কিছু দল ঐকমত্যের নামে প্রতারণা করে কাগজে স্বাক্ষর করছে: নাহিদ ইসলাম
জাতীয় ঐক্য তখন হয়, যখন সমাজের সব অংশের মানুষ দেশপ্রেমের ভিত্তিতে এক হয়ে লড়াই করে
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
কিছু রাজনৈতিক দল জাতীয় ঐকমত্যের নামে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে একটি কাগজে স্বাক্ষর করছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘জাতীয় ঐক্য তখন হয়, যখন সমাজের সব অংশের মানুষ দেশপ্রেমের ভিত্তিতে এক হয়ে লড়াই করে। যেটা আমরা দেখেছিলাম জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে। সে সময় কোনো রাজনৈতিক দলের ব্যানার দেখিনি। শুধু দেখেছিলাম ছাত্র-শ্রমিক এবং নানান পেশাজীবী। আমরা সেই জাতীয় ঐক্যের দিকে এগোচ্ছি, যেখানে ছাত্র-শ্রমিক কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সংগ্রাম করবে, লড়াই করবে।’
শুক্রবার দুপুরে (সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আগে) রাজধানীর ইস্কাটনে এনসিপির শ্রমিক সংগঠন ‘জাতীয় শ্রমিক শক্তি’র আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নাহিদ ইসলাম এসব কথা বলেন।
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকারের সময় অনেকগুলো কমিশন হয়েছে। শ্রম কমিশন হয়েছে। কিন্তু এই কমিশন নিয়ে কোনো আলোচনা নেই। স্বাস্থ্য কমিশন নিয়ে কোনো আলোচনা নেই। মানুষের জীবনের সঙ্গে যে যে জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠান জড়িত, যে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান জড়িত, তার সংস্কার নিয়ে কোনো আলোচনা নেই। শুধু নির্বাচনকেন্দ্রিক ছয়টি সংস্কার কমিশন নিয়ে ঐকমত্য কমিশন গঠন হয়েছে।’
নাহিদ ইসলাম বলেন, ফলে তারা মনে করেন, বাংলাদেশের যে গণতান্ত্রিক রূপান্তরের লড়াই শুরু করেছেন, এর পাশাপাশি তাদের যে অর্থনৈতিক রূপান্তরের লড়াই, যেটাকে বলছেন বৈষম্যবিরোধী সমাজব্যবস্থা, ইনসাফভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, সেই ব্যবস্থার জন্য তারা লড়াই করবেন। ছাত্র-শ্রমিকসহ পেশাজীবী সব মানুষ একত্র হয়ে এই লড়াই করবেন।
বাংলাদেশের সব উন্নয়নের কেন্দ্রে মানবিক মর্যাদা থাকতে হবে বলে মন্তব্য করেন এনসিপির আহ্বায়ক। তিনি বলেন, তারা মনে করেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যে উন্নয়নের গালগল্প শোনানো হয়েছে, যেই প্রবৃদ্ধির গল্প শোনানো হয়েছে, সেই কাঠামো থেকে দেশকে বের করতে হবে। বাংলাদেশের সব উন্নয়নের কেন্দ্রে থাকতে হবে মানবিক মর্যাদা, একটি মর্যাদাপূর্ণ কর্মসংস্থান, শ্রমিকের ন্যায্য হিস্যা। এই মর্যাদাপূর্ণ জীবনব্যবস্থা, মর্যাদাপূর্ণ কর্মসংস্থান ও একটি দায়-দরদের সমাজ প্রতিষ্ঠাই তাদের লক্ষ্য।
নাহিদ ইসলাম বলেন, জাতীয় শ্রমিক শক্তি আত্মপ্রকাশ করছে। রাজপথে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছে। আমরা সব সময় জানি, রাজপথের শক্তি জয়ী হয়। জাতীয় শ্রমিক শক্তিও জয়ী হবে। জাতীয় নাগরিক পার্টি শ্রমিকদের পক্ষে রাজনীতি করবে। শ্রমিকের অধিকার আদায়ের রাজনীতি করবে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে এখনো শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরির জন্য লড়াই করে যাচ্ছেন। গার্মেন্টে আগুন লাগছে। বস্তিতে আগুন লাগছে। কলকারখানায় আগুন লাগছে। শ্রমিক মারা গেলে দুই লাখ, তিন লাখ টাকায় জীবনের দাম নির্ধারণ করা হয়। শ্রমিকের জীবনের কোনো মূল্য হয় না। শ্রমিকের শ্রমকে কেবল অর্থনীতি শোষণের কেন্দ্রে ভাবলে চলবে না। বাংলাদেশে যে লুটপাট হয়েছে, যে দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, সেখান থেকে গণতান্ত্রিক রূপান্তরের দিকে যেতে হবে।
ফ্যাসিবাদী আমলে যেসব রাঘব ছিল, মাফিয়া অলিগার্ক ছিল, তাদের বিচারের আওতায় আনা হয়নি বলে মন্তব্য করেন এনসিপির আহ্বায়ক। তিনি বলেন, এই রাঘব, মাফিয়া অলিগার্কদের ব্যবসা এখনো রক্ষা করা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে এই সুরক্ষা দেওয়া হচ্ছে সেই মাফিয়াদের, যারা শ্রমিকদের এতকাল ধরে শোষণ করেছে। তাই তারা সেই অলিগার্কি ব্যবস্থার পরিবর্তন চান।
অনুষ্ঠানে নতুন সংগঠনের নেতাদের নাম ঘোষণা করেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, জাতীয় শ্রমিক শক্তির আহ্বায়ক হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা মাজহারুল ইসলাম ফকির। সদস্য সচিব শ্রমিক নেতা রিয়াজ মোর্শেদ। মুখ্য সংগঠক শ্রমিক নেতা আরমান হোসেন।
