Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল

শেখ হাসিনার রায় হতে পারে আগামী সপ্তাহে

আলমগীর মিয়া

আলমগীর মিয়া

প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

শেখ হাসিনার রায় হতে পারে আগামী সপ্তাহে

শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

জুলাই আন্দোলন চলাকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ছাত্র-জনতার ওপর মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নির্দেশে ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত টানা ৩৬ দিনের ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে দেড় হাজার নিরীহ ছাত্র-জনতাকে হত্যা করা হয়। আহত হন ৩০ থেকে ৩৫ হাজার। প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে দায়ের করা এ মামলার বিচার শুনানি শেষ হয়েছে। আজ শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে এ মামলায় রায়ের তারিখ ধার্য করবেন ট্রাইব্যুনাল। প্রসিকিউশনের সূত্র থেকে ধারণা পাওয়া যায়, আগামী সপ্তাহের যে কোনো দিন এ রায় ঘোষণা করা হতে পারে। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ দিন ধার্য করবেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। প্রসিকিউশন জানিয়েছে, ট্রাইব্যুনালে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের এটাই প্রথম কোনো মামলা। যার রায় ঘোষণার জন্য ধার্য আছে।

মামলার শুনানিতে উঠে এসেছে জুলাই আন্দোলনের সময় শেখ হাসিনা সেনাবাহিনীকে উসকে দিয়ে গৃহযুদ্ধ লাগানোর চেষ্টাও করেছিলেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা প্রসিকিউশনের মামলার বিচার শুনানি ও সাক্ষ্যপ্রমাণে এমন ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। জুলাই আন্দোলনে শহীদ পরিবারের সদস্য, আহত ব্যক্তি ও চিকিৎসকসহ মোট ৫৪ জন সাক্ষ্য দেন। তাদের সাক্ষ্যে জুলাইয়ের গণহত্যা, নৃশংসতা, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়কার গুম-খুনসহ নানা ভয়ংকর নির্যাতনের চিত্র উঠে আসে। প্রসিকিউশন জানিয়েছে, ট্রায়ালে যেসব সাক্ষ্য ও প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে তা পৃথিবীর যে কোনো আদালতে আসামিদের অপরাধ প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট। প্রসিকিউশন শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি কামনা করছেন।

এদিকে শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির রায় ঘোষণাকে ঘিরে দেশজুড়ে নিরাপত্তা উদ্বেগ তৈরি করেছে শেখ হাসিনা ও তার দোসররা। নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ওই দিনকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও তাদের অপকর্ম ও নাশকতামূলক তৎপরতা পর্যবেক্ষণে রেখেছে। ইতোমধ্যে রায় প্রদানকে ঘিরে সুপ্রিমকোর্ট, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এলাকা, অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় ও বার ভবনের নিরাপত্তার স্বার্থে জাতীয় ঈদগাহ মাঠে বহিরাগত প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। সুপ্রিমকোর্টের একটি সূত্র জানিয়েছে, বুধবার সুপ্রিমকোর্টের পক্ষ থেকে সেনা মোতায়েন চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জ্যেষ্ঠ প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রায় ঘিরে সরকারের বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডার অংশ হিসাবে দেশজুড়ে নৈরাজ্যের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে আওয়ামী লীগ। তবে এটিকে থ্রেড টু জাস্টিস মনে করি না। বিচার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য তারা এমনটা করছে। তিনি বলেন, আইনানুগভাবে বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এখন দেশে যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে, দৃঢ়তার সঙ্গে এ ধরনের পদক্ষেপকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রুখে দেবে। এর আগে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার বলেন, আওয়ামী লীগ ট্রাইব্যুনাল বা আদালত ফেস (মুখোমুখি) না করে রাস্তাঘাটে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছে। যানবাহনে আগুন দিচ্ছে।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে পাঁচটি মামলার বিচার চলছে। এই পাঁচ মামলার মধ্যে জুলাই হত্যাকাণ্ডে মাস্টারমাইন্ড হিসাবে এক মামলার রায় হতে যাচ্ছে শিগগিরই। যেটির তারিখ ধার্য হবে আজ। অন্য মামলাগুলোর মধ্যে চলতি বছর ২ জুলাই আদালত অবমাননার মামলায় তাকে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয় তাকে। এটিই হাসিনার প্রথম সাজা। আওয়ামী লীগের শাসনামলে গুম-খুন ও নির্যাতনের ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দুটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এ ছাড়া মতিঝিলের শাপলা চত্বরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের হত্যা ও নির্যাতনের অভিযোগে করা একটি মামলায়ও শেখ হাসিনার বিচার চলছে।

২৩ অক্টোবর মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের তারিখ নির্ধারণের জন্য ১৩ নভেম্বর দিন ধার্য করেন।

এ মামলার অপর দুই আসামি হলেন-সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। এর মধ্যে মামুন নিজের দোষ স্বীকার করে ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হয়েছেন। তিনি এই গণহত্যার পেছনের ঘটনা উন্মোচন করেন। একই সঙ্গে নির্দেশদাতা এবং বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের নামও উঠে আসে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়েছিল রাষ্ট্রপক্ষ। তারা বলেছেন, আগামী প্রজন্মের জন্য এমন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা দরকার, যাতে খুনের রাজনীতি বন্ধ হয়। অন্যদিকে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের খালাস প্রার্থনা করেন। আর ট্রাইব্যুনাল বলেছেন, এই আদালত ন্যায় বিচার নিশ্চিত করবেন।

১০ জুলাই শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আন্দোলন দমনে ১৪০০ জনকে হত্যার উসকানি, প্ররোচনা ও নির্দেশ দান, ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসেবিলিটি’ এবং ‘জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজের’ মোট পাঁচ অভিযোগে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১। এর মধ্য দিয়ে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রথম মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়। ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত ১০৩ দিনে এই মামলার বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন হয়।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম