Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

একান্ত সাক্ষাৎকারে আসাদুল হাবিব দুলু

তিস্তা আজ মরা খাল, ফ্যাসিস্টের নতজানু নীতিতেই

Icon

মাহবুব রহমান, রংপুর

প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

তিস্তা আজ মরা খাল, ফ্যাসিস্টের নতজানু নীতিতেই

ছবি: সংগৃহীত

উত্তরাঞ্চলের প্রাণ তিস্তা আজ মৃতপ্রায়। একসময় যার তীরে গড়ে উঠেছিল সবুজ শস্যের সমারোহ। সেই তিস্তা এখন ধুধু বালুচর। হাহাকারে ভরা জনপদ। বিপন্ন জীববৈচিত্র্য ও মানুষের জীবিকা। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতি, পরিকল্পনার অভাব ও অব্যবস্থাপনার কারণে তিস্তার স্বাভাবিক প্রবাহ আজ বাধাগ্রস্ত। এই বাস্তবতায় তিস্তাপারের দুই কোটি মানুষের প্রাণের দাবি হয়ে উঠেছে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন। একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (রংপুর বিভাগ) ও সাবেক উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাহবুব রহমান, রংপুর।

যুগান্তর : আপনি তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য কেন আন্দোলন করছেন?

আসাদুল হাবিব দুলু : দীর্ঘদিন ধরে তিস্তাপারের দুই কোটি মানুষের দাবি, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হোক। একসময় তিস্তাপারের মানুষের গোলাভরা ধান ছিল। মুখে ভাওয়াইয়া গান ছিল। মানুষের ঘরে ঘরে আনন্দ ছিল। কোনো আভাব ছিল না। আর এখন দেখি গৃহহীন মানুষের শুধু হাহাকার, সর্বস্ব হারানো মানুষের কান্নার শব্দ। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে তিস্তাকে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় আনা সম্ভব হয়নি। তাই এই প্রমত্তা নদী আজ মরা খালে পরিণত হয়েছে। একসময় তিস্তার তীরের গৃহস্থদের গোলা ভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ ও গোয়াল ভরা গরু ছিল। বিগত সরকারের ভুল সিদ্ধান্ত ও দুর্বলতার কারণে আন্তর্জাতিক এই নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে আমরা বঞ্চিত। তিস্তা প্রকৃতরূপে ফিরে না এলে এই অঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হবে। তাই দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন ছাড়া বিকল্প পথ নেই।

যুগান্তর : তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে এই অঞ্চলের কী পরিবর্তন হবে বলে আপনি মনে করেন?

আসাদুল হাবিব দুলু : প্রতিবছর ভাঙনের কারণে তিস্তার প্রশস্ততা বেড়ে এখন সাড়ে আট কিলোমিটার চওড়া হয়েছে। সুষ্ঠু নদী ব্যবস্থাপনা থাকলে তা হয়তো কমিয়ে আনা সম্ভব হতো। এক-দেড় কিলোমিটারে সীমিত রাখা যেত। এতে আবাদি জমি, ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রক্ষা করা যেত। তাই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি তুলেছি প্রায় ১০ বছর আগে। সে সময় পতিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী রংপুরের জিলা স্কুলের মাঠের জনসভায় বলেছিলেন মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। কিন্তু ক্ষমতায় গিয়ে তা তিনি করেননি। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে দুই কোটি মানুষের জীবন-জীবিকার পরিবর্তন হবে। নতুন করে তিস্তা প্রাণ ফিরে পাবে। জীববৈচিত্র্য আজ যে সংকটের মুখে পড়েছে, তা থেকে উত্তরণ লাভ হবে। নদী ভাঙনে গৃহহীন পরিবারগুলো জমি ফিরে পাবে-আবার সেখানে জনবসতি গড়ে উঠবে। কৃষিতে ব্যাপক উৎপাদনের সম্ভাবনা দেখা দেবে।

যুগান্তর : তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে আপনি এ অঞ্চলের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সম্ভাবনা দেখছেন কি?

আসাদুল হাবিব দুলু : তিস্তার তীরে কৃষিভিত্তিক শিল্প-কলকারখানা গড়ে উঠবে। শুধু তা-ই নয়, তিস্তার মৎস্য সম্পদ আজ বিলুপ্তপ্রায়, তা রক্ষা করা সম্ভব হবে। জলজীবনে বৈচিত্র্য ফিরে আসবে-যা বিপন্ন পরিবেশকে সজীব করে তুলবে। আমাদের জিডিপিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। রংপুর দেশের খাদ্যশস্য ভাণ্ডার। কিন্তু এ অঞ্চলের মানুষের অভাব-অনটনের মধ্যে দিন কাটে। মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে এ থেকে আমরা পরিত্রাণ পাব। কৃষিভিত্তিক কলকারখানা স্থাপন করা হলে মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। দারিদ্র্যের কবল থেকে মানুষ মুক্তি পাবে।

যুগান্তর : তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ভারত-চীন কোনো বাধার কারণ হতে পারে কি?

আসাদুল হাবিব দুলু : এ নিয়ে চীন ও ভারতের অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েন, যা-ই থাক না কেন এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন করা সম্ভব। চীন এখন মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে বলছে ১২ হাজার কোটি টাকা লাগবে। এর আগে ৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট ছিল। এটি কোনো বিষয় না। সরকারের বর্তমান যে সক্ষমতা আছে, সেখানে দেশের আর্থিক ব্যয়ে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব। অন্যদিকে ভারত সবসময় দাদাসুলভ আচরণ করে। তিস্তা শুধু নয়, অভিন্ন ৫৪টি নদীতে বাঁধ দিয়ে ভাটির পানি প্রত্যাহার করায় দেশের নদ-নদীগুলোতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এজন্য ভারতের সঙ্গে আমাদের দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করে সমাধান করতে হবে। আমি মনে করি না, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ভারত কোনো বাধা হবে। এটি আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। ভারতের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।

যুগান্তর : বিগত সময়ে বিএনপি ক্ষমতায় ছিল, তখন তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেনি কেন?

আসাদুল হাবিব দুলু : সে সময় তিস্তার পানি সংকটের এই ভয়াবহতা ছিল না। তখন নদীতে যথেষ্ট পানি ছিল। নদী ভাঙন এত তীব্র ছিল না। এখন মাইলের পর মাইল নদী ভাঙনে জনবসতি, আবাদি জমি, বাড়িঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা বিলীন হয়ে যাচ্ছে। কয়েক লাখ মানুষ ফসলি জমিসহ বাড়িঘর হারিয়ে গৃহহীন হয়েছে। এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে তিস্তাপারের মানুষ আজ আন্দোলন করছে। তাই আমি মনে করি, এখনই সময় এই প্রকল্প বাস্তবায়নের।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম