সচিবদের সঙ্গে ইসির বৈঠক
প্রতিকক্ষে দুই বুথ ভোটের সময় বাড়বে এক ঘণ্টা
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
একই দিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হলেও কেন্দ্র ও কক্ষ বাড়ানোর পক্ষে নয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে ভোটগ্রহণ দ্রুত করতে প্রতিকক্ষে অন্তত দুটি করে গোপন স্থান (স্ট্যাম্পিং বুথ) রাখার পরিকল্পনা রয়েছে ইসির। একই সঙ্গে ভোটগ্রহণের সময় ১ ঘণ্টা বাড়বে। ভোটগ্রহণ সকাল সাড়ে ৭টায় শুরু হয়ে সাড়ে ৪টায় শেষ হবে। মক ভোটিংয়ের অভিজ্ঞতা থেকে এ পরিকল্পনা করছে কমিশন। এক্ষেত্রে আইন ও বিধিমালার লংঘন হবে না বলে মনে করছে ইসি।
প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, একটি ভোটকক্ষে একটি গোপন কক্ষ থাকে। আর ভোটগ্রহণ হয় সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। প্রচলিত এ নিয়ম ভাঙতে যাচ্ছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের সঙ্গে বৈঠকে এ তথ্য জানিয়েছে ইসি। সিইসির সভাপতিত্বে বৈঠক হয়। বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। যদিও ইসির এ পরিকল্পনা বাস্তবসম্মত কী না-তা নিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রশ্ন রয়েছে।
জানা যায়, বৈঠকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালানোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। গণভোট নিয়ে নির্বাচন কমিশন, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট অন্যরা প্রচার চালাবে। পাশাপাশি ঋণখেলাপিরা আইন ও নিয়মের ফাঁকফোকরে যেন পার না পায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে নির্দেশ দিয়েছে ইসি। নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকালে কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তাকে তাৎক্ষণিক সরিয়ে দেওয়া হবে। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা যাতে স্থানীয় প্রভাবশালীদের আতিথেয়তা গ্রহণ না করেন, সেজন্য কঠোর হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। তাদের ভাতা বাড়ানোরও সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠকে আলোচনার বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। তবে ভোটগ্রহণের সময় বাড়ানোর বিষয়ে তিনি কিছু জানাননি। এক ভোটকক্ষে দুটি ভোট দেওয়ার স্থান নির্ধারণের বিষয়ে সচিব বলেন, ‘একটি ভোটকক্ষে দুটি গোপন কক্ষ (স্ট্যাম্পিং বুথ) রাখার পরিকল্পনা রয়েছে যাতে ভোট দেওয়ার সময় কমে আসে এবং ভোটারদের প্রবাহ বজায় থাকে। মক ভোটিংয়ের প্রাথমিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ভোটকেন্দ্র বাড়ানোর প্রয়োজন নাও হতে পারে, তবে প্রতিটি বুথে গোপন কক্ষ বাড়ানো লাগতে পারে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দুটি গোপন কক্ষ করলে এটা আইনগত কোনো বাধা দেখছি না।’
আগামী ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে হবে ভোটগ্রহণ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতি ৪০০ জন নারী এবং ৫০০ জন পুরুষের জন্য একটি করে ভোটকক্ষ ছিল। ব্যয় কমাতে এবার প্রতি ৫০০ জন নারী এবং ৬০০ জন পুরুষের জন্য একটি করে ভোটকক্ষ নির্ধারণ করা হয়েছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে এবার গণভোট হতে যাচ্ছে। ভোটাররা দুটি ব্যালটে ভোট দেবেন। এ প্রক্রিয়ায় ভোট দিতে যেমন বেশি সময়ের প্রয়োজন হবে; তেমনি ভোটগণনা করতেও সময় বেশি লাগবে। বৈঠকে এসব বিষয়ে ইসির কাছে জানতে চান কয়েকজন সচিব। এ সময় ইসি তার পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে।
যদিও ইসির এই পরিকল্পনা নিয়ে নির্বাচন কর্মকর্তাদের মধ্যেই প্রশ্ন রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা জানান, গ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কক্ষের সংখ্যা কম থাকে ও খুব ছোট হয়। সেখানে একটি কক্ষে ভোট দেওয়ার দুটি গোপন স্থান তৈরি বাস্তবসম্মত নয়। এছাড়া ভোটকক্ষে ভোটার সংখ্যা বেশি হওয়া ভোট নিতে এবং সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের পৃথক ব্যালট গুনতে অনেক রাত হতে পারে। এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসি সচিব আখতার আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, ‘বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। সবকিছু খতিয়ে দেখছি।’
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে শান্তিশৃঙ্খলা নিশ্চিতকরণ, ঋণখেলাপি সংক্রান্ত তথ্য ব্যবস্থাপনা, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার প্যানেল প্রস্তুত, আগাম পোস্টার-ব্যানার অপসারণসহ অন্তত ২২ ইস্যু নিয়ে সচিবদের সঙ্গে এ বৈঠক হয়। বৈঠক চলে ২ ঘণ্টা। এতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবরা অংশ নেন। এছাড়া বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের প্রধানরা ছিলেন। ইসির পক্ষে চার কমিশনার, ইসির সিনিয়র সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন।
সূত্র জানায়, বৈঠকে সচিবরা নির্বাচনি কাজে ইসিকে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন। জনপ্রশাসন সচিব বলেন, নির্বাচনে কোনো কর্মকর্তার বিষয়ে ইসি পর্যবেক্ষণ দিলে ওই কর্মকর্তাকে দায়িত্ব থেকে তাৎক্ষণিক সরিয়ে দেওয়া হবে। ঋণখেলাপিরা আইনি ফাঁকফোকরে নির্বাচনে যাতে অংশ নিতে না পারে, সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রস্তুতি নিতে বলেছে ইসি। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব জানান, গণভোট ও সংসদ নির্বাচনের প্রচার কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। সামনের দিনেও তা আরও বাড়বে।
বৈঠকে জাতীয় নির্বাচন, গণভোট ও প্রবাসী ভোট-তিন বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে জানিয়ে ইসি সচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ বিষয়গুলোকে কেন্দ্র করে পুরো প্রস্তুতি পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘যে বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিতে বলা হয়েছে সেগুলো হলো-গণভোটের প্রচার, আউট অব কান্ট্রি ভোটের রেজিস্ট্রেশন, কন্ডাক্ট রুলস, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের অপব্যবহার রোধ ও ভোটার এডুকেশন।’
ভোটগ্রহণে জড়িত কর্মকর্তাদের ভাতা ও আর্থিক সুবিধা বাড়ানো হচ্ছে জানিয়ে ইসি সচিব বলেন, ‘একটি কথা আসছে, যারা নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করেন তারা দেখা যায় যে বিভিন্ন সময় স্থানীয় প্রভাবশালীদের আতিথেয়তা গ্রহণ করেন। এ কথাটা বারবারই আমাদের কানে আসছে। তাই এবার বলেছি, এটা যেন কোনো অবস্থাতেই না হয়। না হওয়ার জন্য আমরা প্রধানত যে কাজটা করেছি সেটা হচ্ছে যে, তাদের ভাতার পরিমাণটা বাড়ানো।’
নির্বাচনসংক্রান্ত তথ্য বা কোনো অভিযোগ দেওয়ার কাজ ইসি সমন্বয় করছে জানিয়ে সচিব বলেন, ‘একটি কো-অর্ডিনেশন পয়েন্টের কথা চিন্তা করা হয়েছে- যেখানে নির্বাচন কমিশন, মিনিস্ট্রি অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স, প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়, আর্মড ফোর্সেস ডিভিশন, মিনিস্ট্রি অব পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এবং পোস্ট অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন মিনিস্ট্রি-এগুলো নিয়ে আমরা সমন্বয় করছি।’

