Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

আমিনুলের হাতেই দেশের ক্রিকেট

জ্যোতির্ময় মন্ডল

জ্যোতির্ময় মন্ডল

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আমিনুলের হাতেই দেশের ক্রিকেট

নাটকের ঘনঘটা, জটিলতা, বিতর্ক-বয়কট, সমঝোতা-সংকট, মামলা-মোকদ্দমা-বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচন বেশুমার নেতিবাচক কারণে বহুমাত্রিক রূপ নিয়েছিল। অবশেষে তার যবনিকাপাত ঘটে সোমবার রাতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পাঁচতারা হোটেলে সরকার সমর্থিত আমিনুল ইসলাম বুলবুলের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে। ফারুক আহমেদ ও শাখাওয়াত হোসেনকেও এরআগে নির্বাচিত ২৫ পরিচালক দুই সহসভাপতি হিসাবে বেছে নেন। এর মধ্য দিয়ে বহুল চর্চিত ও বিতর্কিত বিসিবি পরিচালনা পর্ষদের একপেশে নির্বাচন সম্পন্ন হলো অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়ে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ হোসেন রাত ৮টা ২০ মিনিটে সভাপতি ও দুই সহসভাপতির নাম ঘোষণা করেন। তিনজনই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগে রিটার্নিং অফিসার শেখ মোহাম্মদ জুবাইদুর রহমান পরিচালকদের নির্বাচনের ফল ঘোষণা করেন।

সোনারগাঁও হোটেলের বলরুমে জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে ভোটগ্রহণ শুরু হয় সকাল ১০টায়। চলে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। অনুমিতভাবে যাদের পরিচালক হওয়ার কথা ছিল, তারাই একচ্ছত্রভাবে জয়লাভ করেছেন। পরে পরিচালকদের ভোটে বিসিবির ২০তম সভাপতি নির্বাচিত হন আমিনুল। চার মাস আগে আকস্মিকভাবে বিসিবির সভাপতি হলেও এবার নির্বাচিত হয়েই বোর্ডপ্রধান হলেন সাবেক এই অধিনায়ক। দুই সহসভাপতি হলেন সাবেক সভাপতি ক্যাটাগরি-২ থেকে পরিচালক হওয়া ফারুক আহমেদ ও ক্যাটাগরি-১-এর পরিচালক শাখাওয়াত হোসেন।

নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন ১৫৬ জন, ভোট পড়েছে ১১৫টি। যা ৭৩.৭১ শতাংশ ভোট। এদিকে ২৫ জনের মধ্যে ২০ জনই নতুন পরিচালক। তারা আগে কখনো পরিচালক ছিলেন না। ২৩ জন নির্বাচিত, দুজন জাতীয় ক্রিকেট পরিষদ (এনএসসি) মনোনীত। ২০২১ সালে বিসিবির সবশেষ নির্বাচনে জয়ী হওয়া পরিচালনা পর্ষদ থেকে এবার টিকেছেন শুধু দুজন-ইফতেখার রহমান ও মনজুর আলম। এর আগে ২০ মে এনএসসির কাউন্সিলর হিসাবে সভাপতি হয়েছিলেন আমিনুল। দ্বিতীয় ধাপে তার যাত্রা শুরু হলো কাল থেকে। এসেছিলেন টি ২০ ফরম্যাটের মতো কুইক একটি ইনিংস খেলতে। সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর আমিনুল জানান, বাংলাদেশ ক্রিকেটের পথচলার প্রেমে পড়েছেন তিনি। এখন থেকে টেস্ট মেজাজে দলকে এগিয়ে নিতে চান। 

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) মনোনীত দুই পরিচালক হলেন ব্যবসায়ী এম ইসফাক আহসান ও ইয়াসির আহমেদ ফয়সাল আশিক। দুজনই আওয়ামী লীগের সক্রিয় সদস্য হিসাবে পরিচিত। রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ও অর্থনৈতিক প্রভাবের কারণে তাদের নিয়োগ নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, মোটা অঙ্কের বিনিময়ে এ দুই ব্যবসায়ীকে এনএসসির পরিচালক করা হয়েছে। সবশেষ খবর, এর মধ্যে ইসফাক আহসানের পরিচালক পদ আজ প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে। তৃতীয় ক্যাটাগরির ভোটের ফল আগে ঘোষণা করা হয়। ৪৫ ভোটের মধ্যে ৩৫ ভোট পেয়ে পরিচালক নির্বাচিত হয়েছেন সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী দেবব্রত পাল পেয়েছেন মাত্র সাত ভোট। একটি ভোট বাতিল হয়েছে। ২০২১ সালের নির্বাচনে খালেদ মাসুদ পেয়েছিলেন মাত্র দুই ভোট। কাল হারের পর অভিযোগ তুলে দেবব্রত বলেন, ‘আমি শেষ পর্যন্ত থেকে দেখতে চেয়েছি কতটা নিচে নামতে পারে এই নির্বাচনব্যবস্থা। নির্বাচনে থেকে সরাসরি দেখলাম কতটা মেকিং এই নির্বাচন। আমি এই ফল প্রত্যাখ্যান করলাম।’ এসব দাবি উড়িয়ে দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে এরকম অনেক কথাই হয়। সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। যারা নেই, তারা হয়তো অনেক কথাই বলবে।’ 

ঢাকা বিভাগে আনুষ্ঠানিকভাবে ভোট হলেও আগের দিনই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন আবদুল্লাহ আল ফুয়াদ রেদুয়ান। এই বিভাগে বিসিবির সর্বশেষ পরিচলনা পর্ষদের সভাপতি আমিনুল ১৫ ও সহসভাপতি নাজমুল আবেদীন ১৫টি করে ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচনের আগেই পরিচালনা পর্ষদে জায়গা নিশ্চিত হয়ে যায় সাবেক ক্রিকেটার আবদুর রাজ্জাক, গায়ক আসিফ আকবরসহ নয়জনের। বাকিদের বেশির ভাগের জয়ও অনেকটা নিশ্চিত ছিল। রাজশাহী বিভাগ থেকে সাত ভোট পেয়ে জিতেছেন মুহাম্মদ মুখলেসুর রহমান, রংপুর বিভাগ থেকে সমান ভোট পেয়ে হাসানুজ্জামান। 

এছাড়া ক্যাটাগরি-২ বা ক্লাব কোটা থেকে ৭৬ ভোটের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪২টি করে পেয়েছেন রেঞ্জার্স ক্রিকেট একাডেমির ফারুক আহমেদ, ধানমন্ডি স্পোর্টস ক্লাবের কাউন্সিলর ইশতিয়াক সাদেক ও ঢাকা মেরিনারের কাউন্সিলর শানিয়ান তানিম। ৪১টি ভোট পান ঢাকা স্পারটান্সের আমজাদ হোসেন, যাত্রাবাড়ী ক্রীড়া চক্রের মেহরাব আলম চৌধুরী ও গোল্ডেন ঈগলস স্পোর্টিং ক্লাবের মোকছেদুল কামাল। ৪০টি করে ভোট পেয়েছেন রূপগঞ্জ টাইগার্সের আদনান রহমান, উত্তরা স্পোর্টিং ক্লাবের ফায়াজুর রহমান ও প্রাইম দোলেশ্বরের আবুল বাশার। ৩৯টি ভোট পান সাবেক বিসিবি পরিচালক ও রেগুলার স্পোর্টিং ক্লাবের কাউন্সিলর মনজুর আলম এবং ৩৭টি ভোট পান ট্যালেন্ট হান্ট ক্রিকেট একাডেমির এম নাজমুল ইসলাম। সাবেক বিসিবি পরিচালক ও ভাইকিংস ক্রিকেট একাডেমির ইফতেখার রহমান পান ৩৪ ভোট।

এছাড়া ক্যাটাগরি-১ থেকে পরিচালক হয়েছেন ঢাকা বিভাগ থেকে আমিনুল ইসলাম ও নাজমুল আবেদীন, চট্টগ্রাম বিভাগের আহসান ইকবাল চৌধুরী ও আসিফ আকবর, খুলনা বিভাগের আব্দুর রাজ্জাক ও জুলফিকার আলী খান, রাজশাহী বিভাগ থেকে মুখলেসুর রহমান, রংপুর বিভাগের হাসানুজ্জামান, সিলেট বিভাগ থেকে রাহাত শামস এবং বরিশাল বিভাগ থেকে শাখাওয়াত হোসেন।

বিসিবি নির্বাচন ঘিরে শুরু থেকেই সমালোচনার ঝড় ছিল। কাউন্সিলর তালিকা থেকে কয়েকটি ক্লাব বাদ দেওয়া, আদালতের নিষেধাজ্ঞা, রাজনৈতিক প্রভাব, এমনকি প্রার্থীদের মধ্যে মতপার্থক্যও কম ছিল না। ক্রিকেট অঙ্গনের অনেকেই অভিযোগ তুলেছেন এই নির্বাচন ছিল ‘নির্ধারিত ফলাফলের’ মতোই। তবে আমিনুল ইসলাম নির্বাচিত হওয়ার পর বলেন, ‘সমালোচনা থাকতেই পারে। আমরা ক্রিকেটের উন্নয়ন নিয়েই কাজ করব। দেশের ক্রিকেটের স্বার্থই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।’ তিনি বলেন, ‘আমি একটি সৌন্দর্য তুলে ধরতে চাই। আমাকে সভাপতি হিসাবে প্রস্তাবক ছিলেন ফারুক ভাই এবং সহসভাপতি হিসাবে ফারুক ভাইয়ের নাম আমি প্রস্তাব করি। আমরা এই কমিটির মাধ্যমে বোর্ডকে একটি ভালো জায়গায় নিয়ে যেতে চাই।’

অচিরেই জাতীয় বেইমানদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে : বিসিবির জালিয়াতির সিলেকশন সাধারণ জনগণ ও ক্রীড়া সংগঠকরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন।

ইশরাক বলেন, বিসিবির জালিয়াতির সিলেকশন ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে সাধারণ জনগণ ও ক্রীড়া সংগঠকরা। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য দেশকে স্থিতিশীল রাখতে এখন কিছু বলা হচ্ছে না।

তিনি বলেন, অচিরেই এই জাতীয় বেইমানদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে ইনশাআল্লাহ। আমাদের দেশের আইন মেনেই এই ভুয়া বোর্ড লাথি মেরে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হবে।

সোমবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে তিনি এ কথা বলেন।


Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম