই দুটি চেতনা যেসব শিক্ষার্থী ধারণ করবে তারা রাজনৈতিকভাবে একটা সুবিধা পাবে। অর্থাৎ এই সময়ে অনেক সমর্থক তাদের পক্ষে যাবে। আর যারা এই চেতনা ধারণ করতে পারবে না, আমার মনে হয় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
তিনি আরও বলেন, এই নির্বাচনে অচিন্তনীয় কিছু ঘটে গেলেও অবাক হওয়ার মতো নয়। কারণ আমরা চিরাচরিতভাবে শক্তিশালী মনে করি, তারা সেই শক্ত অবস্থান ধরে রাখতে পারবে কিনা সেটা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তাছাড়া ডাকসু নির্বাচনে আরও বিভিন্ন ফ্যাক্টর কাজ করবে। যেমন-মেয়েদের ভোট ও জগন্নাথ হলের ভোট। এছাড়া নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সমর্থকদের ভোটও কিছুটা প্রভাব ফেলবে। তবে আমার কেন যেন মনে হচ্ছে, আমাদের চিন্তা ও কল্পনার বাইরে কিছু ঘটে যেতে পারে। ফলে এবারের নির্বাচনের ফলাফল প্রেডিক্ট করা কঠিন। যথেষ্ট লড়াই হবে, এটা পরিষ্কার।
জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব প্রসঙ্গে ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, ডাকসুতে কারা জয়লাভ করল, সেটা জাতীয় রাজনীতিতে একটা ছায়া বা একটা প্রভাব তো অবশ্যই বিস্তার করবে এবং সেটা করাটাই স্বাভাবিক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, প্রার্থী যারা হয়েছেন তাদের অনেকেই জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ছিলেন। আন্দোলন করেছেন। ফলে তাদের দেখলেই বোঝা যাচ্ছে, এই নির্বাচনে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রভাব রয়েছে। এছাড়া ডাকসু নির্বাচনে যারা ভোটার আছেন, তারাও জুলাই আন্দোলনে সরাসরি অংশগ্রহণ করছেন। তাদেরও জুলাই নিয়ে একটা অভিমত থাকবে। ফলে এবারের নির্বাচনে জুলাইয়ের একটা প্রভাব তো থাকবেই।
তবে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডাকসু নির্বাচনের প্রভাব জাতীয় নির্বাচনে পড়ার কোনো সুযোগ তিনি অন্তত দেখছেন না। তিনি বলেন, দেশের মানুষ এখনও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মার্কা দেখে ভোট দেয়। কাজেই ডাকসু নির্বাচনের ফলাফল কোনোভাবেই জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে না।
এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. জাহেদ উর রহমান বলেন, বহু বছর পর একটি গুরুত্বপূর্ণ ও তুলনামূলকভাবে নিরপেক্ষ ডাকসু নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এবারের ডাকসু নির্বাচনের গুরুত্ব নিয়ে তিনি বলেন, এটি শুধু বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের নির্বাচন নয়, বরং জাতীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে এর প্রতিফলনও হতে পারে। জাহেদ উর রহমান আরও বলেন, ডাকসু নিয়ে অনেকেই বাড়াবাড়ি রকম গুরুত্ব আরোপ করেন, আবার কেউ একেবারে অবহেলা করেন। আসলে এটি বাংলাদেশের শহুরে মধ্যবিত্ত ও শিক্ষিত সমাজে গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে তেমন কোনো তাৎপর্য রাখে না।

