মুশফিকের ম্যাচে বাংলাদেশের জয়
মুশফিকুর রহিমের শততম টেস্ট জয় রাঙিয়ে আইরিশদের বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয়ের উৎসব করল বাংলাদেশ। রোববার মিরপুরে। ছবি-বিসিবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
মিরপুরে এমন দৃশ্য আগে কখনো দেখা যায়নি। চতুর্থ ইনিংসে সফরকারী দলের ঘণ্টার পর ঘণ্টা টিকে থাকার ব্যাপারটি সত্যিই বিরল। বাংলাদেশের স্পিন আক্রমণের মুখে প্রতিপক্ষ দাঁতে দাঁত চেপে লড়ে যাবে-সাম্প্রতিক ইতিহাসে এমন দৃষ্টান্ত নেই। আয়ারল্যান্ড দেখাল কাজটা অসম্ভব নয়। রোববার ঢাকার টেস্টের পঞ্চমদিনে ৫০৯ রানের অবাস্তব লক্ষ্য তাড়া করতে নামা আয়ারল্যান্ডের সেই প্রতিরোধ শেষ পর্যন্ত ভাঙেন হাসান মুরাদ। ছয় ঘণ্টারও বেশি সময় ব্যাট করে ২৫৯ বলের ধৈর্যশীল ইনিংসে অপরাজিত ৭১ রান করেন কার্টিস ক্যাম্ফার। তার সঙ্গে গ্যাভিন হোয়েও দীর্ঘ সময় লড়াই করেন। ৩১ ওভারের প্রতিরোধ ভেঙে মুরাদ টানা দুই বলে হোয়ে এবং শেষ ব্যাটার ম্যাথ হামফ্রিসকে আউট করলে স্বাগতিকরা ২১৭ রানের জয় তুলে নেয়। দুই টেস্টের সিরিজ বাংলাদেশ জিতেছে ২-০ ব্যবধানে। সেঞ্চুরি ও ফিফটিতে ক্যারিয়ারের শততম টেস্ট রাঙিয়ে ম্যাচসেরা মুশফিকুর রহিম। টেস্টে দেশের হয়ে সর্বোচ্চ আটবার ম্যাচসেরা হলেন তিনি। দুই টেস্টে ১৩ উইকেট নিয়ে সিরিজসেরা তাইজুল ইসলাম।
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আগে কখনো কোনো সফরকারী দল চতুর্থ ইনিংসে ১০০ ওভার টিকতে পারেনি। কখনো ২৫০ রানও করতে পারেনি। আগে যা হয়নি সেটাই করে দেখাল আয়ারল্যান্ড। আইরিশরা দ্বিতীয় ইনিংসে ১১৩.৩ ওভারে ২৯১ রান করে অলআউট হয়। প্রথম ইনিংসে তারা করেছিল ২৬৫ রান। বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ৪৭৬ এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ২৯৭/৪-এ ইনিংস ঘোষণা করে।
১৭৬/৬ নিয়ে শেষ দিন শুরু করে সফরকারীরা। মাত্র চার উইকেট হাতে নিয়ে আয়ারল্যান্ড পঞ্চমদিনে ব্যাট করেছে ৫৯.৩ ওভার। কাল এক ক্যাম্ফারই খেলেছেন ১৬৬ বল। যখন হাসান মুরাদের বল স্টাম্প উড়িয়ে দিল ম্যাথু হামফ্রিসের, তখন জয়ের উচ্ছ্বাসে চারদিক রঙিন হয়ে ওঠে। সেই উল্লাসের ফাঁকেই সামনে এগিয়ে যান লিটন দাস। ক্যাম্ফারের কাঁধে হাত রেখে জানান শ্রদ্ধা। কাছে এসে কথা বলেন, মুশফিকও। ধৈর্য ও দক্ষতার যে অসাধারণ মেলবন্ধন ক্যাম্ফার দেখিয়েছেন, তা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। তার সঙ্গীরাও কম যাননি। গ্যাভিন হোয়ে (১০৪ বলে ৩৭), জর্ডান নিল (৪৬ বলে ৩০), অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইনের (৫৩ বলে ২১) সৌজন্যে আয়ারল্যান্ড গড়েছে মিরপুরে চতুর্থ ইনিংসে সফরকারী দলের সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ড। এখান থেকে শিক্ষা নেওয়ার কথা জানালেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন। তিনি বলেন, ‘দারুণ লড়াই করেছে তারা। টেস্টের সৌন্দর্য তো এখানেই। এই প্রতিরোধ থেকে শেখার আছে। এরকম অবস্থায় পড়লে আমরাও চেষ্টা করব এভাবে লড়তে।’
এ ম্যাচটি ছিল মুশফিককে ঘিরেই। অনেক আয়োজনও ছিল। সেঞ্চুরি ও হাফ সেঞ্চুরি করে রাঙিয়েছেন নিজের শততম টেস্ট। হয়েছেন ম্যাচসেরাও। আগের দিন সাকিব আল হাসানকে ছাড়িয়ে তাইজুল ইসলাম হয়ে যান বাংলাদেশের সর্বোচ্চ টেস্ট উইকেট শিকারি। রোববার তিনিদেশের প্রথম বোলার হিসাবে টেস্টে ২৫০ উইকেট নিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত তাইজুল নেন চার উইকেট। মুরাদও সমান চার উইকেট নেন। শ্রীলংকার সাবেক বাঁ-হাতি স্পিনার ও বাংলাদেশের সাবেক স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথের সঙ্গে যৌথভাবে সবচেয়ে কম ম্যাচ খেলে টেস্টে ২৫০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করলেন তাইজুল। ষষ্ঠ বাঁ-হাতি স্পিনার হিসাবেও তাইজুল টেস্টে পেলেন ২৫০ উইকেট।
ম্যাচের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি মুশফিকুর রহিমের শততম টেস্টে করা স্মরণীয় সেঞ্চুরি। লিটন দাসের ১২৮ রানের দারুণ ইনিংস এবং দ্বিতীয় ইনিংসে মুমিনুল ও সাদমানের অর্ধশতক বাংলাদেশকে দিয়েছে বড় লিড, যা শেষ পর্যন্ত দুই স্পিনারের হাত ধরে এনে দেয় বড় জয়। আপাতত বাংলাদেশের কোনো টেস্ট ম্যাচ নেই। আগামী বছর মার্চে পরবর্তী টেস্ট সিরিজ। তবে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ২৭ নভেম্বর থেকে টি ২০ সিরিজে মাঠে নামবে বাংলাদেশ।

