Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

আসন সমঝোতায় আটকে আছে ৮ দলের ভবিষ্যৎ

Icon

শহীদুল ইসলাম

প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আসন সমঝোতায় আটকে আছে ৮ দলের ভবিষ্যৎ

৫ দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় নির্বাচনি সমঝোতার দিকে এগোচ্ছে ৮ দল। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ ‘ইসলামি দলগুলোর সব ভোট এক বাক্সে’ আনার টার্গেটে কাজ করছেন তারা। তারই অংশ হিসাবে সব আসনে একক প্রার্থী ঠিক করতে কাজ করছে সমমনা ৮টি ইসলামি দল। তবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে একসঙ্গে সরকার গঠন করারও লক্ষ্য রয়েছে তাদের। এই জোটের ভবিষ্যৎ এখন আসন সমঝোতায়ই আটকে আছে। জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব যোবায়ের এ প্রসঙ্গে যুগান্তরকে বলেন, আমরা আসন সমঝোতার মধ্যেই আছি। আমরা ৮ দল জোট করিনি। তবে আট দলের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল এমনটি দাবি করে তিনি বলেন, আসন সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচনে রাজি হয়ে আমাদের সঙ্গে আরও কয়েকটি দল যোগ দিতে যাচ্ছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ও তার ফ্যাসিস্ট সরকারের বিদায়ের পর থেকেই জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান ইসলামি দলগুলোকে এক কাতারে নিয়ে আসার উদ্যোগ নেন। সেজন্য সর্বোচ্চ ছাড়ের মানসিকতার কথাও বলেন তিনি। তারই উদ্যোগে গত ১৬ মাসে দলগুলোর সঙ্গে অনেক বৈঠক ও আলাপ-আলোচনা হয়েছে। তবে সব দল না এলেও জাতীয় রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবস্থানে আছে এমন ৮টি ইসলামি দলের মধ্যে একটি সমঝোতার অবস্থান তৈরি হয়েছে। দলগুলো হচ্ছে-বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি।

অতিমাত্রায় জামায়াতবিরোধী হিসাবে পরিচিত কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক কিছু দল এখনো ৮ দলের সঙ্গে যুক্ত হয়নি। তারা জামায়াতকে ‘মওদুদীবাদী’ বলে অভিযোগ করেন। অবশ্য ধর্মভিত্তিক কিছু কর্মসূচি ছাড়া ওই দলগুলোর রাজনৈতিক তৎপরতা কম। তারপরও তাদের এক কাতারে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে, যাতে করে ইসলামপন্থিদের সব ভোট এক বাক্সে পড়ে। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার যুগান্তরকে বলেন, আসন সমঝোতার ভিত্তিকে সমমনা ইসলামি দল একসঙ্গে নির্বাচন করতে চায় এমন দলের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে পারে। তার মতে, এই সংখ্যা ৮ থেকে ১০ বা ১১তে উন্নীত হতে পারে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের দপ্তর সম্পাদক মাওলানা লোকমান হোসেন জাফরীও জোটে দল বাড়ার সম্ভাবনার বিষয়টি যুগান্তরকে নিশ্চিত করেন।

জাতীয় নির্বাচনের আগে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোট, সংসদের উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন, জুলাই বিপ্লবে গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের বিচার দৃশ্যমান করা, নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা বা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করাসহ ৫ দফা দাবিতে ৮ দল যুগপৎভাবে আন্দোলন করছে। দলগুলোর অংশগ্রহণে বর্তমানে চলছে বিভাগীয় সমাবেশ। এই কর্মসূচি শেষ হলে ৮ দলের লিয়াজোঁ কমিটি আলোচনা করে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রণয়ন করবে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে। এ নিয়ে একদিকে যেমন আলোচনা চলছে, তেমনি প্রত্যেক দল মাঠপর্যায়ে নিজেদের প্রার্থীর অবস্থান জরিপ করছে। জামায়াতে ইসলামীসহ ৮ দলের নেতারা সবাই একমত পোষণ করেছেন যে, যাকে যেখানে দিলে বিজয়ী হতে পারবেন তাকে সেখানে প্রার্থী করা হবে। ইসলামপন্থি দলগুলোকে রাষ্ট্রক্ষমতায় নিয়ে আসাই এই জোটের লক্ষ্য।

জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন ও খেলাফত আন্দোলনসহ ৮ দলের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, কোন দল কত আসনে নির্বাচনে আগ্রহী বা বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা সেটা মাঠ জরিপের রিপোর্টের ভিত্তিতে তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। তবে কোন দলকে কত আসনে ছাড় দেওয়া হবে তা নিয়ে কিছুটা জটিলতা রয়েছে। নেতারা বলছেন, ইসলামের বৃহত্তর স্বার্থে সব দলেই সর্বোচ্চ ছাড়ের মানসিকতা থাকতে হবে। তারা জানান, ইসলামি দলগুলো সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক আসনে বিজয়ী হয়ে আসুক এটাই জোটের টার্গেট। জানা গেছে, ৮ দলের শীর্ষ নেতাদের পাশ করিয়ে আনার বিষয়টিকেও প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। সেক্ষেত্রে কিছুটা জটিলতারও আভাস দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। দলটির দপ্তর সম্পাদক মাওলানা লোকমান হোসেন জাফরী যুগান্তরকে বলেন, আমরা এবং জামায়াতে ইসলামী বড় দল। আমাদের এই দুই দলের রাজনৈতিক অবস্থান সমান সমান। তবে জামায়াত যেহেতু আগে পার্লামেন্টে ছিল; সেক্ষেত্রে তারা একটু বেশি পেতে পারে। আমরা ১২০, জামায়াত ১৩০ এবং বাকি ৫০টি আসনে অন্য ৬টি দলের প্রার্থী দেওয়া যেতে পারে। খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী যুগান্তরকে বলেন, আমরা ২০টি আসন চাইব। এই দলের আরেকটি অংশ ৫টি আসনে প্রার্থী দিতে চান বলে জানান ওই অংশের যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ হোসেন আকন্দ। তবে আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান যে সিদ্ধান্ত দেবেন তা মেনে নেবেন বলে যুগান্তরকে জানান তারা।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব যোবায়ের শুক্রবার যুগান্তরকে বলেন, ৮ দলের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। আমরা কোনো জোট গঠন করিনি। জামায়াত যেমন বলছে না, তেমনি আমরা যাদের সঙ্গে নিয়ে একসঙ্গে আন্দোলন এবং আসন সমঝোতা করছি তারাও কেউ জোটের কথা বলছেন না। সংখ্যার ভিত্তিতে শরিকদের সঙ্গে কোনো আসন ভাগাভাগি হবে না। জামায়াতে ইসলামীসহ ৮ দলের নেতারা সবাই একমত পোষণ করেছেন যে, যাকে যেখানে দিলে বিজয়ী হতে পারবেন তাকে সেখানে প্রার্থী করা হবে। আমাদের এই আসন সমঝোতার নীতির সঙ্গে একমত হয়ে আরও কয়েকটি ইসলামি দল আমাদের সঙ্গে আসবে।

তবে ওইসব দলের নাম বলেননি জামায়াত নেতা এহসানুল যোবায়ের। নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে কী করবেন-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরের কথা পরে। আসন সমঝোতার ভিত্তিতে ইসলামপন্থিদের সব ভোট এক বাক্সে নিয়ে আসাটা আপাতত প্রধান লক্ষ্য। পরেরটা পরে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সেটা নিয়ে কোনো জটিলতা হবে না বলে আমরা আশাবাদী।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম