Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

বিশ্বনেতাদের প্রধান উপদেষ্টা

আগামী নির্বাচন হবে গণতন্ত্রের নতুন ভিত্তি

মুজিব মাসুদ

মুজিব মাসুদ

প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আগামী নির্বাচন হবে গণতন্ত্রের নতুন ভিত্তি

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিউইয়র্কে একাধিক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক ও আলোচনায় অংশ নিয়েছেন। এ সময় তিনি দেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তর, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, বৈশ্বিক স্বাস্থ্য, সামাজিক উদ্যোগ, ক্রীড়া, শরণার্থী সংকট এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) বাস্তবায়নে বিভিন্ন দেশের নেতা ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। মঙ্গলবার নিউইয়র্কে প্যারিসের মেয়র অ্যানে হিদালগোর সঙ্গে বৈঠকে ড. ইউনূস বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে সংস্কার কার্যক্রম, ক্রীড়া ও সামাজিক ব্যবসা এবং বৈশ্বিক শরণার্থী সংকট বিশেষ করে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচন শুধু একটি নির্বাচন নয়, এটি দেশের গণতন্ত্রে নতুন যুগের সূচনা করবে।’ মেয়র হিদালগো সংকটময় সময়ে তার নেতৃত্বে আস্থা প্রকাশ করে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য তহবিল বৃদ্ধির আহ্বান জানান।

এ সময় দুই নেতা বাংলাদেশের আসন্ন সাধারণ নির্বাচন, অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে চলমান সংস্কার কার্যক্রম, ক্রীড়া ও অলিম্পিকে সামাজিক ব্যবসার সম্ভাবনা এবং বৈশ্বিক শরণার্থী সংকট, বিশেষ করে রোহিঙ্গা মানবিক সংকট সম্পর্কে ব্যাপক মতবিনিময় করেন। এ সময় অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক রূপান্তরের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। আগামী সাধারণ নির্বাচন ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে একটি ভিত্তিমূলক ঘটনা হবে, যা দেশের গণতন্ত্রকে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে নেবে। অধ্যাপক ইউনূস প্যারিস ২০২৪ অলিম্পিককে বৃহত্তম সামাজিক ব্যবসায় রূপান্তরে নেতৃত্ব দেন। প্রধান উপদেষ্টা ভবিষ্যতে অনুষ্ঠিত সব অলিম্পিক বিশেষত আসন্ন লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিক কার্বন নিরপেক্ষ করার ওপর জোর দেন। মেয়র হিদালগো এই সংকটময় সময়ে অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বের প্রতি পূর্ণ আস্থা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি আপনার নেতৃত্বকে গভীরভাবে সম্মান করি। আপনি অসাধারণ কাজ করেছেন এবং আপনার অঙ্গীকার মানবতার জন্য এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।’

উভয় নেতা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য তহবিল বৃদ্ধির জরুরি প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বিশেষ করে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে অবস্থিত শরণার্থী শিবিরে বসবাসরত এক মিলিয়নের বেশি মানুষের জীবনমান উন্নয়নের আহ্বান জানান। মেয়র এ সময় আশা প্রকাশ করেন যে, একদিন রোহিঙ্গারা নিরাপদ ও মর্যাদাসহ তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারবেন।

অধ্যাপক ইউনূস উল্লেখ করেন, ‘জাতিসংঘ আগামী সপ্তাহে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করছে, যার উদ্দেশ্য হলো বৈশ্বিক মনোযোগ পুনরুজ্জীবিত করা এবং এর একটি স্থায়ী সমাধান খোঁজা।’

তিনি মেয়র হিদালগোকে সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের জন্য আন্তরিক আমন্ত্রণ জানান, যা দুই দেশের মধ্যে মানবিক ও সামাজিক ব্যবসায়িক সহযোগিতাকে আরও শক্তিশালী করবে। বৈঠকে এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।

আরও কয়েকটি বৈঠকে ড. ইউনূস অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ, নেদারল্যান্ডসের রানি ম্যাক্সিমা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ড. তেদরস আধানোম গেব্রিয়াসিসসহ বিভিন্ন বিশ্বনেতার সঙ্গে আলোচনা করেন। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপে তিনি বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন হবে স্বচ্ছ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য, যেখানে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা থাকবেন। নেদারল্যান্ডসের রানির সঙ্গে আলোচনায় স্বাস্থ্যবিমা সম্প্রসারণ, পেনশন ব্যবস্থা ও মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বিশেষ উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তিনি প্রস্তাব করেন, সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে ওষুধশিল্প পুনর্গঠন করে উৎপাদিত টিকা সর্বদা সুলভ রাখতে হবে।

এছাড়া ড. ইউনূস বৈঠক করেছেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বঙ্গার সঙ্গে। বৈঠকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক রূপান্তর থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক সংস্কার, আঞ্চলিক সহযোগিতা ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অগ্রাধিকারমূলক নানা বিষয়ে আলোচনা হয়। প্রধান আলোচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল-আগামী ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন, গণতান্ত্রিক রূপান্তরের ধারা, রাজস্ব ও ব্যাংকিং খাতের কাঠামোগত সংস্কার, চট্টগ্রাম বন্দর আধুনিকায়ন, আঞ্চলিক অর্থনৈতিক একীকরণ এবং এশিয়ার তরুণ প্রজন্মের ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা। পাশাপাশি কয়েক বিলিয়ন ডলার চুরি হওয়া জাতীয় সম্পদ পুনরুদ্ধারের জরুরি প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা হয়।

অজয় বঙ্গা সাক্ষাৎকালে প্রফেসর ইউনূসের গত ১৪ মাসের নেতৃত্বের প্রশংসা করে বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় তার ভূমিকা প্রশংসনীয়। তিনি বাংলাদেশের সংস্কার প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে বিশ্বব্যাংকের অব্যাহত সহায়তার আশ্বাস দেন এবং বলেন, ‘বলিষ্ঠ সংস্কার ছাড়া টেকসই উচ্চ প্রবৃদ্ধি সম্ভব নয়।’

জবাবে প্রফেসর ইউনূস বিশ্বব্যাংকের অবিচল সহযোগিতার জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, জাতির ইতিহাসের এক সংকটময় সময়ে এ সহায়তা বাংলাদেশকে সঠিক পথে রাখছে। একই সঙ্গে তিনি বিশ্বব্যাংককে চুরি হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধারে সক্রিয় ভূমিকা রাখার পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দর আধুনিকীকরণ ও পুনর্গঠনে সহায়তা করার আহ্বান জানান।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরই এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চাবিকাঠি। আসুন আমরা একসঙ্গে এটির উন্নয়ন করি।’ প্রফেসর ইউনূস উল্লেখ করেন, নেপাল ও ভুটানসহ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যও একটি আধুনিক চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সরাসরি উপকৃত হবে। এর মাধ্যমে লাখো মানুষের নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং আঞ্চলিক সহযোগিতা নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে।

বৈঠকে অজয় বঙ্গা বাংলাদেশের ব্যাংক ও রাজস্ব খাতে কাঠামোগত সংস্কারের অপরিহার্যতা তুলে ধরে বলেন, এসব সংস্কারই আগামী দিনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে টেকসই ও শক্তিশালী ভিত্তি দেবে। উচ্চপর্যায়ের এ বৈঠকে জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী এবং এসডিজিবিষয়ক সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।

ট্রাম্পের সংবর্ধনায় ড. ইউনূস : যুক্তরাষ্ট্রের প্রসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মঙ্গলবার যোগ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় তিনি প্রেসডেন্ট ট্রাম্পকে সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। প্রসিডেন্ট ট্রাম্পের আমন্ত্রণে তিনি এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নেন। অনুষ্ঠানে ড. ইউনূস প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এবং বিশ্বের বিভিন্ন শীর্ষ নেতার সঙ্গে মতবিনিময় করেন। তাদের মধ্যে ছিলেন স্পেনের রাজা ষষ্ঠ ফিলিপে, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা, জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এবং ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে। এছাড়া তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ায় মার্কিন বিশেষ দূত সার্জিও গরের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম