সৈয়দপুর ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্প
সমাপ্তির আগেই যন্ত্রপাতির ওয়ারেন্টির মেয়াদ শেষ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
প্রকল্প সম্পন্ন এবং উৎপাদন শুরু-কোনোটিই হয়নি। অথচ এর মধ্যেই যন্ত্রপাতির ওয়ারেন্টির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এমন ঘটনা ঘটেছে এক হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের সৈয়দপুর ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
জানা যায়, দেশের উত্তরাঞ্চলের বিদ্যুৎ সংকট মেটাতে সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হয়। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) এবং চীনের ডংফেং ইলেকট্রিক ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশন যৌথভাবে ১৮ মাস মেয়াদি এই প্রকল্প নির্মাণের কাজ শুরু করে। কিন্তু অদ্যাবধি তা শেষ হয়নি। ডংফেং-এর বক্তব্য, সিমেন্স জার্মানির সরবরাহ করা বিদ্যুৎ প্রকল্পটির গ্যাস টারবানের ওয়ারেন্টি আরও অনেক আগেই শেষ হয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চুক্তি অনুসারে গ্যাস টারবাইন জেনারেটর সেট, ট্রান্সফরমারের মতো বড় যন্ত্রপাতির ওয়ারেন্টি শুরু হবে প্রাথমিক বাণিজ্যিক অপারেশন (আইসিও) শুরু হওয়ার পর। যার মেয়াদ থাকবে পরবর্তী ২৪ মাস। এর ব্যত্যয় হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে চিঠি চালাচালি হচ্ছে। প্রকল্প সম্পন্ন না হওয়া এবং উৎপাদনে যাওয়ার আগেই যন্ত্রপাতির ওয়ারেন্টি শেষ হওয়ার দায় কার, তা নিয়ে চলছে চিঠি চালাচালি। নতুন করে ওয়ারেন্টির জন্য অর্থ ব্যয় কে করবে, তা নিয়েও দেখা দিয়েছে দ্বিমত।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ১৬ অক্টোবর ডংফেং ইলেকট্রিক ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশন থেকে সৈয়দপুর ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. আসলাম উদ্দিন বরাবর একটি চিঠি পাঠানো হয়। সেখানে এই প্রকল্পসংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন রেফারেন্স উল্লেখ করে গ্যাস টারবাইন জেনারেটর সেটের কাজ প্রজেক্ট সমাপ্ত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এর ওয়ারেন্টির মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়েছে। এতে আরও উল্লেখ করা হয়, সিমেন্স থেকে ১৪ অক্টোবর ২০২৫ পর্যন্ত ওয়ারেন্টি দেওয়ার জন্য নতুন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ বাবদ সেখানে বড় অঙ্কের একটি অর্থ দিতে হবে। এই নবায়নের জন্য ডংফেং দায়ী নয় আর নতুন ওয়ারেন্টির জন্য যে টাকা দিতে বলা হয়েছে, তা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকেই (বিপিডিবি) দিতে হবে।
অন্যদিকে চলতি বছরের ২৩ অক্টোবর বিপিডিবির পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠানটির কেন্দ্রীয় সচিবালয়ের দপ্তরের সচিব মুহ. রাশেদুল হক প্রধান স্বাক্ষরিত একটি চিঠি ডংফেং ইলেকট্রিক ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশনকে পাঠানো হয়। সেখানে বিপিডিবির পক্ষ থেকে কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করার পাশাপাশি গ্যাস টারবাইন জেনারেটর সেটের ওয়ারেন্টিসহ গুরুত্বপূর্ণ সব যন্ত্রপাতির ওয়ারেন্টি ইনিশিয়াল কমার্শিয়াল অপারেশনের (আইসিও) পরই শুরু হওয়ার কথা বলা হয়। এক্ষেত্রে প্রধান চুক্তিপত্রের কোথায় এ বিষয়গুলো লেখা আছে, তাও উল্লেখ করা হয়। চিঠিতে বলা হয়, ডংফেং ইলেকট্রিক ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশনকেই চুক্তি অনুযায়ী সব মালামাল ও যন্ত্রপাতির ওয়ারেন্টি প্রদান করতে হবে।
এদিকে জানা যায়, নির্দিষ্ট কিছু স্বার্থান্বেষী মহলের সহযোগিতায় চীনের কোম্পানিটি প্রভিশনাল অ্যাকসেপটেন্স সার্টিফিকেট (পিএসি) এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ১০% পেমেন্ট পাওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি পিএসি এবং ১০% পেমেন্ট পেয়ে গেলে চুক্তি অনুযায়ী হাজার কোটি টাকার বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য যথাযথ ওয়ারেন্টি প্রদান এড়াতে ভিন্নপন্থা অবলম্বন করতে পারে বলেও মনে করছেন প্রজেক্ট-সংশ্লিষ্ট কেউ কেউ।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিমের বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। খুদে বার্তা পাঠালেও তিনি কোনো উত্তর দেননি। তবে বিপিডিবির কেন্দ্রীয় সচিবালয়ের দপ্তরের সচিব মুহ. রাশেদুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি যুগান্তরকে জানান, তিনি বর্তমানে একটি ট্রেনিংয়ে আছেন। এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু বলতে পারছেন না।

