Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

আলোচনা সভায় তারেক রহমান

ধানের শীষ বিজয়ী হলে দেশ রক্ষা পাবে

দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে মেগা প্রজেক্ট নয়-অর্থ খরচ করব শিক্ষা-স্বাস্থ্য ও মানবসম্পদ উন্নয়নে

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ধানের শীষ বিজয়ী হলে দেশ রক্ষা পাবে

বিএনপির আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি বক্তৃতা করছেন তারেক রহমান -যুগান্তর

জাতীয় নির্বাচনে ধানের শীষ বিজয়ী হলে দেশ রক্ষা পাবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, ধানের শীষকে জেতাতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। ধানের শীষকে জেতানোর মাধ্যমে জনগণের যে পরিকল্পনা, তা বাস্তবায়ন করতে হবে। ধানের শীষকে জেতানোর মাধ্যমে দেশকে রক্ষা করতে হবে। প্রথম বাংলাদেশ, আমার শেষ বাংলাদেশ এবং সবার আগে বাংলাদেশ। নো কম্প্রোমাইজ।

বুধবার বিকালে রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক আলোচনায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দলের নেতাকর্মীদের প্রতি এই আহ্বান জানান। এতে যুবদল ও কৃষক দলের নেতারা অংশ নেন।

তারেক রহমান বলেন, ‘বিএনপি যে স্ট্রেটকাট প্ল্যান উপস্থাপন করল, দেখান তো আর কোনো রাজনৈতিক দল এরকম প্ল্যানিং দিয়েছে। হ্যাঁ, কোনো রাজনৈতিক দল এ রকম প্ল্যান দিতে পারেনি। দেশের মানুষকে কোনো পরিকল্পনা দিতে পারেনি যে, দেশকে আমরা কিভাবে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাব। কাজেই এখন বসে থাকার সময় নেই। আপনাকে যুদ্ধে নেমে পড়তে হবে। যুদ্ধ কি? মানুষের পক্ষে, দেশের পক্ষে। এই যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে আমাদের।’ তিনি বলেন, ‘দেশ গড়তে শুধু পরিকল্পনার মধ্যে রাখলে হবে না। বাংলাদেশে বহু পরিকল্পনা হয়েছে যা পরিকল্পনাতেই রয়ে গেছে। আমরা আমাদের পরিকল্পনাকে বাস্তবায়ন করতে চাই। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে যেমন আন্দোলন করেছি, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা এই প্ল্যানিং বাস্তবায়ন করতে চাই। আমরা এই কাজটা শুরু করব, পরবর্তী জেনারেশন সেটা কনটিনিউ করবে। এটার শেষ নেই।’

দলের পরিকল্পনা ঘরে ঘরে গিয়ে জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে হবে-এমন নির্দেশনা দিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, জনগণকে কনভিন্স করতে হবে, বোঝাতে হবে। এই কঠিন কাজটি করার কোনো বিকল্প নেই। অন্যথায় এই দেশ এবং জাতি ধ্বংস হয়ে যাবে। আমাদের সজাগ হতে হবে।

তিনি বলেন, দেশকে প্রত্যেকবার বিএনপি রক্ষা করেছে। ইতিহাস ঘাঁটুন। তাহলে দেখবেন প্রত্যেকবার রক্ষা করছেন শহীদ জিয়াউর রহমান এবং খালেদা জিয়া। তিনি আরও বলেন, এখন শহীদ জিয়া এবং খালেদা জিয়ার দায়িত্ব আপনাদের (নেতাকর্মীদের) কাঁধে এসে পড়েছে। এই দেশকে আপনাদের রক্ষা করতে হবে। প্রত্যেককে উঠে দাঁড়াতে হবে। ঘর থেকে বেরিয়ে মানুষের কাছে যেতে হবে, দোরগড়ায় যেতে হবে। তাহলেই আমাদের পক্ষে সম্ভব। আসুন এই যুদ্ধ আমরা শুরু করি।

ফ্যামিলি কার্ড, স্বাস্থ্য কার্ড, ফার্মার্স কার্ড, পরিবেশ রক্ষা, বেকার সমস্যার সমাধান, শিক্ষার উন্নয়ন প্রভৃতি বিষয়ে দলের অগ্রাধিকার পরিকল্পনাগুলো কিভাবে বাস্তবায়ন করা হবে তার রূপরেখা যুবদল ও কৃষক দলের নেতাদের সামনে তুলে ধরেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। নারী, কৃষি ও শিক্ষা পরিকল্পনা নিয়ে তারেক রহমান বলেন, নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে ‘ফ্যামিলি কার্ড’ চালু করা হবে। পর্যায়ক্রমে সারা দেশের নারী সমাজকে স্বাবলম্বী করতে চাই। এতে শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত তৈরি হবে। কৃষিপণ্যে রপ্তানি বাড়ানোর দিকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা জানান তিনি।

শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন প্রসঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, শিক্ষার্থীরা যেন ইংরেজির পাশাপাশি তৃতীয় একটি ভাষায়ও দক্ষ হতে পারে-এমন শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই।

তিনি বলেন, বিএনপির অন্যতম লক্ষ্য হলো কোনো মেগা প্রকল্পে যাবে না। মেগা প্রকল্প মানেই মেগা দুর্নীতি। দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে হবে। রাষ্ট্রের অর্থ জনগণের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মানবাধিকার উন্নয়নের পেছনে খরচ করা হবে। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ১০ লাখ স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেওয়া হবে। যাদের মধ্যে ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশই হবে নারী।

জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে এখনই কাজ শুরু করতে পারলে আগামী ১০ বছর পর দেশ সুফল পাবে বলেও উল্লেখ করেন তারেক রহমান। খেলাধুলা ও নগর পরিকল্পনা নিয়ে তারেক রহমান বলেন, শিক্ষা-স্বাস্থ্য-ক্রীড়া-এই তিন মন্ত্রণালয় সারা বছর একসঙ্গে কাজ করবে। দম বন্ধ করা শহরে খেলার মাঠ নেই। প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে বাজার দরে জায়গা কিনে আমরা খেলার মাঠ তৈরি করে দেব।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর সভাপতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন দলের যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. জিয়াউদ্দিন হায়দার, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক, কৃষক দলের সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন, যুবদল সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী প্রমুখ।

মানবাধিকার দিবসে ফেসবুক স্ট্যাটাস : বিশ্ব মানবাধিকার দিবসে আওয়ামী লীগ আমলের গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যার প্রসঙ্গ তুলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বিএনপি আজ প্রতিশোধের রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করছে, আমরা সমাধানের পথে বিশ্বাসী। আমরা এই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, কোনো বাংলাদেশিকে রাষ্ট্রের ভয়ে বাঁচতে হবে না, তা সে সরকারের সমর্থক হোক বা বিরোধী। বুধবার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে তারেক রহমান এসব কথা বলেন।

তারেক রহমান বলেন, ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশ একটা কালো মেঘের নিচে চাপা পড়ে ছিল। কেউ সেই অন্ধকারকে খুব তীব্রভাবে টের পেয়েছে, কেউ চুপচাপ বয়ে বেড়িয়েছে। কিন্তু যাদের রাজনৈতিক অবস্থান তখনকার পতিত সরকারের বিপরীতে ছিল, তাদের জন্য এই অন্ধকার ছিল নিত্যদিনের বাস্তবতা। তিনি বলেন, রাতের বেলা দরজায় কড়া নাড়া, মিথ্যা মামলা, নির্যাতন, ভয়কে সংস্কৃতি বানিয়ে ফেলা, আর অসংখ্য পরিবার অপেক্ষা করেছে সেই প্রিয়জনদের জন্য, যারা আর কোনোদিন ঘরে ফিরে আসেনি।

তিনি আরও বলেন, এই বোঝা বিএনপির চেয়ে বেশি আর কেউ বহন করেনি। বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, হেফাজতে মৃত্যু, মিথ্যা মামলা-সব জায়গায় বিএনপির নেতাকর্মীরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানেও সবচেয়ে বেশি রক্ত ঝরেছে বিএনপির ঘরেই। কিন্তু অত্যাচারের শিকার শুধু বিএনপি ছিল না; ছাত্র, সাংবাদিক, লেখক, পথচারী, সাধারণ মানুষ-সবাই সেই ভয়ংকর পরিবেশের ক্ষত বয়ে বেড়িয়েছে। ন্যূনতম মানবাধিকার হিসাবে বিবেচিত মর্যাদা, নিরাপত্তা, মতপ্রকাশের অধিকারের মতো মৌলিক সব বিষয়গুলো ছিল হুমকির মুখে।

তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবেও সেই দুঃসহ সময়ের সাক্ষী। আমার মা, যিনি দেশনেত্রী, নিজে সহ্য করেছেন তার ছেলেকে জেলে নেওয়া, নির্যাতন করার মানসিক যন্ত্রণা। তার আরেক ছেলেকে আমরা চিরতরে হারিয়েছি। বাংলাদেশের হাজারো পরিবারের মতো আমাদের পরিবারও ছিল লক্ষ্যবস্তু। কিন্তু ইতিহাসের একটা সত্য আছে-কষ্ট মানুষকে সব সময় তিক্ত করে না। কখনো কখনো কষ্ট মানুষকে আরও মহান করে তোলে। দেশনেত্রী, আমার মা-এটাই প্রমাণ করেছেন। তিনি শিখিয়েছেন-যে অন্যায় আমরা সহ্য করেছি, তা যেন আর কারও জীবনে না আসে। দেশকে বদলাতে হলে, ঘৃণার পথ নয়-ন্যায়, নৈতিকতা আর ক্ষমার পথই ভবিষ্যৎ গড়ে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম