ক্ষমতা বা আসনের জন্য কারও সঙ্গে সমঝোতা নয়
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
রাজধানীর শাহবাগের শহীদ আবু সাঈদ কনভেনশন সেন্টারে রোববার সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা করছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম -যুগান্তর
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম বলেছেন, তারা এককভাবে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার চেষ্টা করছেন। ক্ষমতার জন্য কিংবা আসনের জন্য তারা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সমঝোতা করবেন না। যদি একটি আসনও না পায় এনসিপি তার আদর্শ, নীতি ও লক্ষ্যে অটুট থাকবে। রোববার রাজধানীর শাহবাগের শহীদ আবু সাঈদ কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে দলটির আহ্বায়ক এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০ নভেম্বর পর্যন্ত ৩০০ আসনের জন্য দলটির মনোনয়নপত্র বিক্রি হয় ১ হাজার ৪৮৪টি।
নাহিদ ইসলাম বলেন, তারা এককভাবে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তারা তাদের নিজেদের রাজনীতি নিয়ে জনগণের কাছে যেতে চান। তবে তাদের নির্বাচনি ইশতেহার, বিভিন্ন দাবি ও নীতি-আদর্শের সঙ্গে যদি কোনো দল বা শক্তি ঐকমত্য পোষণ করে, তাহলে তাদের সঙ্গে আলোচনা থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে তারা ওপেন (উন্মুক্ত) রয়েছেন। তাদের কোনো ধরনের রাজনৈতিক সমঝোতা যদি হয়, সেটা একটা নীতিগত ও আদর্শিক জায়গা থেকে হতে হবে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা যদি কারও সঙ্গে কোনো ধরনের জোট বা আলোচনায় যাই, আমরা খুবই খোলামেলাভাবে সেটা নিয়ে কথা বলতে প্রস্তুত। দেশবাসীর কাছে আমরা বলব, এখানে কোনো গোপন কিছু নেই। কিন্তু এক ধরনের মিডিয়া ট্রায়াল করা হচ্ছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে অনেক ধরনের গুঞ্জন ও মিথ্যা সংবাদ করে এনসিপিকে একদিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। আমাদের মধ্যে যত মতবিরোধ থাকুক না কেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরের সঙ্গে আলোচনা করছে, বিভিন্ন প্রোগ্রামে যাচ্ছে, আলোচনা করছে। এটাই একটা গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির অংশ।
নাহিদ ইসলাম বলেন, জুলাই সনদকে নিয়ে দরকষাকষি করে বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এখন মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। এক সময় তারা বন্ধু ছিল। এখন ভাগবাঁটোয়ারা ও সমঝোতার নির্বাচন করার পরিকল্পনা তারা করছে। এ ধরনের নির্বাচন হলে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এনসিপি এ ধরনের সমঝোতা বা বন্দোবস্তের নির্বাচনে কখনোই সায় দেবে না। বরং তারা এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে।
আগামী নির্বাচনের জন্য ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নেই মন্তব্য করে নাহিদ বলেন, তারা আগে থেকে এটা বলে আসছিলেন যে বাংলাদেশের নির্বাচনি সংস্কৃতিতে জবরদখল, প্রশাসনের দখল, কালোটাকার ব্যবহার, পেশিশক্তির ব্যবহার ইত্যাদি সব সময় দেখে এসেছেন। শুনে এসেছেন। ফ্যাসিবাদী সময়ে মানুষ ভোট দিতেও যেতে পারেনি। নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন, সরকার ও প্রশাসনের যে শক্ত অবস্থানে থাকা প্রয়োজন, সেটা তাদের (এনসিপি) কাছে মনে হচ্ছে না। বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে বলে বেড়াচ্ছেন, প্রশাসনকে কীভাবে দখল করতে হবে, প্রশাসনকে কীভাবে হাতে রাখতে হবে-এসব দেখতে পাচ্ছি।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময় করব। তাদের স্বপ্নের কথা শুনব। তাদের দক্ষতা-যোগ্যতার কথা শুনব। এনসিপির পক্ষ থেকেও আমরা আমাদের পরিকল্পনার কথা তা৫দের বলব। সর্বোপরি একটা স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে এখান থেকে আমরা ৩০০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে চাই। এখানে (সাক্ষাৎকার) একটা প্রাথমিক যাচাই-বাছাই হবে। পরে আমাদের রাজনৈতিক পর্ষদ, যারা কেন্দ্রীয় সংসদীয় বোর্ড হিসাবে কাজ করবে, তারা চূড়ান্ত মনোনয়ন দেবে। এই যাচাই-বাছাইয়ের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেই আমরা তালিকাটি ঘোষণা করতে পারব বলে আশা করছি।
সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী জানান, তারা এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৪৮৪টি মনোনয়নপত্র বিতরণ করেছেন। অর্থাৎ প্রতি আসনে তাদের গড়ে পাঁচজন করে প্রার্থী আছেন। অনলাইন ও অফলাইন দুটি প্রক্রিয়াতেই মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হয়েছে। অফলাইনে ৭৬১ জন, অনলাইনে ৭২৩ জন মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। রোববার ও সোমবার তাদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। এর জন্য ১০টি বিভাগ অনুযায়ী ১০টি বোর্ড করা হয়েছে।
দলের উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, আগে মানুষ যেভাবে দল ও মার্কা দেখে ভোট দিত, মাঠের সেই অবস্থা আর নেই। আগামী নির্বাচনে মানুষ বয়স, মার্কা ও পুরোনো দলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে কাউকে বিজয়ী করে আনবে, সেই সময় শেষ হয়ে গেছে।
এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা রাজনীতিতে নতুন ধারা যুক্ত করতে চাই। জবাবদিহির সংস্কৃতি যুক্ত করতে চাই।’ এ সময় অন্যদের মধ্যে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতা মুজাহিদুল ইসলাম, আতিক মুজাহিদ, আবদুল্লাহ আল আমিন, মো. আতাউল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
