Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

২৭তম বিসিএস

জ্যেষ্ঠতা নিয়ে বিপাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়

জ্যেষ্ঠতা পেলেও কিছু জটিলতা থেকে যাবে -জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া

আমিরুল ইসলাম

আমিরুল ইসলাম

প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

জ্যেষ্ঠতা নিয়ে বিপাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়

ফাইল ছবি

২৭তম বিসিএসে নিয়োগবঞ্চিতদের ১৭ বছর পর জ্যেষ্ঠতা নিয়ে বিপাকে পড়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সর্বোচ্চ আদালতের চূড়ান্ত রায়ের ৯০ দিনের মধ্যে নিয়োগ সম্পন্ন করার নির্দেশ থাকলেও এতে তেমন অগ্রগতি নেই। রায়ে ওই বিসিএসের প্রথম ভাইভায় সুপারিশপ্রাপ্তদের জ্যেষ্ঠতাসহ নিয়োগ দিতে বলা হয়েছে। যদিও এর আগে নিয়োগবঞ্চিতদের জ্যেষ্ঠতা দেওয়া হয়, তাহলে একই বিসিএসের দ্বিতীয়বার ভাইভায় সুপারিশপ্রাপ্তরা সিনিয়রিটি হারাবেন। আবার যদি দ্বিতীয় ভাইভায় সুপারিশপ্রাপ্তদের সিনিয়রিটি বহাল রাখা হয়, তাহলে সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করা হবে। ফলে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে বিপাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এদিকে যারা ২৭তম বিসিএসের উভয় ভাইভায় সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে চাকরিতে যোগদান করেছেন তারা নতুন করে পুলিশ ভেরিফিকেশনের বিষয়ে আপত্তি করছেন। তাদের দাবি- একবার পুলিশ ভেরিফাই করার পর চাকরিতে যোগদান করলাম। এখন আবার কিসের ভেরিফিকেশন হবে? খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

এ বিষয়ে জানতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এহছানুল হকের অফিসে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। এরপর তার সেলফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। খুদে বার্তায় পরিচয় দিয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি সাড়া দেননি। তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ (এপিডি) অনুবিভাগের একজন যুগ্মসচিব যুগান্তরকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে। ২৭তম বিসিএসের নিয়োগ সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের ভিত্তিতেই জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ হবে। তবে দুবার সুপারিশপ্রাপ্তদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণে জটিলতা বেশি। যারা প্রথমবারের ভাইভায় সুপারিশপ্রাপ্ত কিন্তু দ্বিতীয়বারের ভাইভায় সুপারিশপ্রাপ্ত হননি তাদের ক্ষেত্রে জটিলতা কম। এছাড়া যারা পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়া চাকরিতে যোগদান করতে চান, এটা সম্ভব নয়। কারণ নতুন করে চাকরিতে যোগদানের আগে পুলিশ ভেরিফিকেশনের আইনগত বাধ্যবাধকতা রয়েছে।’

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে ২৭তম বিসিএসে প্রথমবার সুপারিশপ্রাপ্তদের জ্যেষ্ঠতা দিতে গিয়ে দেখা গেছে দ্বিতীয়বার সুপারিশপ্রাপ্তদের জ্যেষ্ঠতা লন্ডভন্ড হয়ে যাচ্ছে। ধরুন প্রথমবার সুপারিশপ্রাপ্ত ব্যক্তি প্রশাসন ক্যাডারের মেধাতালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছেন। দ্বিতীয়বারের ভাইভায় সে তথ্য ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে সরকারি চাকরি করছেন। এখন যদি সর্বোচ্চ আদালতের রায় অনুসারে প্রথমবার সুপারিশপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে জ্যেষ্ঠতাসহ নিয়োগ দেওয়া হয়, তাহলে দ্বিতীয়বারের ভাইভায় প্রথম হওয়া প্রশাসন ক্যাডারে কর্মরত ব্যক্তির জ্যেষ্ঠতা কোথায় গিয়ে ঠেকবে? তিনি ৩০০ জনের পেছনে চলে যাবেন।

সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, দ্বিতীয়বারের ভাইভায় সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে চাকরিতে যোগদান করেছেন, তারা যে ক্যাডারেই যোগদান করুন না কেন, প্রত্যেকের পুলিশ ভেরিফিকেশন হয়েছে। অনেকে গ্রামের বাড়ি ছেড়ে শহরে শিপ্ট হয়েছেন। ঠিকানা পরিবর্তন হয়েছে। চাকরির আবেদনে দেওয়া ঠিকানায় কেউ বসবাস করছেন না। পিতা-মাতা মৃত্যুবরণ করেছেন। এমন বাস্তবতায় পুলিশ ভেরিফিকেশনে গিয়ে দেখবে সব ফাঁকা। ফলে তারা উলটাপালটা রিপোর্ট দেবে। সৃষ্টি হবে নতুন সংকট। এসব কারণে তারা পুলিশ ভেরিফিকেশনের পক্ষে নয়। আর যারা একেবারেই নতুন করে চাকরিতে যোগদান করবেন, তাদের ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন। তাদের বাধ্যতামূলকভাবে পুলিশ ভেরিফিকেশন হবেই। পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়া সরকারি চাকরিতে যোগদানের সুযোগ নেই। তাহলে আইন পরিবর্তন করতে হবে।

কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বেশ হোঁচট খেতে হচ্ছে। ব্যস্ততার কারণে সিনিয়র সচিবের এ বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার সুযোগ কম থাকবে। এপিডি পদে কোনো কর্মকর্তা নেই। সেক্ষেত্রে সার্ভিসের খুঁটিনাটি বোঝেন এমন দক্ষ একজন কর্মকর্তাকে এপিডি হিসাবে নিয়োগ দেওয়া উচিত। অথবা উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি করে দিলে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া যুগান্তরকে বলেন, ‘২৭তম বিসিএসের প্রথমবারের ভাইভায় সুপারিশপ্রাপ্তরা সিনিয়রিটি পাবেন। এটা আদালত দিতে বলেছেন, ভালো করেছেন। আদালত না বললেও তাদের সিনিয়রিটি কেড়ে নেওয়া যেত না। তবে বিভিন্ন ট্রেনিং, সিনিয়র স্কেল পরীক্ষা, ফাউন্ডেশন ট্রেনিং এসব বিষয়ে ১৭ বছর পর নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিরা পিছিয়ে যাবেন। কারণ যে ধাপে তারা যোগদান করবেন সেই ধাপের পরবর্তী ধাপে পদোন্নতির আগে তাদের সব ট্রেনিং, সিনিয়র স্কেল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। ফাউন্ডেশনসহ সব ট্রেনিং তাদের সম্পন্ন করতে হবে। তখন এই সিনিয়রিটি তাদের বড় ধরনের কোনো কাজে লাগবে না।

পুলিশ ভেরিফিকেশনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যারা ক্যাডার সার্ভিসে আছেন তাদের ক্ষেত্রে ভেরিফিকেশন জরুরি নয়। ক্যাডারের বাইরে যারা আছেন, তাদের ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন জরুরি।’

২০০৭ সালের ২১ জানুয়ারি ২৭তম বিসিএসে লিখিত, মৌখিক এবং মেডিকেল টেস্টে উত্তীর্ণ হয়ে বিভিন্ন ক্যাডারে যোগদানের অপেক্ষায় ছিল ১ হাজার ১৩৭ জন চাকরিপ্রত্যাশী। তাদের নিয়োগ না দিয়ে ১/১১ সরকার ২০০৭ সালের ১ জুলাই মৌখিক পরীক্ষা বাতিল করে। পুনরায় মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে অর্থাৎ দ্বিতীয়বার ভাইভা নিয়ে ২৭তম বিসিএসের নিয়োগ সম্পন্ন করে পিএসসি। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রথমবারের ভাইভায় সুপারিশপ্রাপ্তরা উচ্চ আদালতে ৮টি রিট পিটিশন করেন। ২০০৮ সালের ৩ জুলাই হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ ২৭তম বিসিএস পরীক্ষার প্রথম মৌখিক পরীক্ষার ফল বাতিলের সিদ্ধান্ত বৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। হাইকোর্টের অপর একটি বেঞ্চ ২০০৯ সালের ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষা অবৈধ ঘোষণা করেন। প্রথমবার সুপারিশপ্রাপ্তদের নিজ নিজ ক্যাডারে নিয়োগের সুপারিশ করেন। এরপর আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করা হলে হাইকোর্ট বিভাগের দেওয়া রায় বাতিল করা হয়।

পরে দীর্ঘ সময় আপলি শুনানি হয়নি। গত বছর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে বিগত সরকারের বিদায়ের পর আপিল বিভাগে শুনানি হয়। শুনানি শেষে সর্বোচ্চ আদালত হাইকোর্ট বিভাগের রায় পুনর্বহাল করে এবং ২০০৭ সালে ২৭তম বিসিএসের প্রথমবারের সুপারিশপ্রাপ্তদের জ্যেষ্ঠতাসহ নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশ দেন। এরপর ওই রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউপিটিশন করে রাষ্ট্রপক্ষ। শুনানি শেষে চূড়ান্ত আদেশে ২৭তম বিসিএসের প্রথমবার সুপারিশপ্রাপ্তদের জ্যেষ্ঠতাসহ নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম