ভারতজুড়ে গণবিক্ষোভের শঙ্কা অমিত শাহের
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
তিন প্রতিবেশী দেশ-শ্রীলংকা, বাংলাদেশ ও নেপালে তরুণদের নেতৃত্বে গণবিক্ষোভের মুখে সরকার পতনের ঘটনায় বেশ উদ্বিগ্ন ভারতের নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার। এ ধরনের আন্দোলনের আশঙ্কায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পুলিশ গবেষণা ব্যুরোকে দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা কৌশল ঢেলে সাজাতে ৫০ বছরের অর্থাৎ ১৯৭৪ সাল থেকে হওয়া প্রতিটি বড় বিক্ষোভের গতিপ্রকৃতি ব্যাপকভাবে সমীক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন। নতুন একটি জাতীয় বিক্ষোভ-প্রতিরোধ নীতি তৈরির লক্ষ্যে বিক্ষোভের ধরন, অর্থের উৎস বের করা এবং ‘নেপথ্যের কারিগর’দের চিহ্নিত করতেই তিনি এ নির্দেশ দেন। খবর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে নয়াদিল্লিতে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর (আইবি) আয়োজনে দুদিনব্যাপী রুদ্ধদ্বার ‘ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্ট্র্যাটেজিস কনফারেন্স-২০২৫’-এ আগামীতে ‘স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর ব্যাপক আন্দোলন’ ঠেকানোর পদক্ষেপ হিসাবে অমিত শাহ ভারতের ব্যুরো অব পুলিশ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টকে (বিপিআরঅ্যান্ডডি) একটি ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর বা এসওপি’ তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন। এজন্য বিপিআরঅ্যান্ডডিকে ভারতের স্বাধীনতার পর, বিশেষ করে ১৯৭৪ সালের পরে সংঘটিত সব আন্দোলন গভীরভাবে অধ্যয়ন করতে বলা হয়েছে। এর মাধ্যমে আন্দোলনের কারণ, ‘আর্থিক দিক’, ‘চূড়ান্ত ফলাফল’ এবং ‘পর্দার অন্তরালের কুশিলব’দের বিশ্লেষণ করা যাবে।
ভারতের সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, ‘বিপিআরঅ্যান্ডডিকে বিশেষভাবে বলা হয়েছে এসব আন্দোলনের কারণ, ধরন এবং ফলাফল বিশ্লেষণ করতে, যাতে নেপথ্যের খেলোয়াড়দের চিহ্নিত করা যায়। এর মাধ্যমে একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর তৈরি করে ভবিষ্যতে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী দ্বারা সংগঠিত বড় আন্দোলন রোধ করা সম্ভব হবে।
অমিত শাহর এই নির্দেশনার পর, ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিপিআরঅ্যান্ডডির একটি দল গঠন করা হচ্ছে, যারা রাজ্য পুলিশ বিভাগগুলোর সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় সমন্বয় করবে। এর মধ্যে পুরোনো মামলার নথিপত্র এবং সেসব সম্পর্কে ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের (সিআইডি) প্রতিবেদন অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
আরেক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিপিআরঅ্যান্ডডিকে নির্দেশ দিয়েছেন তারা যেন বিভিন্ন বিক্ষোভে আর্থিক তদন্ত সংস্থা যেমন এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট (ইডি), ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট-ইন্ডিয়া (এফআইইউ-আইএনডি) এবং সেন্ট্রাল বোর্ড অব ডাইরেক্ট ট্যাক্সেসের (সিবিডিটি) ভূমিকা বিশ্লেষণ করে দেখে।
এছাড়া, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন নেটওয়ার্ক নির্মূল করার লক্ষ্যে, ইডি, এফআইইউ-আইএনডি এবং সিবিডিটিকেও এসওপি তৈরি করতে বলা হয়েছে। এই সংস্থাগুলো অজানা সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক শনাক্ত করতে, তাদের সংযোগ এবং পরিকল্পনা চিহ্নিত করতে আর্থিক অনিয়ম বিশ্লেষণ করবে। আরও জানা গেছে, অমিত শাহ বিপিআরঅ্যান্ডডিকে রাজ্য পুলিশ বিভাগগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে বিভিন্ন ধর্মীয় সমাবেশ নিয়েও গবেষণা পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে ‘পদদলিত হয়ে মৃত্যু’র মতো বিষয়গুলো বোঝা যায়। এর ভিত্তিতে সমাবেশ পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণের এসওপি তৈরি করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানিয়েছে, অমিত শাহ ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ), বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) এবং নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরোকে (এনসিবি) আলাদা কৌশল তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছেন। এই এসওপি খালিস্তানি উগ্রবাদ এবং পাঞ্জাবে সাধারণ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড মোকাবিলায় প্রযোজ্য হবে।
এ বিষয়ে আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে এমন একটি দল গঠন করতে হবে, যারা পাঞ্জাবসংক্রান্ত বিষয়গুলোর পটভূমি ভালোভাবে জানেন। যাতে বিভিন্ন সমস্যার মোকাবিলায় ভিন্ন ধরনের কৌশল তৈরি করা যায়।’ তিনি আরও বলেন, এনআইএর উচিত সন্ত্রাস-অপরাধ সংযোগের দেশীয় দিকগুলো ভেঙে ফেলার জন্য নতুন, উদ্ভাবনী কৌশল তৈরি করা, যার মধ্যে জেল থেকে নেটওয়ার্ক পরিচালনা প্রতিহত করতে সেই অপরাধীদের অন্য জেলাগুলোতে স্থানান্তর করাও অন্তর্ভুক্ত।
