Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে বৈঠক

ঐক্যে গুরুত্ব তারেক রহমানের

নির্দেশনা মেনে মাঠে নামছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা * দল মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে সবাইকে সক্রিয় থাকতে হবে * শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ করলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা

নূরে আলম জিকু

নূরে আলম জিকু

প্রকাশ: ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ঐক্যে গুরুত্ব তারেক রহমানের

তারেক রহমান। ফাইল ছবি

অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি মাত্র সাড়ে তিন মাস। এই নির্বাচন সামনে রেখে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি। দলটির প্রার্থী চূড়ান্তের কাজও প্রায় শেষদিকে। শিগ্গিরই আনুষ্ঠানিকভাবে একক প্রার্থী ঘোষণা দেওয়ার কথা রয়েছে। তবে তার আগেই মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নিয়ে কয়েক ধাপে মতবিনিময় করেছেন নীতিনির্ধারকরা। রোববার ৫ সাংগঠনিক বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে বৈঠক করেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আজ আরও ৫টি বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে বৈঠক হবে। কেন্দ্রের স্পষ্ট বার্তা-‘আসনকেন্দ্রিক একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী থাকলেও দল মনোনীত প্রার্থীর পক্ষেই ভোটের মাঠে প্রত্যেককে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। আর দল থেকে চূড়ান্ত মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীকে বঞ্চিতদের সঙ্গেও সুসম্পর্ক গড়তে হবে। বিভেদ ভুলে ধানের শীষ নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে বিজয় ছিনিয়ে আনতে হবে। শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়ালে তাৎক্ষণিক সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

হাইকমান্ডের এমন নির্দেশনার পর ঐক্যে গুরুত্ব দিয়ে মাঠে নামার কথা জানিয়েছেন বৈঠকে অংশ নেওয়া মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। তারা বলছেন, ‘কেন্দ্রের নির্দেশনা মেনে সব মনোনয়নপ্রত্যাশী ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে কাজ করবেন। নির্বাচনে জয়লাভের লক্ষ্যে এখানে ব্যক্তির চেয়ে ধানের শীষের প্রার্থীকে গুরুত্ব দেওয়া হবে।’ বৈঠকে অংশ নেওয়া অন্তত ১৩ মনোনয়নপ্রত্যাশী এসব তথ্য জানিয়েছেন।

রোববার সাংগঠনিক বিভাগ চট্টগ্রাম, রংপুর, কুমিল্লা, ফরিদুপর ও ময়মনসিংহের অন্তত চার শতাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশীকে নিয়ে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ভার্চুয়ালি বৈঠক করেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেখানে মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব উপস্থিত ছিলেন। এদিন বৈঠকে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কেউ বক্তব্য দেননি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মনোনয়নপ্রত্যাশীদের উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন। ভোটের মাঠে একক প্রার্থীর পক্ষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার ওপর জোর দেন তিনি। একই সঙ্গে যারা মনোনয়নবঞ্চিত হবেন, তাদের দল থেকে যথাযথ মূল্যায়নের আশ্বাস দেন। বৈঠকে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এবারের রাজনৈতিক ও নির্বাচনি প্রেক্ষাপট অতীতের চেয়ে ভিন্ন। সবাইকে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে মাঠে নামতে হবে। প্রত্যেক ভোটারের কাছে ভোট চাইতে হবে। জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে। দল মনোনীত প্রার্থীকেও সবার (মনোনয়নপ্রত্যাশী ব্যক্তি ও নেতাকর্মী) সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। কেউ মনোনয়ন পেলে এলাকায় মিষ্টি বিতরণসহ এমন কর্মকাণ্ড করা যাবে না, যাতে অন্যরা (যারা মনোনয়ন পাবেন না) মনে কষ্ট পান। এছাড়া যারা দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ড ঘটাবে, তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ বৈঠকে আবেগতাড়িত হয়ে বিএনপিকে নিজ সন্তানের মতো ভালোবাসার কথাও জানান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

বৈঠকে অংশ নেওয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য যুগান্তরকে বলেন, ‘প্রতিটি আসনেই একাধিক ক্লিন ইমেজের সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা বিএনপির হাতে রয়েছে। কয়েক দফায় তাদের তথ্য ও মাঠ পর্যায়ের অবস্থান যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। দুই-তৃতীয়াংশ আসনে একক প্রার্থী চূড়ান্ত হয়েছে। এমন অবস্থায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সব মনোনয়নপ্রত্যাশীর সঙ্গে বৈঠক করে কঠোর বার্তা দিয়েছেন। দল যাকে মনোনয়ন দেবে, সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে তার পক্ষে মাঠে কাজ করতে হবে।’

রংপুর, ময়মনসিংহ ও ফরিদপুর বিভাগের ৭ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী জানান, নির্বাচনি মাঠে ঐক্যে জোর দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। এতে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা দেখা দেবে। যারা আগে ব্যক্তিগত প্রচারে সীমাবদ্ধ ছিলেন, তারা এখন দলীয় পতাকা হাতে নিয়ে মাঠে নেমেছেন।

চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী রফী উদ্দিন ফয়সাল যুগান্তরকে বলেন, ‘এ আসন থেকে ৭ জনকে গুলশান কার্যালয়ে ডাকা হয়েছিল। সবাইকে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। দল থেকে যাকে মনোনয়ন দেবেন, আমরা সবাই তার পক্ষে কাজ করব।’

চট্টগ্রাম-১২ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী সৈয়দ সাদাত আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, পটিয়ার এই আসন থেকে আমরা ৪ জন গুলশান কার্যালয়ে বৈঠকে অংশ নিয়েছি। দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে ঐক্যে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। 

তিনি বলেন, রাজনীতি করার কারণে আমাকে গুম করা হয়েছে। নানাভাবে দমন-পীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছি। এরপরও দলীয় সিদ্ধান্তে আমি অটল। আশা করি দল যোগ্য ব্যক্তিকেই মূল্যায়ন করবে।

ঝালকাঠি-১ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হাবিবুর রহমান সেলিম রেজা বলেন, ‘বিগত দিনে রাজাপুর-কাঁঠালিয়া উপজেলার বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সব সময় খোঁজখবর নিয়েছি। তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে ভোটের প্রচারণায় নেমে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছি। এই আসনে মনোনয়ন পেলে ধানের শীষের বিজয় উপহার দিতে পারব।’

সিলেট বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জি কে গউছ বলেন, ‘দলের নির্দেশনা মেনেই ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা মাঠে নেমেছি। এখন সবাই ধানের শীষের পক্ষে কাজ করছি। দল থেকে একক প্রার্থী ঘোষণা করা হলে তার পক্ষে আমরা মাঠে থাকব।’

আর তৃণমূল নেতারা জানান, দীর্ঘদিন পর দলের মধ্যে এমন ঐক্যের আবহ দেখা যাচ্ছে। এতে কর্মীদের মনোবল বাড়বে, মাঠে ফিরবে আত্মবিশ্বাস। দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা মনে করছেন, এই ঐক্যই আগামী নির্বাচনের মূল শক্তি হবে। কেন্দ্রের কৌশল ও তৃণমূলের শ্রম একসঙ্গে মিশলে আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি বড় ব্যবধানে সাফল্য অর্জন করতে পারবে।

এদিকে ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে আজ ভার্চুয়ালি বৈঠক করবেন তারেক রহমান। তবে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা যেন সমর্থকদের গুলশান কার্যালয় কিংবা আশপাশের এলাকায় না আনেন, সে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম