অস্থায়ী কবর থেকে লাশ তুলে গোরস্তানে দাফন
যুদ্ধবিরতির পরও দূর হচ্ছে না ক্ষুধার যন্ত্রণা
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান তেদরোস আধানম গেব্রিয়াসুস বলেছেন, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার দুই সপ্তাহ পরও গাজায় ক্ষুধার সংকট বিপর্যয়কর পর্যায়ে আছে। কারণ যে পরিমাণ খাদ্য প্রবেশ করছে-তা একেবারেই যথেষ্ট নয়। বৃহস্পতিবার উদ্বেগ জানিয়ে তিনি এমন সতর্কবার্তা দেন। গাজায় ত্রাণ বিতরণে আন্তর্জাতিক এনজিওগুলোর ৯৯টি আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে ইসরাইল। জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর ছয়টি আবেদনও নাকচ করা হয়েছে। এদিকে শুক্রবার গাজার বিভিন্ন অঞ্চলে অস্থায়ী কবর থেকে ১২০টি লাশ তুলে শেখ শাবান কবরস্থানে দাফন করেছে গাজার স্থানীয় প্রশাসন।
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ১০ অক্টোবর গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসাবে উপত্যকাটিতে মানবিক সহায়তা প্রবেশের পরিমাণ বাড়ানোর কথা ছিল। সে অনুযায়ী প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার টন সহায়তা প্রবেশ করানোর কথা জাতিসংঘের। ত্রাণ সংস্থাগুলো বলছে, অবরুদ্ধ গাজায় যে পরিমাণ খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে-তা সেখানকার মানুষের পুষ্টিচাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট নয়। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) বলছে, গাজায় প্রতিদিন দুই হাজার টন ত্রাণসহায়তা পৌঁছানোর কথা থাকলেও এর চেয়ে অনেক কম পৌঁছাচ্ছে। এর কারণ, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডটিতে বর্তমানে মাত্র দুটি প্রবেশদ্বার খোলা রয়েছে।
ডব্লিউএইচওর প্রধান গেব্রিয়াসুস আরও বলেন, পর্যাপ্ত খাদ্য না থাকায় ক্ষুধাজনিত সংকটের কোনো পরিবর্তন আসেনি। বুধবার জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, গাজার অন্তত এক-চতুর্থাংশ মানুষ প্রচণ্ড রকমের অনাহারে ভুগছেন। এর মধ্যে ১১ হাজার ৫০০ জন অন্তঃসত্ত্বা নারীও আছেন। জাতিসংঘ বলছে, গাজার ‘পুরো এক প্রজন্মের ওপর’ ভয়াবহ প্রভাব ফেলবে অপুষ্টি।
বুধবার জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) উপনির্বাহী পরিচালক অ্যান্ড্রু স্যাবারটন বলেন, গাজায় এখন নবজাতকদের ৭০ শতাংশই অপরিণত অবস্থায় বা কম ওজন নিয়ে জন্ম নিচ্ছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরের আগে এ হার ছিল ২০ শতাংশ। তিনি আরও বলেন, অপুষ্টির প্রভাব শুধু মায়ের ওপর নয়, নবজাতকের ওপরও পড়ে। এ কারণে শিশুটি সারাজীবন দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক সমস্যায় ভুগতে পারে এবং তার জন্য দীর্ঘসময় ধরে বিশেষ যত্নের প্রয়োজন হতে পারে।
আগস্টে গাজা শহর ও এর আশপাশের এলাকায় দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হয়। ওই সময় ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্ল্যাসিফিকেশন (আইপিসি) বলেছে, গাজা অঞ্চলের পাঁচ লাখের বেশি মানুষ ‘বিপর্যয়কর অবস্থার’ মুখোমুখি।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসাবে গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের পরিমাণ বাড়ানোর কথা ছিল। তবে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি বলছে, প্রতিদিন গাজায় মাত্র প্রায় ৭৫০ মেট্রিক টন খাবার পৌঁছাচ্ছে। কারণ, গাজায় ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণাধীন মাত্র দুটি ক্রসিং চালু আছে। এগুলো হলো-দক্ষিণে কারেম আবু সালেম ও মধ্যাঞ্চলে আল-কারারা ক্রসিং। ফিলিস্তিনি এনজিও পিএআরসির আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক পরিচালক বাহা জাকুত বলেন, যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার দুই সপ্তাহ পরও গাজা অঞ্চলের পরিস্থিতি বিপর্যয়কর অবস্থায় আছে। উদাহরণ দিয়ে জাকুত বলেন, বাণিজ্যিক ট্রাকে বিস্কুট, চকলেট ও সোডা ঢুকতে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বীজ ও জলপাইয়ের মতো পণ্যগুলো এখনো সীমিত পরিমাণে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে। যেসব পণ্য প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে- সেসব শিশু, নারী ও সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় থাকা জনসাধারণের জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম পুষ্টিমান পূরণ করে না। তিনি আরও বলেন, কিছু ফলমূল ও সবজি গাজায় প্রবেশ করলেও সেগুলোর দাম অত্যন্ত বেশি। এক কেজি টমেটো আগে যেখানে এক শেকেলে পাওয়া যেত, তা এখন প্রায় ১৫ শেকেলে বিক্রি হচ্ছে। এরই মধ্যে অক্সফাম, নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলসহ ৪১টি ত্রাণ সংস্থা খোলাচিঠি প্রকাশ করেছে। তাদের অভিযোগ-ইসরাইল অবৈধভাবে গাজায় ত্রাণসামগ্রী প্রবেশে বাধা দিচ্ছে। ইসরাইল সরকার নিয়মিতভাবে তাদের (সংস্থাগুলোর) মানবিক কার্যক্রম শুরুর আবেদন প্রত্যাখ্যান করছে। চিঠিতে আরও বলা হয়, গাজায় ত্রাণ বিতরণে ১০ থেকে ২১ অক্টোবরের মধ্যে আন্তর্জাতিক এনজিওগুলোর ৯৯টি আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। নাকচ করা হয়েছে জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর ছয়টি আবেদনও।
ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে অগ্রহণযোগ্য ঘোষণা করা ত্রাণসামগ্রীর মধ্যে আছে-তাঁবু ও ত্রিপল, কম্বল, গদি, খাদ্য ও পুষ্টিসামগ্রী, স্বাস্থ্য কিট, স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশনের সামগ্রী, সহায়ক যন্ত্রপাতি এবং শিশুদের পোশাক। যুদ্ধবিরতির সময় এসব সামগ্রীর ওপর থেকে সীমাবদ্ধতা তুলে নেওয়া দরকার বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
