Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

বাড়ছে নাশকতার সন্দেহ

এবার টার্গেট কি পোশাকশিল্প

সাদ্দাম হোসেন ইমরান

সাদ্দাম হোসেন ইমরান

প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

এবার টার্গেট কি পোশাকশিল্প

রিপ্রেজেন্টিটিভ ছবি

তৈরি পোশাকশিল্পকে অস্থিতিশীল করতে নাশকতার সন্দেহ ক্রমেই বাড়ছে। সব মহলে একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে-সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে এবার টার্গেট কী পোশাকশিল্প? গত এক সপ্তাহে অগ্নিকাণ্ডের ধরন ও প্রেক্ষাপট অন্তত সেই সন্দেহের বার্তা জোরালো করেছে। শিল্পমালিকদেরও ধারণা, দেশের অর্থনীতি মেরুদণ্ড ভেঙে দিতে টার্গেট করে গার্মেন্টস শিল্পে আগুন লাগানো হচ্ছে, যা এই শিল্পকে ধ্বংসের জন্য ভয়াবহ একটি অপচেষ্টা হতে পারে। এ অবস্থায় শিল্প এলাকায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করাসহ গোয়েন্দা কার্যক্রম আরও বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে পুলিশের উচ্চপর্যায়ের সূত্র রোববার যুগান্তরকে জানায়, আগুনের ঘটনাগুলো খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয়েছে। প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থা ছাড়াও বিভিন্ন ইউনিট জোরালোভাবে কাজ করছে। এছাড়া অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা যার যার অবস্থান থেকে সরকারকে সঠিক বার্তা দিতে তৎপরতা বৃদ্ধি করেছে।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, গণ-অভ্যুত্থানবিরোধী শক্তিগুলো সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে থেমে নেই। গত বছর ৫ আগস্টের পর থেকে বিভিন্ন পন্থায় একের পর এক আঘাত করার অপচেষ্টা চালিয়ে আসছে। গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় গুজব ছড়িয়ে অর্ধ-শতাধিক কারখানা ভাঙচুর করা হয়। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ প্রচেষ্টায় সেই ষড়যন্ত্র শক্ত হাতে প্রতিহত করা হয়। কিন্তু দেশবিরোধী চক্রটি নতুন করে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক সময়ে মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধানে যে তিনটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে সেগুলো গার্মেন্টস ও শিল্পসংশ্লিষ্ট স্থাপনা। সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে বিদেশে বসে যারা প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছে তার সঙ্গে এসব অগ্নিকাণ্ডের যোগসূত্র থাকার যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে। এ নিয়ে জনমনেও সন্দেহ প্রবল হচ্ছে। এ বিষয়গুলো মাথায় রেখে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তৎপরতা জোরদার করেছে। বিশেষ করে অগ্নিকাণ্ডসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় যারা কাজ করেন তাদের রাজনৈতিক পরিচয়সহ নানারকম যোগসূত্রতা খতিয়ে দেখার কাজ শুরু হয়েছে।

এছাড়া দেশবিরোধী এই চক্র আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের নেতিবাচক দিক তুলে ধরতে নানামুখী অপচেষ্টা করে যাচ্ছে। যার অংশ হতে পারে এসব ভয়াবহ সিরিজ অগ্নিকাণ্ড। ষড়যন্ত্রকারীরা মূলত প্রমাণ করতে চায়, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প অনিরাপদ এবং আগুন নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ। এছাড়া এখানে শ্রমিকের কর্মপরিবেশ নেই, এখানকার শ্রমিক উপযুক্ত শ্রমের মজুরি পায় না ও ন্যায্য দাবি আদায়ে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করতে দেওয়া হয় না।

গোয়েন্দা সূত্র বলছে, কতিপয় গার্মেন্টস মালিকও এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। যারা বিগত সরকারের আমলে বিভিন্নভাবে সুবিধাভোগী। নানা অসিলায় এরা শ্রমিক আন্দোলনকে উসকে দেওয়ার পাঁয়তারাও করেছেন। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে এরকম কয়েকজন গার্মেন্ট মালিক ও শ্রমিক নেতাকে চিহ্নিত করা হয়।

প্রসঙ্গত, গত ১৪ অক্টোবর মিরপুরের শিয়ালবাড়িতে একটি ভবনে দুটি পোশাক কারখানায় আগুন লাগে। এ ঘটনায় ১৬ জন শ্রমিকের নির্মম মৃত্যু হয়। এর দুদিন পর ১৬ অক্টোবর চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ইপিজেড) একটি পোশাক কারখানায় আগুন লাগে। সবশেষ শনিবার ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ আগুন লাগে। এতে আমদানি পণ্য রাখা শেডটি পুড়ে একেবারে ছাই হয়ে যায়।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ নিটপণ্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, কার্গো ভিলেজের মতো অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি জায়গায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে যে, এটি কতটা অনিরাপদ। গত কয়েক বছর ধরেই আমরা রপ্তানিকারকরা অভিযোগ করে আসছি, আমাদের পণ্য খোলা জায়গায় রাখা হয়, যা নিরাপত্তার দিক থেকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এই ঘটনাটি কেবল একটি দুর্ঘটনা, নাকি এর পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র রয়েছে-তা খতিয়ে দেখতে সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত তদন্ত শুরু করা উচিত। কারণ গত কয়েক দিনে স্থানীয় ও রপ্তানিমুখী একাধিক পোশাক কারখানায় আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম ইপিজেডে সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডের পর কার্গো ভিলেজে এ ধরনের ঘটনা আমাদের উদ্যোক্তাদের মধ্যে নিরাপত্তা বিষয়ে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। এ পরিস্থিতি বিদেশি ক্রেতাদের মধ্যেও উদ্বেগ তৈরি করতে পারে।


বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পকে ধ্বংসে পরিকল্পিতভাবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলো ঘটানো হচ্ছে বলে আমি মনে করি। কেননা বিমানবন্দরের মতো উচ্চ নিরাপত্তাবেষ্টিত জায়গায় আগুন লাগার ঘটনা অস্বাভাবিক। এটা পরিত্যক্ত কোনো গোডাউন বা কারখানায় ঘটলে হয়তো এই প্রশ্ন উঠত না। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পকে অশান্ত করতে দেশি-বিদেশি চক্রান্ত আগেও হয়েছে, এখনো হচ্ছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ হচ্ছে, এসব চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র নসাৎ করা। কিন্তু ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষত পুলিশকে এ ব্যাপারে খুব বেশি সক্রিয় দেখা যায়নি। এখনো পুলিশ পূর্ণোদ্যমে কাজে ফিরতে পেরেছে বলে মনে হয় না। সরকারের উচিত হবে, শিল্প এলাকায় দ্রুত নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা।

এদিকে বিজিএমইএ’র সিনিয়র সহ-সভাপতি ইনামুল হক খান রোববার অগ্নিকাণ্ডস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, গার্মেন্ট শিল্পের ক্ষতিগ্রস্তদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এই অগ্নিকাণ্ড দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা, সে বিষয়ে দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত শুরু করার দাবি জানান তিনি।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম