Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

জামায়াতের তালিকা থেকে বাদ পড়ছেন ১০০ প্রার্থী

Icon

শহীদুল ইসলাম

প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

জামায়াতের তালিকা থেকে বাদ পড়ছেন ১০০ প্রার্থী

ফাইল ছবি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পূর্বঘোষিত তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারেন ৮০ থেকে ১০০ প্রার্থী। ৫ দফা দাবিতে চলমান যুগপৎ আন্দোলনে শরিক অপর ৭টি দলের জন্য এসব আসন ছাড় দেবে জামায়াত। দলের নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, নানা শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা এবং নিজ দলের প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের ভিত্তিতে এসব প্রার্থী বদল করা হবে। জামায়াতের প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব যোবায়ের বলেছেন, সংখ্যার ভিত্তিতে আসন ভাগাভাগি নয়। জামায়াতসহ ৮ দলের নেতারা একমত যে, যাকে যেখানে দিলে বিজয়ী হতে পারবেন, তাকে সেখানে প্রার্থী করা হবে। রাষ্ট্রক্ষমতায় ইসলামকে নিয়ে আসতে চাই।

সংসদ নির্বাচনের আগে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোটসহ ৫ দফা দাবিতে অভিন্ন, যুগপৎ ও সম্মিলিতভাবে আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় এবার নির্বাচনি সমঝোতার দিকে এগোচ্ছে দলগুলো। ‘ইসলামি দলগুলোর সব ভোট এক বাক্সে’ আনাই দলগুলোর টার্গেট। এরই অংশ হিসাবে একক প্রার্থী ঠিক করতে কাজ করছে ৮টি ইসলামি দল। এ নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি দলগুলো মাঠপর্যায়ে নিজেদের প্রার্থীর জনপ্রিয়তা নিয়েও জরিপ করছে। চলমান বিভাগীয় সমাবেশের কর্মসূচি শেষ হলে ৮ দলের লিয়াজোঁ কমিটি আলোচনা করে প্রার্থীতালিকা চূড়ান্ত করবে।

জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত আন্দোলনসহ ৮ দলের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, কোন দল কত আসনে নির্বাচনে আগ্রহী বা বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনাইবা কতটুকু, সেটি মাঠ জরিপের রিপোর্টেই পরিষ্কার এবং এর ভিত্তিতেই তালিকা প্রস্তুত হচ্ছে। তবে কোন দলকে কত আসন দেওয়া হবে, তা নিয়ে কিছুটা জটিলতা রয়েছে। ইসলামের বৃহত্তর স্বার্থে সব দলের নেতারাই সর্বোচ্চ ছাড়ের মানসিকতার কথা জানিয়েছেন। ইসলামি দলগুলো সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক আসনে বিজয়ী হয়ে আসুক, এটাই টার্গেট। ৮ দলে শীর্ষ নেতাদের প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে কীভাবে সবাইকে পাশ করিয়ে আনা যায়।

আসন বণ্টন নিয়ে কিছুটা জটিলতার আভাস দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। দলটির দপ্তর সম্পাদক মাওলানা লোকমান হোসেন জাফরী যুগান্তরকে বলেন, আমরা এবং জামায়াতে ইসলামী বড় দল। আমাদের এ দুই দলের আসন সংখ্যা হবে সমান সমান। তবে জামায়াত যেহেতু আগে পার্লামেন্টে ছিল, সেক্ষেত্রে তারা একটু বেশি পেতে পারে। আমরা ১২০, জামায়াত ১৩০ এবং বাকি ৫০টি আসনে অন্য ৬টি দলের প্রার্থী দেওয়া যেতে পারে। তবে জোটে দলের সংখ্যা বাড়ার সম্ভাবনা আছে। শেষ পর্যন্ত ১০ বা ১১ দল হতে পারে। সেক্ষেত্রে তাদের জন্যও আসন ছাড়তে হবে। আমাদের তালিকা চূড়ান্ত পর্যায়ে। তিনি যুগান্তরকে জানান, ৩০০ আসনে দেওয়ার মতো প্রার্থী তাদের আছে। এর মধ্যে ৪০-৫০ জনের পাশের সম্ভাবনা রয়েছে।

খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী যুগান্তরকে বলেন, আমরা ২০টি আসন চাইব। এই দলের আরেক অংশের যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ হোসেন আকন্দ ৫টি আসনে প্রার্থী দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছেন। তবে আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান যে সিদ্ধান্ত দেবেন, তা মেনে নেবেন বলে যুগান্তরকে জানান তিনি। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টিও প্রার্থী জরিপ ও তালিকা করছে বলে জানা গেছে।

তথ্যমতে, জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক ও খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী ঢাকা থেকে প্রার্থী হবেন, এটা নিশ্চিত। ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম প্রার্থী হবেন না বলে জানা গেছে। এখন পর্যন্ত অবশ্য সব আসনেই ৮ দলের একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। এর মধ্যে জামায়াতের প্রার্থী আছেন প্রায় সব আসনে। সমঝোতা হলে অনেক রদবদল হবে। জানতে চাইলে জামায়াত নেতা অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব যোবায়ের বুধবার যুগান্তরকে বলেন, যিনি বিজয়ী হতে পারবেন, তাকেই প্রার্থী করা হবে। যেখানে যাকে দিলে পাশ করবেন, তাকে সেখানে প্রার্থী করা হবে। কতটি আসন ছাড়া হবে, সেটা অবশ্য নির্দিষ্ট করে বলতে রাজি হননি এই জামায়াত নেতা।

এহসানুল মাহবুব যোবায়ের বলেন, ইতোমধ্যে ২ জন হিন্দু প্রার্থী নিশ্চিত করা হয়েছে। তাদের ১ জন হলেন খুলনা-১ আসনে কৃষ্ণ নন্দী, আরেকজন কিশোরগঞ্জ-৪ আসনে। তবে তার নাম বলেননি জামায়াতের এই নেতা। এছাড়াও সনাতন এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বী এবং উপজাতিদের মধ্য থেকে আরও ৪ থেকে ৫ জন প্রার্থী হতে পারেন।

সূত্র বলছে, ডাকসু কার্যনির্বাহী সদস্য সর্বমিত্র চাকমার নামও আলোচনায় আছে রাঙামাটি আসন নিয়ে। তবে তার বয়স কম হওয়ায় নাও দেওয়া হতে পারে। রাঙামাটি থেকে ডাকসু জিএস এসএম ফরহাদকে দেওয়া হতে পারে। সেক্ষেত্রে বান্দরবন থেকে একজন উপজাতি প্রার্থী খোঁজা হচ্ছে বলে জানা গেছে। ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েমকে খাগড়াছড়ি অথবা ঢাকার কোনো আসন থেকে মনোনয়ন দিতে পারে জামায়াত। এছাড়া চাকসু, রাকসু, জাকসুতে বিজয়ীদের কয়েকজনকে মাঠ জরিপের ভিত্তিতে প্রার্থী করা হতে পারে।

এরই মধ্যে জামায়াতের প্রার্থী বদল শুরু হয়েছে। নির্বাসিত প্রবাসী সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমানকে হবিগঞ্জ-৪ আসনে একদিন আগেই মনোনয়ন নিশ্চিত করা হয়েছে, যেখানে দলের জেলা আমির স্বয়ং ছিলেন প্রার্থী। কুড়িগ্রামে পরিবর্তন করা হয়েছে। এছাড়াও থাকবেন কয়েকজন নারী প্রার্থী এবং জুলাই যোদ্ধা। আরও পরিবর্তন চলমান বলে জানিয়েছে নির্ভরযোগ্য সূত্র। শরিক দল এবং অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন মিলিয়ে বর্তমান প্রার্থীদের মধ্য থেকে কমপক্ষে ৮০ এবং সর্বোচ্চ ১০০ আসনে পূর্বঘোষিত প্রার্থীরা বাদ পড়ছেন, এটা নিশ্চিত বলে জানায় নির্ভরযোগ্য সূত্র।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম