Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

আ.লীগ আমলে গুম-খুন নির্যাতন মামলা

আজ ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে হাজির করা হতে পারে

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আজ ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে হাজির করা হতে পারে

ফাইল ছবি।

ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দেড় দশকের শাসনকালে গুম-খুনের মাধ্যমে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের আলাদা দুই মামলায় হেফাজতে থাকা ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হতে পারে আজ। এ দুই মামলায় শেখ হাসিনাসহ ২৮ জন আসামি। এর মধ্যে সেনা কর্মকর্তা রয়েছেন ২৩ জন। যাদের ১৫ জনই এখন হেফাজতে। তাদের আজ ট্রাইব্যুনালে হাজিরের জন্য নির্দেশনা রয়েছে। এছাড়া জুলাই হত্যাকাণ্ডের অপর একটি মামলায় চার আসামিকে আজ হাজিরের জন্য দিন ধার্য রয়েছে। তারা হলেন-সাবেক সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেদোয়ানুল ইসলাম, বিজিবির আরেক কর্মকর্তা মেজর মো. রাফাত বিন আলম মুন, ডিএমপির খিলগাঁও অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. রাশেদুল ইসলাম এবং রামপুরা থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মশিউর রহমান। অর্থাৎ তিন মামলায় শেখ হাসিনাসহ ৩২ আসামির মধ্যে ২৫ জনই বর্তমান ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা। তাদের সবার বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে একই সিদ্ধান্ত আসবে। এমনটি জানিয়েছে প্রসিকিউশন।

তারা আভাস দিয়েছেন আজ দিনের যে কোনো সময় হেফাজতে থাকা ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হতে পারে। তারাসহ ৩২ আসামি হাজির না হলে আইন অনুযাযী তাদের আত্মসমর্পণের জন্য ট্রাইব্যুনাল থেকে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি জারির আবেদন করবে প্রসিকিউশন। মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়া আরও আছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক।

সেনা কর্মকর্তাদের বিষয়ে প্রসিকিউশন সূত্র আরও জানায়, ট্রাইব্যুনালে তাদের হাজির করা হলে জামিনের আবেদন করা হতে পারে। মঙ্গলবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী মামলার আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে গণমাধ্যমকে এ কথা জানান প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। গুমের মামলা নিয়ে প্রসিকিউশন কোনো চাপে রয়েছে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে তামিম জানান, আইন আসামির কোনো পদমর্যাদা দেখে তার সুযোগ-সুবিধা নির্ধারণ করে না। আইন অনুযায়ী যাকে যতটুকু সুযোগ দেওয়া যায়, ততটুকুই ফেয়ার হবে।

ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম বলেন, বেশ কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল। বুধবার ওই মামলা দুটিতে আসামিদের হাজির হওয়ার ধার্য তারিখ রয়েছে। ট্রাইব্যুনালের আদেশের কপি থেকে দেখা যায়, পুলিশের আইজিপিকে আদেশ দেওয়া হয়েছিল গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিল করার।

তিনি জানান, যেসব আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়না জারি হয়েছে, তাদের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও গ্রেফতারি পরোয়নার একটি কপি পাঠানো হয়েছিল। এখন আইন অনুযায়ী তারা দুটি কাজ করতে পারেন। এর একটি হলো-ওনারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে গ্রেফতারি পরোয়না পেয়ে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে পারেন। অথবা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের গ্রেফতার করে ট্রাইব্যুনালে নিয়ে আসতে পারে। এ দুটির যে কোনো একটি হতে পারে আজ।

প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম আরও বলেন, ট্রাইব্যুনাল আইন অনুযায়ী যদি তারা হাজির হন, অথবা গ্রেফতার করে হাজির করা হয়, গ্রাউন্ড থাকলে ট্রাইব্যুনাল চাইলে তাদের জামিন দিতে পারেন। অথবা জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দিতে পারেন। যদি জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন, তাহলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে তারা কোন কারাগারে থাকবেন। প্রসিকিউটর বলেন, যদি সেনা কর্মকর্তারা বুধবার হাজির না হন, অথবা তাদের হাজির করা না হয়, তাহলে আইন অনুযায়ী তাদের ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হওয়ার জন্য দুটি জাতীয় পত্রিকায় একটি বাংলা এবং একটি ইংরেজি দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রদান করা হবে। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী পরবর্তী ধার্য তারিখেও যদি তারা হাজির না হন, তাহলে পলাতক ঘোষণা করে স্টেট ডিফেন্স কাউন্সিল নিয়োগ করা হবে। এই স্টেট ডিফেন্স কাউন্সিল তাদের পক্ষে মামলা পরিচালনা করবেন। এটা হলো ট্রাইব্যুনালের বিধান।

এক প্রশ্নের জবাবে গাজী এমএইচ তামিম বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি, সাবেক বেশ কয়েকজন মন্ত্রী এবং যারা রাষ্ট্রের উচ্চতরে ছিলেন-সবার জন্য এ আইন প্রযোজ্য হবে। সাবেক অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাকে জুলাই গণহত্যায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় নিয়মিত আনা হচ্ছে। এখানে আসামি কে, এটা আমরা দেখছি না। আইন একজন আসামিকে যতটুকু সুবিধা দিতে বলছে, প্রসিকিউশন পূর্ণ সুবিধা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গ্রেফতারি পরোয়না জারি হওয়া তিন মামলায় আসামির তালিকায় সেনাবাহিনীর ২৫ জন কর্মকর্তা রয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৫ জন এখনো চাকরিতে আছেন। একজন এলপিআরে (অবসরোত্তর ছুটিতে)। সেনাবাহিনী ইতোমধ্যে ১৫ জনকে হেফাজতে নিয়ে গেছে। আত্মগোপনে চলে গেছেন মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ। ডিজিএফআই-এর সাবেক এই পরিচালক সর্বশেষ সিলেটে সেনাবাহিনীর স্কুল অব ইনফ্যান্ট্রি অ্যান্ড ট্যাকটিকসে (এসআইঅ্যান্ডটি) কমান্ড্যান্ট পদে ছিলেন। এর আগে তিনি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামরিক সচিব ছিলেন।

এর বাইরে গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত ৯ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রয়েছেন। সেনা কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, অবসরপ্রাপ্তদের বিষয়ে পুলিশ আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে। ওই কর্মকর্তারা নিজেরাও চাইলে আত্মসমর্পণ করতে পারেন।

বর্তমান সেনা হেফাজতে ১৫ জন রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজন এলপিআরে আছেন। বাকিরা কর্মরত কর্মকর্তা। এর মধ্যে রয়েছেন-মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কেএম আজাদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুব আলম, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম, লে. কর্নেল মশিউর রহমান জুয়েল, লে. কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভীর মাজহার সিদ্দিকী, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ রেদোয়ানুল ইসলাম ও মেজর মো. রাফাত-বিন-আলম মুন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সব আসামিকে গ্রেফতার করে ২২ অক্টোবরের মধ্যে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার জন্য আদেশ দেন। এদিকে জুলাই আন্দোলনে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে দ্বিতীয় দিনের মতো যুক্তিতর্ক তুলে ধরেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট আমির হোসেন। এ সময় তিনি দাবি করেন, জুলাইয়ে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল জড়িত নন। কোনো গোষ্ঠীর দায় শেখ হাসিনা নেবেন না বলেও উল্লেখ করেন তিনি। আগামীকাল তৃতীয় দিনের যুক্তিতর্কের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালে আশুলিয়ায় ৬ লাশ পোড়ানোর মামলায় ১৯তম জব্দতালিকার সাক্ষী এসআই আব্দুল বারেক সাক্ষ্য দিয়েছেন।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম