Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

ফ্লোটিলার কর্মীদের ভয়াবহ নির্যাতন ইসরাইলের

গ্রেটাকে চুল ধরে টানা-হেঁচড়া

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

গ্রেটাকে চুল ধরে টানা-হেঁচড়া

ইসরাইলে জলবায়ু আন্দোলনের প্রতীক সুইডিশ পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গসহ গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা থেকে আটক কর্মীদের ভয়াবহ নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন বেশ কয়েকজন বিদেশি কর্মী। বন্দিশিবিরে গ্রেটাকে চুল ধরে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া, জোর করে ইসরাইলি পতাকায় চুমু খাওয়ানো, এমনকি শরীরে ইসরাইলি পতাকা জড়িয়ে তাকে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ করা হয়েছে। শনিবার ফ্লোটিলার ১৩৭ কর্মীকে টার্কিশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ বিমানে ইস্তাম্বুলে ফেরত পাঠায় ইসরাইল। তাদের মধ্যে ৩৬ জন তুরস্কের নাগরিক ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, মালয়েশিয়া, কুয়েত, সুইজারল্যান্ড, তিউনিশিয়া, লিবিয়া, জর্ডানসহ বিভিন্ন দেশের কর্মীরা ছিলেন। বিমানবন্দরে নেমেই ফ্লোটিলাকর্মীরা ইসরাইলের ভয়াবহ নির্যাতনের নানা অভিযোগ করেন। খবর এএফপি, আলজাজিরার।

তুরস্কের সাংবাদিক এরসিন চেলিক স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানান, তিনি নিজ চোখে দেখেছেন, থুনবার্গকে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ) মাটিতে ফেলে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে এবং জোর করে ইসরাইলের পতাকায় চুমু খাওয়াচ্ছে। মালয়েশিয়ার অধিকারকর্মী হাজওয়ানি হেলমি ও মার্কিন নাগরিক উইন্ডফিল্ড বিবারও একই অভিযোগ করেছেন। ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরে তারা বলেন, থুনবার্গকে ঠেলে সরানো হয় এবং পতাকা হাতে ঘোরানো হয়। হেলমি বলেন, এটি ছিল অত্যন্ত ভয়াবহ অভিজ্ঞতা। আমাদের সঙ্গে পশুর মতো আচরণ করা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, আটক কর্মীদের খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধ থেকে বঞ্চিত করা হয়। বিবার অভিযোগ করেন, থুনবার্গকে ‘ভয়াবহভাবে ব্যবহার করা হয়েছিল’ এবং ইসরাইলের কট্টর ডানপন্থি নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভিরের প্রবেশের সময় তাকে প্রচারণার হাতিয়ার বানানো হয়।

ইতালির সাংবাদিক লরেঞ্জো আগোস্তিনো বলেন, মাত্র ২২ বছরের এক সাহসী নারী গ্রেটা থুনবার্গকে অপমানজনকভাবে ইসরাইলের পতাকায় মুড়িয়ে ট্রফির মতো প্রদর্শন করা হয়েছে।

তুরস্কের টিভি উপস্থাপক ইকবাল গুরপিনার আরও বলেন, আমাদের সঙ্গে কুকুরের মতো আচরণ করা হয়েছিল। তিনদিন না খাইয়ে রাখা হয়েছে, খাবার পানিও দেয়নি, বাধ্য হয়ে টয়লেটের পানি খেতে হয়েছে। ভয়াবহ গরমের মধ্যে আমরা সবাই পুড়ে যাচ্ছিলাম। তিনি জানান, এই অগ্নিপরীক্ষা তাকে গাজায় নির্যাতন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দিয়েছে।

তুরস্কের আরেক কর্মী আয়সিন কানতোগ্লু জানান, তারা আটক কেন্দ্রে রক্তাক্ত দেওয়াল এবং আগের বন্দিদের লেখা বার্তা দেখেছেন। ‘মায়েদের নাম ও সন্তানদের নাম খোদাই করা ছিল দেওয়ালে। আমরা আসলে ফিলিস্তিনিদের দুর্দশার সামান্য অভিজ্ঞতা পেয়েছি,’ তিনি বলেন।

ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি জানিয়েছেন, ২৬ ইতালীয়কে ফেরত পাঠানো হয়েছে, তবে এখনো ইসরাইলি হেফাজতে ১৫ জন রয়েছেন। ইতালির সংসদ-সদস্য আর্তুরো স্কোত্তো বলেন, ‘আইনসম্মত কাজ করছিল ফ্লোটিলায় থাকা মানুষজন; অবৈধ কাজ করেছে তারা, যারা গাজায় সাহায্য পৌঁছাতে বাধা দিয়েছে।’

ইসরাইলি মানবাধিকার সংগঠন আদালাহ জানায়, আটক কর্মীদের হাত জিপ-টাই দিয়ে বেঁধে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাঁটু গেড়ে বসিয়ে রাখা হয়, ওষুধ দেওয়া হয়নি এবং আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগে বাধা দেওয়া হয়েছে।

তবে ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, আটক ব্যক্তিদের পানি, খাবার, টয়লেট এবং আইনগত সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

গত ১-২ অক্টোবর সুমুদ ফ্লোটিলার প্রায় ৪০টি জাহাজ জব্দ করে ইসরাইলি নৌবাহিনী, যাতে ৪৫০ জনেরও বেশি যাত্রী ছিলেন। গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার ওয়েবসাইট বলছে, বহরে ৪২টি জাহাজ ছিল। ৪৫৭ জনকে আটক করে ইসরাইল। তবে ইসরাইল বলছে ৪৭০ জনের বেশি আটক করা হয়েছে।

এই অভিযানের পর ইসরাইল আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। সমালোচকদের মতে, ফ্লোটিলা আটক অভিযান প্রমাণ করেছে গাজার ওপর দীর্ঘদিনের অবরোধ সম্পূর্ণ অবৈধ। আগস্টের শেষদিকে যাত্রা করা এই ফ্লোটিলা ছিল গাজায় ইসরাইলের অবরোধ ভাঙতে এবং ফিলিস্তিনিদের কাছে সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার বৃহত্তম আন্তর্জাতিক উদ্যোগ।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম