বিএনপিকে আলোচনায় বসার আহ্বান জামায়াতের
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: প্রতীকী
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দেশের পরিস্থিতি নিয়ে খোলামেলা কথা বলতে বিএনপিকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ডা. আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের। তিনি বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী বিএনপির সঙ্গে কোনো ঝগড়ায় লিপ্ত হতে চায় না। যা-ই করছেন এবার বন্ধ করুন। আসুন আমরা একসঙ্গে বসি। দেশের এই পরিস্থিতি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করি। বিএনপিকে আহ্বান করব একসঙ্গে বসার। আমরা আলোচনা করব কীভাবে সত্যিকার অর্থে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ তৈরি হবে।’ রোববার রাতে রাজধানীর আল-ফালাহ মিলনায়তনে জামায়াত আয়োজিত ‘চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই আহ্বান জানান।
তাহের বলেন, একটি মহল বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিয়ে দেশে উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। আমরা এ পরিস্থিতির অবসান চাই। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হোক তা আমরা অবশ্যই চাই। কিন্তু জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নভেম্বরের মধ্যেই আমরা জুলাই সনদের আদেশের ওপর গণভোট চাই। দেশবাসী সবাই জানেন যে, গণভোটের ব্যাপারে সবাই একমত। তবে একটি দল জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনেই গণভোট চায়। যা সম্পূর্ণ অবাস্তব।
ডা. তাহের বলেন, কোনো কোনো মহল বলে যে, গণভোটে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন। তাদের জবাবে আমি বলতে চাই, জাতীয় সংকট থেকে উত্তরণের জন্য গণভোটে যে টাকা খরচ হবে জাতীয় প্রয়োজনে এটা কিছুই নয়। ফ্যাসিবাদীরা দেশের যে টাকা বিদেশে পাচার করেছে তা দিয়ে এক হাজারটি গণভোট করা সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি জানাচ্ছে। তাদের এ বক্তব্যের জবাবে আমি জানাতে চাই, ১৯৯১ সালে যদি জামায়াত নিষিদ্ধ থাকত তাহলে কী জামায়াতের সমর্থন নিয়ে বিএনপি সরকার গঠন করতে পারত? সেদিন যদি জামায়াত তাদের সমর্থন দিয়ে ক্ষমতায় না বসাত, তাহলে বিএনপি কি বর্তমান পর্যায়ে আসতে পারত? জবাব হলো-অবশ্যই না। বিএনপি এখন পতিত স্বৈরাচারীদের মতোই জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে একই ধরনের, একই ভাষায় হাস্যকর বক্তব্য দিয়ে অকৃতজ্ঞতার প্রমাণ দিচ্ছে। তারা এখন ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। দেশে বর্তমান যে সংকট চলছে তা বিএনপিই সৃষ্টি করেছে। জামায়াত কখনো ধোঁকা, প্রতারণা ও মুনাফিকির রাজনীতি করে না। বিএনপিই বরং ধোঁকা, প্রতারণা ও অকৃতজ্ঞতার পরিচয় দিচ্ছে।
ডা. তাহের বলেন, বিগত ৫৪ বছরে বারবার ক্ষমতার পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু জনগণের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। যারাই ক্ষমতায় গেছে তারাই ধোঁকা, প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে লুটপাট করেছে। দলীয়করণ, আত্মীয়করণ করেছে। জনগণ এ অবস্থার অবসান চায়। এ অবস্থার পরিবর্তন চায় জুলাই যোদ্ধারা।
তিনি বলেন, বিএনপি প্রথম থেকেই সংস্কারের ব্যাপারে অনীহা প্রকাশ করে আসছে। তারা নিজেদের সংস্কারের পিতা দাবি করছিল। কিন্তু বাস্তবে সব সময়ই সংস্কারের বিরোধিতা করছে। দুনিয়ার কোনো দেশেই নোট অব ডিসেন্টের ওপর গণভোট হয়নি। তিনি আরও বলেন, বিএনপি নেতারা জামায়াতের বিরুদ্ধে মিথ্যা বক্তব্য দিয়ে সংকট সৃষ্টির মিথ্যা অভিযোগ করছে। কিন্তু বাস্তবে তারা নিজেরাই মিথ্যা বক্তব্য দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করছে।
তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী কখনো মিথ্যা বক্তব্য দেয় না। বিএনপির মহাসচিব জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছেন। এখন মিথ্যা বক্তব্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে গিয়ে নিজেরাই বিপদে পড়েছেন। অথচ অভিযোগ করছেন যে, জামায়াত তাদের বিপদে ফেলেছে। বরঞ্চ তারা নিজেরাই মিথ্যা বক্তব্য দিয়ে বিপদে পড়েছেন। বিএনপির এক নেতা বলেছেন, তারা (জামায়াত) সংস্কার চায় না, জুলাই সনদ এবং গণভোট চায় না। আমাদের বক্তব্য হলো, জামায়াত কখন কোথায় বলেছে যে, তারা সংস্কার চায় না, জুলাই সনদ ও গণভোট চায় না। বিএনপির এই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ থাকলে তা জাতির সামনে পেশ করা উচিত।
তিনি আরও বলেন, ড. ইউনূস সরকার জনগণের সমর্থন নিয়েই ক্ষমতায় বসেছে। তার সততা, যোগ্যতা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও যোগ্যতা নিয়ে কারও কোনো প্রশ্ন নেই। কিন্তু বিএনপি বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলে ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে। এ ব্যাপারে সতর্ক থাকার জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, সরকারকে অবশ্যই নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। কোনো মহলের ফাঁদে পা না দেওয়ার জন্য তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান ও মাওলানা আবদুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মো. শাহাবুদ্দিন, মোবারক হোসাইন ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল। সঞ্চালনা করেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ।
এর আগে এদিন বিকালে রাজধানীর কাকরাইলে আইডিইবিতে আয়োজিত এক সেমিনারে অংশ নিয়ে তাহের বলেন, বিএনপির ভেতরে-ভেতরে ফ্যাসিস্ট হওয়ার একটা খায়েশ আছে মনে হচ্ছে। যে কারণে সংস্কার করে ফ্যাসিজমের যে রাস্তা আমরা বন্ধ করতে চেয়েছিলাম, এগুলো তারা বন্ধ করতে দিচ্ছে না।


