Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

ডিসিসিআইর সেমিনার

শিল্পে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ বড় চ্যালেঞ্জ

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

শিল্পে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ বড় চ্যালেঞ্জ

শিল্প খাতে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যা উৎপাদন, বিনিয়োগ এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে। দেশের শিল্প ও অর্থনীতিকে বাঁচাতে হলে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার সম্প্রসারণ এবং টেকসই জ্বালানি কাঠামো গঠন ও অপচয় রোধে সরকারকে নজর দিতে হবে।

শনিবার রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার ভবনে ‘বাংলাদেশের শিল্প খাতে জ্বালানি সক্ষমতা নীতিমালা; টেকসই উন্নয়নের পথনির্দেশনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এবং গবেষণা সংস্থা সানেম যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে। ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ।

স্বাগত বক্তব্যে তাসকীন আহমেদ বলেন, জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান ৩৫ শতাংশের বেশি। অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয় হলো, দেশের মোট গ্যাসের ১৯ শতাংশ ব্যবহার করে শিল্প খাত। এই বিশাল খাতটি বর্তমানে এক গভীর অস্তিত্ব সংকটের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। ২০২৩-২৪ সালে গ্যাসের দাম ১৭৮ শতাংশ বাড়ানো হয়। সম্প্রতি শিল্প খাতে আরও ৩৩ শতাংশ দাম বৃদ্ধির ফলে টেক্সটাইল, স্টিল ও সারের মতো সেক্টরগুলোর উৎপাদন ৩০-৫০ শতাংশ কমে গেছে। বিশেষ করে এসএমই খাতের কার্যক্রম গুটিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছে। এ অবস্থায় শিল্প খাতে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জ্বালানির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করা শুধু নীতিগত অগ্রাধিকারই নয়, বরং টেকসই শিল্পায়নের পূর্বশর্ত।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জালাল আহমেদ বলেন, ২০৩০ সালের পর দেশীয় গ্যাসের মজুত হ্রাস পাওয়ার বিষয়টি বলা হলেও অফশোর-অনশোরে গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রমে তেমন উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম পরিলক্ষিত হয়নি। তাই আমরা নিজস্ব উৎপাদিত গ্যাস ব্যবহার করতে পারছি না। আমাদের আমদানি করা গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল হতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, জ্বালানি খাতে সরকার ক্রমাগত ভর্তুকি দিচ্ছে। কারণ এর সঙ্গে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। জ্বালানি খাতে বর্তমানে দক্ষতার হার ৩০ শতাংশের কাছাকাছি রয়েছে। এ দক্ষতা আরও বাড়ানো গেলে বিদ্যুৎ ঘাটতি হ্রাস পাবে।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান। আরও বক্তব্য দেন-এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার রিসার্চ কাউন্সিলের (বিইপিআরসি) সদস্য ড. রফিকুল ইসলাম, পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. এম. রেজওয়ান খান, আনোয়ার গ্রুপের চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন, সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আমিরুল হক, সাসটেইনেবল অ্যান্ড রিনিউএবল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসআরইএ) সভাপতি মোস্তফা আল মাহমুদ, এলপিজি অটোগ্যাস স্টেশন ও কনভার্সন ওয়ার্কশপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি. ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুল মাওলা, বিজিএমইএর সহসভাপতি বিদিয়া অমৃত খান এবং ইডকলের উপ-প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম মনিরুল ইসলাম প্রমুখ।

ড. রফিকুল ইসলাম বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা, খাদ্য নিরাপত্তার পরই জ্বালানি নিরাপত্তা বিষয়টি অতীব গুরুত্বপূর্ণ। তাই এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সব স্টেকহোল্ডারের সহযোগিতা প্রয়োজন। জ্বালানি উৎপাদনে আমদানির ওপর বেশিমাত্রায় নির্ভরশীল হলে ব্যবসায়িক খরচ ক্রমাগত বাড়বে। তাই দেশীয় উৎসের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া জরুরি।

ড. এম রেজওয়ান খান বলেন, বিদ্যমান শুল্ক কাঠামো পরিবর্তন না হলে এ খাতের সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়। এছাড়াও পিক ও অফ-পিক সময়ে বিদ্যুতের দাম পার্থক্য নির্ধারণ করতে হবে।

মনোয়ার হোসেন বলেন, প্রয়োজনীয় জ্বালানি না পাওয়ার কারণে প্রায়ই শিল্পে ৫০ শতাংশ পণ্য উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, বিষয়টি মোটেও কাম্য নয়। তাই এ খাতে বিদ্যমান সমস্যাগুলো অতি দ্রুত নিরসনে জোর দিতে হবে।

মোস্তফা আল মাহমুদ বলেন, জ্বালানিবিষয়ক ভালো নীতিমালা থাকলেও বাস্তবায়ন অবস্থা মোটেই আশাব্যঞ্জক নয়। যেহেতু উৎপাদিত বিদ্যুতের ৫০ শতাংশ শিল্প খাতে ব্যবহৃত হয়, তাই এনার্জি অডিট বাধ্যতামূলকের বিকল্প নেই।

ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুল মাওলা বলেন, বাংলাদেশে প্রায় ২৩০০টি এলপিজি অটোগ্যাস ফিলিং স্টেশন রয়েছে, যেখানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের উদ্যোগ নিলে প্রায় ৭০০-৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব, যার জন্য একটি কার্যকর নীতিমালা প্রণয়নের কোনো বিকল্প নেই।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম