Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

ডিকাবকে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব

যে-ই ক্ষমতায় আসুক তার সঙ্গে কাজ করবে দিল্লি

যত দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায় ভারত * হাসিনার ভারতে অবস্থান ও ফেরতের বিষয়টি একটি আইনি ও বিচারিক প্রক্রিয়া

মাসুদ করিম

মাসুদ করিম

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

যে-ই ক্ষমতায় আসুক তার সঙ্গে কাজ করবে দিল্লি

বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে যে-ই সরকার গঠন করুক, ক্ষমতায় আসুক, তার সঙ্গে কাজ করবে নয়াদিল্লি। বাংলাদেশের মানুষ যেন তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার অনুযায়ী পছন্দের সরকার নির্বাচিত করতে পারে, সেটাই ভারতের প্রত্যাশা-এমন মন্তব্য করেছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি। তিনি বলেন, যত দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায় ভারত। এমন নির্বাচন কীভাবে হবে, সেটা নির্ধারণ করবে বাংলাদেশের জনগণ। তবে নির্বাচন শুধু বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নয়; বরং বহির্বিশ্বেও বিশ্বাসযোগ্য হতে হবে।

সোমবার দিল্লির সাউথ ব্লকে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ডিকাব) সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন বিক্রম মিশ্রি। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে ডিকাবের ২৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি প্রতিনিধিদল বর্তমানে ভারত সফর করছে। মতবিনিময়কালে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রনধির জয়সওয়াল, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারবিষয়ক ডেস্কের যুগ্ম সচিব ভি শ্যাম, ডিকাবের সভাপতি এ কে এম মঈনউদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান মামুনসহ প্রতিনিধিদলের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। 

মতবিনিময়কালে বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন, শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর ইস্যু, ভিসা ইস্যু, সীমান্ত হত্যা, পুশইন, গঙ্গা ও তিস্তার পানি চুক্তিসহ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নানা দিক উঠে আসে।

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার সাংবিধানিক কাঠামোয় নির্বাচিত না হলেও ভারত শুরু থেকেই এই সরকারের সঙ্গে কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইতোমধ্যেই প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। শেখ হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার অনুরোধের বিষয়ে বিক্রম মিশ্রি বলেন, এটি একটি আইনি ও বিচারিক বিষয়। এ বিষয়ে এর বেশি মন্তব্য করব না। তিনি দুদেশের সম্পর্কের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক শক্তিশালী সাংস্কৃতিক, ভাষাগত, ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক ভিত্তিতে গঠিত। এই সম্পর্কের ভিত্তিতে রাজনৈতিক বা ভূ-রাষ্ট্রীয় পরিবর্তন এলেও সম্পর্ক টেকসই থাকবে। আমরা সবসময় উভয় দেশের জনগণের মানসিকতা ও সুবিধাজনক পরিবেশ বিবেচনা করে সহযোগিতা চালিয়ে আসছি।

বাংলাদেশের সঙ্গে জনগণকেন্দ্রিক সম্পর্কের কথা বললেও ভারত কেন ভিসা নিয়ন্ত্রণ করছে জানতে চাইলে দেশটির পররাষ্ট্র সচিব বলেন, নিরাপত্তাজনিত কারণে এটা করা হয়েছিল। এখন ভিসা দেওয়ার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। আগামীতে তা আরও বাড়বে। 

মতবিনিময়ে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে বিক্রম মিশ্রি বলেন, যদি কারও মনে ন্যূনতম সন্দেহ থেকে থাকে, আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, ভারত চায় বাংলাদেশে অবাধ, নিরপেক্ষ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। আমরা চাই এই নির্বাচন যত দ্রুত সম্ভব অনুষ্ঠিত হোক, কোনো বিলম্ব ছাড়াই। তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণা করেছে, যা আমাদের উৎসাহিত করেছে। আমরা আশা করি, নির্বাচনটি যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে এবং যে সরকারই জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আসবে, আমরা তার সঙ্গেই কাজ করব। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতন এবং দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধের পর অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন কতটা সম্ভব-এমন প্রশ্নে বিক্রম মিশ্রি বলেন, এটা বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের সিদ্ধান্ত। আমরা এতে হস্তক্ষেপ করতে চাই না। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, আওয়ামী লীগ ছাড়া নির্বাচনে গঠিত সরকার হলেও তাতে ভারতের অবস্থান বদলাবে না।

গণ-অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি ভারতের অবস্থান প্রসঙ্গে বিক্রম মিশ্রি বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে অন্তর্বর্তী সরকারের বিধান না থাকলেও আমরা বাস্তবতাকে স্বীকার করেছি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দায়িত্ব গ্রহণের পরই ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। ভারতের আমন্ত্রণে তিনি গ্লোবাল ভয়েস সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ভারত অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে দৈনন্দিন কাজকর্মে বাস্তবসম্মত সম্পর্ক বজায় রাখছে। বর্তমান সরকারের দায়িত্ব হলো যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন আয়োজন করা, যার প্রস্তুতি আমরা লক্ষ করছি।

শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান ও তাকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এটা একটি আইনি ও বিচারিক প্রক্রিয়া। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে এবং আমরা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ করার অপেক্ষায় আছি।

ভারত আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে পুনর্বাসন করতে চায়-বাংলাদেশে এমন ধারণা প্রসঙ্গে বিক্রম মিশ্রি স্পষ্ট জবাব দেন, এই ধারণা ভুল। আমরা কোনো বিশেষ দলের সঙ্গে নেই। বাংলাদেশের জনগণের ভোটে যে সরকার আসবে, আমরা তার সঙ্গেই কাজ করব। দৃঢ়তার সঙ্গে আমরা বলতে চাই, ভারত বাংলাদেশের জনগণের ম্যান্ডেটের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। মতবিনিময়ের সময় সীমান্ত হত্যা, পুশব্যাক ও পানি বণ্টন নিয়েও কথা বলেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব। তিনি বলেন, আমাদের দুই দেশের মধ্যে যৌথ নদী কমিশন রয়েছে। গঙ্গার পানি চুক্তির নবায়ন নিয়ে আলোচনা চলছে এবং নবায়ন করার সময় এখনও ফুরিয়ে যায়নি। তিনি আরও জানান, সীমান্তে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বন্ধে ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা চাই, দুই দেশের সম্পর্ক ভবিষ্যৎমুখী হোক, অতীতের ঘটনার ভারে যেন জর্জরিত না হয়। পুশইন-সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি একমত যে, বৈধ পথেই অবৈধ লোকদের ফেরত পাঠানো উচিত। কিন্তু দুই হাজারের বেশি মানুষের তালিকা আমরা বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কাছে দিয়ে রেখেছি। কিন্তু সেগুলোর পরিচয় নিশ্চিত করে তৈরি করার জবাবের অপেক্ষায় আছি দীর্ঘদিন যাবৎ। এখনও কোনো জবাব মেলেনি’।

বাংলাদেশে কোটাবিরোধী আন্দোলন দমনে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের রিপোর্ট সম্পর্কে বিক্রম মিশ্রি বলেন, রিপোর্টটি সম্পর্কে শুনেছি, তবে বিস্তারিতভাবে পড়ার সুযোগ হয়নি। আমরা আমাদের নিজস্ব পর্যবেক্ষণ থেকে মাঠপর্যায়ের অবস্থা দেখেছি। বিক্রম মিশ্রি বলেন, ‘দিনশেষে বাংলাদেশের জনগণই ঠিক করবে তারা কীভাবে নির্বাচন আয়োজন করবে এবং কাকে ক্ষমতায় আনবে। এই সিদ্ধান্ত শুধু আজকের নয়, বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। ভারত সে জনগণের সিদ্ধান্তকেই সম্মান করবে।


Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম